হারেস কিছু না বলে সেখান থেকে নিজের রুমে চলে গেল।
স্বামীর কাছে ধরা পড়ে ফায়জুন্নেসা খুব চিন্তায় পড়ে গেল। ভাবল, হারেস যদি মাকে কথাটা জানায়, তা হলে মা তাকে ছেড়ে কথা বলবে না। তাই একদিন আজিজের কাছে পরামর্শ চাইল।
আজিজ এই সুযোগের অপেক্ষায় ছিল, বলল, তুমি কোনো দুশ্চিন্তা করো না, যা করার আমি করব।
তুমি কি ওকে দুনিয়া থেকে সরিয়ে দিতে চাও?
তুমি বললে তা করতে পারি।
না-না, তা করো না। বরং এমন কিছু কর, সাপও না মরে, লাঠিও না ভাঙ্গে।
ঠিক আছে, কি করব না করব চিন্তা ভাবনা করে তোমাকে জানাব।
কয়েকদিন পরে হারেসের লাশ ঐ একই জলমহলে পাওয়া গেল।
সবাই ভাবল, এটা জিনেদেরই কাজ। তাই কেউ উচ্চ বাচ্য করল না। এমন কি লুৎফা বেগম ও ফায়জুন্নেসাও তাই ভাবলেন।
হারেস মারা যাওয়ার পাঁচ ছমাস পরে ফায়জুন্নেসা আজিজকে ডেকে পাঠিয়ে বলল, তোমাকে আর কিছু করতে হল না।
আজিজ মৃদু হেসে বলল, হ্যাঁ, আমি কিছু করার আগেই জিনেরা করে ফেলল।
তুমি জিনেদের ভয় কর না।
কেন, ভয় করব কেন?
যদি তাদের আক্রোশ তোমার উপর পড়ে?
আমার কাছে এমন জিনিস আছে, জিনেরা আমার ধারে কাছে আসতে সাহস পাবে না। আমার জন্য তুমি কোনো চিন্তা করো না।
তারপর থেকে তাদের গোপন প্রেমলীলা চলতে লাগল। আজিজ প্রেমের ফাদে ফেলে স্টেটের ম্যানেজার করাতে বাধ্য করাল ফায়জুন্নেসাকে।
জামাই মারা যাওয়ার পর চাকরানিদের মুখে আজিজের সঙ্গে মেয়ের সম্পর্কের কথা শুনে লুৎফা বেগম একদিন রাগারাগি করে বলেছিলেন, তুই যে পথে চলছিস, তা শয়তানের পথ। তুই কি আল্লাহকে মানিস না? তাঁকে ভয়ও করিস না? যদি তাই হয়, তা হলে অতি অল্পদিনের মধ্যে তার ফল পাবি। কথায় আছে, আল্লাহর মার দুনিয়ার বার। তিনি ন্যায় বিচারক, তিনি যেমন অত্যন্ত দয়াশীল তেমনি কঠোর আযাবদাতা। তুই যে অন্যায় করেছিস, তার ফল তোকে ভোগ করতেই হবে। তোকে দিয়েই আল্লাহ এই বংশের প্রদীপ জ্বালিয়ে রেখেছেন এবং ভবিষ্যতে সেই প্রদীপ জ্বালিয়ে রাখার জন্য তোকে একটা মেয়েও দিয়েছেন। সেই মেয়ের কথাও চিন্তা করবি না?
