স্বপ্না নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারল না, কয়েক সেকেন্ড স্ট্যাচুর মতো দাঁড়িয়ে থেকে বলল, আপনি মানুষ, না ফেরেশতা বলে তাকে জড়িয়ে ধরতে গেল।
ফায়সাল দ্রুত তার দুটো হাত ধরে ফেলে বলল, একি করতে যাচ্ছিলেন? জানেন না, বিয়ের আগে এটা হারাম? তারপর হাত ছেড়ে দিল।
ততক্ষণে আনন্দে স্বপ্নার চোখ থেকে পানি পড়তে শুরু করেছে। ভিজে গলায় বলল, আমি সেই প্রথম থেকে ভুল বুঝে আপনার সঙ্গে অনেক দুর্ব্যবহার করেছি, ধর্মীয় জ্ঞানের অভাবে আজ আবার হারাম কাজ করতে যাচ্ছিলাম। আমার সমস্ত আপরাধ ক্ষমা করে দিন বলে তার পায়ে হাত রাখল।
ফায়সাল তাকে দাঁড় করিয়ে পকেট থেকে রুমাল বার করে তার চোখ মুখ মোছার সময় বলল, মানুষ মাত্রই জেনে না জেনে অনেক ছোট বড় অন্যায় করে ফেলে। সে জন্য প্রত্যেকের তওবা করে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইতে হয়। আপনার সব রকমের অন্যায় আগে যেমন ক্ষমা করেছি, ভবিষ্যতেও তেমনি করব। এবার বলুন, এত বড়, সুখবর দেয়ার জন্য কি বখশীস দেবেন?
ফায়সাল স্বপ্নার রুমে ঢোকার পর লুৎফা বেগম মেয়ে ফায়জুন্নেসাকে ম্যানেজারের স্বপ্নাকে দেখতে আসার কথা বলে ডেকে নিয়ে এসে পর্দার আড়াল থেকে তাদের কথোপকথন শুনছিলেন। ফায়সাল বখশীস দেয়ার কথা বলতে লুৎফা বেগম রুমে ঢুকে বললেন, ওর তো নিজের কিছু নেই, যা ছিল সবটুকু অনেক আগেই তোমার মধ্যে বিলীন করে দিয়েছে? বখশীস আমরা দেব বলে মেয়েকে ভিতরে আসতে বললেন।
ফায়জুন্নেসা ভিতরে আসার পর তাকে বললেন, তোর হবু জামাই স্বপ্নার কাছে বখশীস চাচ্ছে। ওর কি আছে দেবে? তুই কি দিবি দে।
থেকে ম্যানেজারের কথা শুনে ফায়জুন্নেসা এত আনন্দিত হয়েছেন যে, তখন থেকে চোখের পানি ফেলছিলেন। মা ডাকতে চোখ মুছে রুমে এসেছেন। এখন বখশীস দেয়ার কথা শুনে আবার চোখ থেকে পানি বেরিয়ে পড়ল। সেই অবস্থায় বললেন, আমাদের যা কিছু আছে সব পূর্বপুরুষদের অবৈধ টাকায়। তোমার মতো পবিত্র ছেলেকে ঐ অবৈধ থেকে কিছু দেয়া ঠিক হবে না। তাই শুধু আল্লাহর কাছে দোয়া করছি, তিনি যেন তোমাদের দাম্পত্যজীবন সুখের ও শান্তির করেন এবং পরকালের জীবনে বেহেশত নসীব করেন। তারপর বললেন, আমি আল্লাহর এক নিকৃষ্ট বান্দি। জানি না, আল্লাহ আমার দোয়া কবুল করবেন কি না। তারপর সেখান থেকে চোখ মুছতে মুছতে চলে। যেতে উদ্যত হলে ফায়সাল বলল, দাঁড়ান মা, যাবেন না।
ফায়সালের মা ডাক শুনে ফায়জুন্নেসা চমকে উঠে থমকে দাঁড়িয়ে বললেন, তোমার মতো ছেলের মা হওয়ার যোগ্যতা আমার নেই।
ফায়সাল বলল, মায়ের যোগ্যতার বিচার করার অধিকার কোনো সন্তানের নেই। তারপর এগিয়ে এসে কদমবুসি করে বলল, সন্তানের কাছে মায়ের দোয়া হল, শ্রেষ্ঠ উপহার, সমস্ত পৃথিবীর রাজত্বের চেয়ে মূল্যবান এবং ইহকাল ও পরকালের সুখ শান্তি। তারপর লুৎফা বেগমকে কদমবুসি করে বলল, ঠিক বলি নি নানি মা?
লুৎফা বেগমও আনন্দে এতক্ষণ ধৈর্য ধরতে পারলেও এখন আর পারলেন, চোখের পানি ছেড়ে দিয়ে বললেন, তোমার মতো আল্লাহর প্রিয় বান্দা কখনও বেঠিক কিছু বলতে পারে না।
ফায়সাল কিছু বলতে যাচ্ছিল, তার আগেই ফায়জুন্নেসা বললেন, কিন্তু আমি আল্লাহর একজন নিকৃষ্ট বান্দি, আমার দোয়া কি আল্লাহ কবুল করবেন?
ফায়সাল বলল, যাই কিছু হন না কেন, আপনি মা। আর সন্তানের জন্য মায়ের দোয়া কবুল হবেই। আপনি জানেন কি না জানি না, বান্দা যত বড় গুনাহ করুক না কেন, অনুতপ্ত হয়ে চোখের পানি ফেলে তওবা করে ক্ষমা চাইলে আল্লাহ ক্ষমা করে দেন। কারণ অনুতপ্ত বান্দার চোখের পানি আল্লাহর কাছে খুব প্রিয়।
লুৎফা বেগম বললেন, হ্যাঁ ভাই, তুমি ঠিক বলেছ, এটা হাদিসের কথা। কথা শেষ করে চোখ মুছতে মুছতে চলে গেলেন।
ফায়জুন্নেসাও চোখ মুছতে মুছতে মাকে অনুস্মরণ করলেন।
এবার আমার পালা বলে ফায়সাল স্বপ্নার দিকে তাকিয়ে তার চোখ থেকে পানি পড়ছে দেখে বলল, নানিমা ও মা কাঁদতে কাঁদতে চলে গেলেন, আপনিও কাঁদছেন, আমি আর বাকি থাকি কেন বলে কান্নার অভিনয় করল।
স্বপ্না কান্নামুখে হাসি ফুটিয়ে বলল, থাক, আর অভিনয় করতে হবে না, দু’বছর অভিনয় করে সবাইকে অনেক কাঁদিয়েছেন।
ফায়সাল বলল, তাই তো শেষ অভিনয় করে আপনাকে হাসালাম।
স্বপ্না চোখ মুখ মুছতে মুছতে বলল, সত্যি, একজন মানুষের মধ্যে যে এত গুণ থাকতে পারে, আপনাকে না দেখলে বিশ্বাস করতাম না।
ফায়সাল বলল, স্বপ্নে দেখা সেই মেয়েটি, যে নাকি অপূর্ব সুন্দরী ও ফরেন থেকে উচ্চডিগ্রিধারী হয়েও আমার মতো একজন সাধারণ ছেলের প্রেমে পড়বে ভাবতেই পারি নি।
এই কথাই দু’জনেই হেসে উঠল।