স্বপ্না বলল, আল্লাহ ও তার রসুল (দঃ) এর সন্তুষ্টির জন্য আমিও তাকে ক্ষমা করে দিলাম।
ফায়সাল আলহামদুলিল্লাহ বলে আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করে বলল, এরকমই আপনার কাছে আশা করেছিলাম। তারপর বিদায় নিয়ে সেখান থেকে বেরিয়ে এল।
পরের দিন ফায়সাল আজিজের বাড়িতে গিয়ে ক্ষমা পাওয়ার কথা জানাল।
আজিজ চোখের পানি ছেড়ে দিয়ে বললেন, মনে হচ্ছে বেশি দিন বাঁচব না। তাই দু’একদিনের মধ্যে চৌধুরীদের যা কিছু অসৎ পথে নিয়েছিলাম, সবকিছু মাদরাসায় ওয়াকফ করে দেব। আমার একটা নাতি আছে, আপনি দোয়া করবেন, আল্লাহ যেন তাকে হায়াতে তৈয়েবা দান করেন।
ফায়সাল বলল, দোয়া তো করবই, তা ছাড়া সে যাতে আলেম হয়, সে চেষ্টাও করব।
আজিজ বললেন, আল্লাহ আপনাকে খোকসাবাড়ির জন্য রহমত স্বরূপ পাঠিয়েছেন। আপনি কয়েকদিনের মধ্যে আসবেন। আরো কিছু কথা আপনাকে বলার আছে।
ফায়সাল বলল, ঠিক আছে, ইনশাআল্লাহ আসব। তারপর বিদায় নিয়ে ফায়সাল চলে এল।
কয়েকদিন পর ফায়সাল আবার যে দিন গেল তার পরের দিন আজিজ মারা গেল।
———-
(১) বর্ণনায় : হযরত আবু ওমাবাহ (রাঃ) – মেশকাত।
(২) বর্ণনায় : হযরত আবু কাবশাহ (রাঃ) – তিরমিযী।
৬. মাস তিনেকের মধ্যে মসজিদ তৈরি
মাস তিনেকের মধ্যে মসজিদ তৈরি সম্পূর্ণ হলেও মাদরাসা প্রতিষ্ঠা করে চালু করতে প্রায় এক বছর সময় লাগল। আজ মাদরাসা উদ্বোধন হবে। ধর্মমন্ত্রী উদ্বোধন করবেন। এই দু’ বছরের মধ্যে খোকসাবাড়ি ইউনিয়নের সমস্ত গ্রামে ফায়সালের সুনাম ছড়িয়ে পড়েছে। আবাল বৃদ্ধ তাকে শ্ৰেণীমতো ভক্তি শ্রদ্ধা করে, তাকে খোকসাবাড়ির আল্লাহর রহমত মনে করে। বিশেষ করে গরিবরা তাকে পীরের মতো মান্য করে। আর করবে নাই বা কেন? যে সব অসহায় পরিবারের আয়ের কোনো উৎস নেই, তাদের আয়ের উৎস করে দিয়েছে, অসহায় পরিবারের অনেক আইবুড়ী মেয়েদের বিয়ের ব্যবস্থা করেছে, বিভিন্ন গ্রামের রাস্তা ঘাটের সংস্কার করে দিয়েছে। গরিব ও অসহায় পরিবারের হেলেমেয়েদের শিক্ষার ব্যবস্থা করে দিয়েছে। সব থেকে বড় যে কাজ করেছে সেটা হল, চৌধুরীদের অত্যাচার থেকে সমস্ত গ্রামের মানুষকে রক্ষা করেছে। অবশ্য ফায়সালের সঙ্গে স্বপ্নারও সুনাম ছড়িয়েছে। কারণ ফায়সাল যা কিছু করেছে স্বপ্নাকে দিয়ে করিয়েছে, সে শুধু সঙ্গে থেকেছে আর লোকজনের কাছে। স্বপ্নার পরিচয় জানিয়েছে। তার ফলে চৌধুরী বংশের আগে যে দুর্নাম ছিল এখন আর তা নেই। বরং ক্রমশ সুনাম বেড়েই চলেছে।
তাই আজ মাদরাসা উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে হাজার হাজার মানুষ এসেছে। চৌধুরী স্টেটের সব লোক এসেছে। লুৎফা বেগম বোরখা পরে এলেও ফায়জুন্নেসা ও স্বপ্না গায়ে মাথায় চাদর দিয়ে এসেছেন।
নীলফামারী জেলার এম.পি, আসার পর ধর্মমন্ত্রী মাদরাসা উদ্বোধন করলেন। তারপর অনুষ্ঠানে ভাষণ দেয়ার সময় প্রথমে ফায়সালের ও চৌধুরী স্টেটের মালিকদের ভূয়সী প্রশংসা করলেন। তারপর যারা এই প্রতিষ্ঠানে জমি জায়গা ও টাকা পয়সা দিয়ে সাহায্য করেছে তাদের, বিশেষ করে আজিজের অনেক প্রশংসা করে বললেন, আশা করি, যারা এই মহৎ প্রতিষ্ঠান করেছেন এবং যারা সাহায্য করেছেন, তারা সবাই এটা যাতে ভালোভাবে পরিচালিত হয় সে ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। এই প্রতিষ্ঠান যাতে সরকারের অনুদান পায়, সে ব্যবস্থা ইনশাআল্লাহ আমি করব। এখানেই আমার বক্তব্য শেষ করছি। আল্লাহ হাফেজ তারপর সালাম জানিয়ে বসে পড়লেন।