মায়ের কথা শুনে ফায়েজুন্নেসা চুপ করে থাকলেও স্বভাবের কোনো পরিবর্তন হল না। কিছুদিন পর আজিজকে স্টেটের ম্যানেজার নিযুক্ত করে।
লুৎফা বেগম চাকরানিদের মুখে সেকথা জানতে পেরে মেয়েকে আরেক দফা বকাবকি ও সাবধান করে নসিহত করেন। কিন্তু ফায়জুন্নেসা মায়ের কথায় কর্ণপাত করে নি।
আজিজ সাধারণ ঘরের ছেলে বলে ইনসান চৌধুরী তার ভালবাসার মূল্য দেন নি। তাই ওনার উপর প্রচণ্ড রাগ ছিল আজিজের। বিয়ের পরেও যখন ফায়জুন্নেসা চিঠি দিয়ে জানাল, তাকে আজীবন ভালবাসবে এবং কিভাবে তাদের গোপন অভিসার চলবে তখন আজিজ চৌধুরী ফায়জুন্নেসার সঙ্গে যোগাযোগ সে চলল। তারপর ইনসান চৌধুরী মারা যাওয়ার পর হারেসকে মেরে ফেলার পরামর্শ দিলে ফায়জুন্নেসা রাজি হয় নি। হারেস মারা যাওয়ার পর ম্যানেজারী করার সময় একদিন ফায়জুন্নেসাকে বিয়ের প্রস্তাব দিল।
ফায়জুন্নেসা বললেন, এত ব্যস্ত হচ্ছ কেন? তোমাকে ম্যানেজার করেছি বলে মাক খুব অসন্তুষ্ট হয়ে আমার সাথে ভীষণ রাগারাগি করেছে। একদিন না একদিন মায়ের রাগ ঠান্ডা হবে। তখন করা যাবে। চিন্তা করো না, আমি তো চিরকাল তোমারই থাকব।
ফায়জুন্নেসার চেয়ে তার বাবার সম্পত্তির উপর আজিজের লোভ বেশি। তাই তার কথা মেনে নেয়।
কয়েক বছর ম্যানেজারী করে আজিজ নিজের আখের গুছিয়ে নিল। তাতেও তার মন ভরল না। সে জানে ফায়জুন্নেসাকে বিয়ে করতে পারলে চৌধুরী স্টেট তার হাতের মুঠোয় চলে আসবে। চৌধুরী বংশের একমাত্র প্রদীপ স্বপ্নাকে কৌশলে দুনিয়া থেকে সরিয়ে দিতে পারলে পুরো স্টেটের মালিক হয়ে যাবে। ইদানিং যেন ফায়জুন্নেসা আগের মতো তার সঙ্গে অভিসার করছে না। শরীর খারাপের কথা বলে এড়িয়ে যাচ্ছে। ভাবল, তার প্রতি ভালবাসার টান কমে যাচ্ছে। এইসব চিন্তা করে একদিন ফায়জুন্নেসার কাছে বিয়ের কথা তুলে বলল, আর কতদিন অপেক্ষা করতে হবে বলতে পার?
ফায়জুন্নেসা বললেন, মাকে কথাটা বলেছিলাম, শুনে বলল, তোর বাবা যাকে জামাই করল না, তাকে আমি কিছুতেই জামাই করতে পারব না। আর তুই যদি আমার কথা না মানিস, তা হলে যে দিন শুনব তাকে বিয়ে করেছিস, সেদিন। আমার মরা মুখ দেখবি। এখন তুমিই বল, আমি কি করব?
আজিজ বলল, মা যখন আত্মহত্যার কথা বলেছেন তখন আমরাই তাকে পরপারে পাঠিয়ে দিতে পারি।
এখন ফায়জুন্নেসার যৌবন ভাটার দিকে। তা ছাড়া এতদিনে ফায়জুন্নেসা জানতে পেরেছে, আজিজ স্টেটের তহবীল তসরুফ করে আর্থিক অবস্থা ফিরিয়ে ফেলেছে। আরও বুঝতে পেরেছে, বাবা তার সঙ্গে বিয়ে দেয় নি বলে প্রেমের অভিনয় করে সেই অপমানের প্রতিশোধ নিচ্ছে। মেয়ে স্বপ্নার কথা চিন্তা করেও আজিজের প্রতি তার ভালবাসার টান কমতে শুরু করেছে। মাঝে মাঝে মায়ের নসিহতও মনে পড়ে, তুই যে অন্যায়ের পথে চলেছিস, অচিরেই আল্লাহ তার প্রতিফল তোকে দেবেন। তাই আজিজের সঙ্গে অভিসার কমিয়ে দিয়েছে। এখন তার মুখে মাকে পরপারে পাঠাবার কথা শুনে মনে মনে চমকে উঠে চিন্তা করল, তা হলে কি আজিজ হারিসকে মেরে জল মহলে ফেলে দিয়েছে?