এমন সময় একটা জীপ এসে মঞ্চের কাছে থামতে সেদিকে সবাই তাকাল। জীপ থেকে ডি.আই.জি, আই.জি ও খোকসাবাড়ি থানার ওসি নেমে মঞ্চে এসে ধর্ম মন্ত্রীর সঙ্গে সালাম ও মোফাসা করার পর উনি ওনাদের বসতে বললেন। আর ওনাদের সঙ্গে যে কয়েকজন পুলিশ এসেছে, তারা মন্ত্রীকে স্যালুট দিয়ে একপাশে দাঁড়াল।
ওসি সাহেব বসেন নি, পঁড়িয়ে ছিলেন। ওনারা বসার পর ওসি সাহেব মন্ত্রী মহোদয়ের অনুমতি নিয়ে জনগণকে উদ্দেশ্য করে বললেন, আপনারা চৌধুরী বংশের কিংবদন্তীর কথা অনেক শুনেছেন। তিন বছর আগে এখানকার থানার ওসি হয়ে আসার পর আমিও শুনেছি। কিন্তু বিশ্বাস করতে পারি নি। প্রায় দু’বছর থানার নথীপত্র দেখে ও আপনাদের অনেকের সঙ্গে আলাপ করে দৃঢ় ধারণা হয়, নিশ্চয় এর মধ্যে কোনো রহস্য আছে। রহস্য উদ্মাটনের জন্য প্রথমে ডি.আই.জি. কে সবকিছু জানিয়ে নতুন করে তদন্ত করার জন্য অনুরোধ করি। উনি ফাইল পত্র আই.জি. সাহেবের কাছে পাঠান। তিনি গোয়েন্দা বিভাগের একজনকে তদন্ত করার জন্য পাঠাবার ব্যবস্থা করেন। তারপর মঞ্চে দাঁড়ান ফায়সালের কাছে গিয়ে তার হাত ধরে তুলে বললেন, ইনিই তিনি, যিনি দু’বছর আগে চৌধুরী স্টেটের ম্যানেজার হয়ে কাজ করছেন। ইনি এই দু’বছর অক্লান্ত পরিশ্রম করে একদিকে যেমন চৌধুরী বংশের দুর্নাম ঘুচিয়ে সুনাম অর্জনের কাজ করছেন, তেমনি চৌধুরী বংশের ব্যাপারে যে কিংবদন্তী আছে, তার রহস্য উদঘাটন করেছেন। এখন আমরা ওনার মুখ থেকে রহস্য উদঘাটনের কাহিনী শুনব। মন্ত্রী মহোদয়, আই.জি. ও ডি.আই. জি. সাহেবের কাছে সবিনয় নিবেদন করছি, আপনারা জনাব ফায়সালকে সব কিছু বলার জন্য অনুমতি দিন।
ওনারা অনুমতি দেয়ার পর ফায়সাল বলল, ওসি সাহেবের পাঠান ফাইলপত্র পড়ে আমিও কিংবদন্তী কথাগুলো বিশ্বাস করি নি। এর মধ্যে পেপারে চৌধুরী স্টেটের ম্যানেজারের জন্য লোক চায় জেনে এখানে এসে চাকরিতে জয়েন করি। আসার পথে নীলফামারী স্টেশনে নেমে এক বৃদ্ধের সঙ্গে আলাপ করে চৌধুরী বংশের অনেক কিছু জানতে পারি। পরে সেই বৃদ্ধের অনেক খোঁজ করেও আর দেখা পাই নি। তারপর বাড়িতে যাওয়ার কথা বলে ছুটি নিয়ে প্রথমে চৌধুরী বংশের প্রথম পূর্ব পুরুষ জয়নুদ্দিনের আসল বাড়ি ডোমারে অনুসন্ধান চালিয়ে জানতে পারি, জয়নুদ্দিন দীঘিতে মাছ ধরতে গিয়ে জিনেদের একঘড়া সোনার মোহর পেয়ে লোক জানাজানির ভয়ে এখানে পালিয়ে এসে বাস করেছেন, কথাটা মিথ্যা। আসল কথা হল, উনি যখন দীঘিতে মাছ ধরতে যান। তার আগে ডাকাতরা ডাকাতি করে এসে টাকা ও সোনার গহনা ভাগাভাগি করছিল। পুলিশরা গোপন সূত্রে সেকথা জানতে পেরে তাদেরকে এ্যারেস্ট করতে আসেন। তখন তারা টাকা ও সোনার গহনা একটা পিতলের কলসে ভরে শক্ত কাদা দিয়ে মুখ বন্ধ করে দীঘির পানিতে ফেলে দেয়। পুলিশরা ততক্ষণে ঘেরাও করে সবাইকে এরেস্ট করে এবং তাদের সাত বছরের জেল হয়। জয়নুদ্দিনের জালে সেই পিতলের কলসি উঠে আসে। তবে একথা ঠিক, লোক জানাজানির ভয়ে জয়নুদ্দিন গোপনে এখানে এসে বসবাস শুরু করেন।