স্বপ্না মৃদু হেসে বলল, কথা দিচ্ছি, ওরকম ঘটনা আর কখনও ঘটবে না।
ফায়সাল বলল, অনেক দিন থেকে একটা মেয়ে স্বপ্নে আমার সঙ্গে অভিসার করে। সেদিন তাকে বাস্তবে দেখে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছিলাম। মনে হয়েছিল, রাস্তায় দাঁড়িয়ে স্বপ্না দেখছি না তো? কথা শেষ করে স্বপ্নার মুখের দিকে তাকাল কোনো রিএ্যাকসন হয় কিনা দেখার জন্য।
স্বপ্না স্থির দৃষ্টিতে তার দিকে কয়েক সেকেন্ড তাকিয়ে থেকে হাসি মুখে জিজ্ঞেস করল, আর আমার আজ সেদিনের ব্যতিক্রম হল কেন বলবেন না?
ফায়সালও স্থির দৃষ্টিতে তার দিকে কয়েক সেকেন্ড তাকিয়ে থেকে হাসিমুখে বলল, কথাটা সত্য বলেন নি। সেদিনের মতো আজও রেগে গিয়ে চড় মারতে ইচ্ছা হয়েছিল আপনার। কিন্তু তা কাজে পরিণত না করে রাগ চেপে রেখে মেকি প্রেমিকার ভূমিকায় অভিনয় করছেন আমার মুখোশ খোলার প্রমাণ জোগাড় করার জন্য।
ফায়সালের কথা শুনে স্বপ্না এত অবাক হল যে, অনেকক্ষণ কথা বলতে পারল না।
ফায়সাল বলল, আর কিছু বলবেন?
আপনার ধারণা ভুল। কারণ কারো মনের কথা অন্যে জানতে পারে না।
তা ঠিক, তবে আমি সত্য কথাই বলেছি। প্রমাণ করুন।
আপনার চোখ মুখ আমাকে জানিয়েছে। কারণ মানুষের মনের কথা চোখ মুখে ফুটে উঠে। আল্লাহ যাকে চোখ মুখের ভাষা বোঝার ক্ষমতা দিয়েছেন, তারা বুঝতে পারেন।
স্বপ্না বলল আচ্ছা, যে মেয়েটি স্বপ্নে অনেক দিন থেকে আপনার সঙ্গে অভিসার করছে, সেই মেয়ে যে আমি তার প্রমাণ কি? আমার মতো দেখতে অন্য কোনো মেয়েও তো হতে পারে?
হ্যাঁ, তা পারে। তবে আমি হাফ্রেড পার্সেন্ট সিওর সে মেয়ে আপনি।
প্রমাণ করতে পারবেন?
ইনশাআল্লাহ পারব।
করুণ তো দেখি?
ফায়সাল চোখ বন্ধ করে বলল, হোমে থাকার সময় আপনার বাম হাতের বাজুতে ফোড়া হয়েছিল। ডাক্তার অপারেশন করেছিলেন। অপারেশনের দাগ এখনও আছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় সন্ত্রাসীদের রিভলবারের গুলি আপনার ডান পায়ের গোছে বিদ্ধ হয়েছিল। ডাক্তার অপারেশন করে গুলি বার করেছিলেন। সেই দাগও এখনও আছে।
তার কথা শুনে স্বপ্না হতবাক হয়ে তার মুখের দিকে তাকিয়ে রইল। কারণ দু’টো ঘটনাই সত্য এবং আজও হাতে পায়ে অপারেশনের দাগ আছে।
ফায়সাল ঘটনা দু’টো বলার পরও চোখ খুলে নি। অনেকক্ষণ স্বপ্নাকে চুপ করে থাকতে দেখে চোখ খুলে দেখল, সে তার দিকে অবিশ্বাস্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। মৃদু হেসে বলল, কি এতেই হবে, না আরো প্রমাণ দিতে হবে?
তার কথা স্বপ্নার কানে গেল না। সে তখন ভাবছে, এসব কথা ম্যানেজার কি করে জানলেন?
ফায়সাল তার অবস্থা বুঝতে পেরে পেপার ওয়েট টেবিলে ঠুকে শব্দ করে সরিয়ে রাখল।
স্বপ্না চমকে উঠে বাস্তবে ফিরে এসে বলল, এসব কথা আপনি কেমন করে জানলেন?
স্বপ্নে যে মেয়েটি অভিসার করতে আসত, সেই বলেছে।
আপনি বারবার অভিসারের কথা বলছেন, তা হলে কি স্বপ্নের সেই মেয়েটিকে ভালবাসেন?
ভালবাসি মানে? এত ভালবাসি যা আপনি কল্পনাও করতে পারবেন না।
এখন সে আর স্বপ্নে অভিসার করতে আসে না?
এখানে চাকরি করতে আসার পর মাত্র একবার এসেছিল। সে সময় বলেছিল, এবার আর স্বপ্নে নয়, বাস্তবে অভিসার করবে।
আপনি কি মনে করনে স্বপ্না আর বাস্তব এক?
শুধু আমি কেন, কেউ তা মনে করে না।
তা হলে বললেন কেন, স্বপ্নের সেই মেয়েটি এবার বাস্তবে আপনার সঙ্গে অভিসার করবে?
কথাটা আমি বলি নি, বলেছিল স্বপ্নের মেয়েটি।
আপনার স্বপ্নের মেয়েটি যদি আমি হয়েও থাকি, তা হলে আপনার সঙ্গে অভিসার করছি না কেন?
এখন না করলেও কিছুদিনের মধ্যে করবেন।
আপনি ভীষণ চালাক ও বুদ্ধিমান হয়েও রাম ছাগলের মতো কথা বলতে পারলেন?
ফায়সাল হেসে ফেলে বলল, আমি তো জানি শুধু ছাগল নয়, কোনো পশু পাখি ও জীব-জন্তু মানুষের মতো কথা বলতে পারে না। রাম ছাগল কথা বলতে পারে জানা ছিল না।
স্বপ্নাও হেসে ফেলে বলল, বড় জাতের ছাগলকে রাম ছাগল বলে। লোকে বলে, ছাগলে কি না খায় আর পাগলে কি না বলে। তাই আপনার কথা শুনে কথাটা বলেছি।
রাম ছাগল না বলে পাগল বলা উচিত ছিল আপনার। তবে আমি যে পাগল নই, তা খুব ভালোভাবেই জানেন। তাই পাগল বললেও ভুল করতেন। তারপর ঘড়ি দেখে বলল, জোহরের নামাযের সময় হয়ে গেছে, এবার আসি বলে স্বপ্না কিছু বলার আগে ফায়সাল সেখান থেকে চলে গেল।
স্বপ্না প্রেমের অভিনয় করে ফায়সালের আসল স্বরূপ উদঘাটন করার পরিকল্পনা করেছিল; কিন্তু আজ তার সঙ্গে আলাপ করার পর বুঝতে পারল, এ পথে সফলতা লাভ করতে পারবে না।
প্রতিদিন তার কাছে ফাইলপত্র ও কাজ-কর্ম বুঝে নেয়া ছাড়া অন্য কোনো আলাপ যেমন স্বপ্না করে না, তেমনি ফায়সালও করে না। দিনে স্টেটের কাজ করে। অবসর সময় মা ও নানির সঙ্গে কাটালেও রাতে ফায়সালের কথা মনে পড়ে। অনেক রাত পর্যন্ত ঘুমাতে পারে না। তার স্বপ্নে দেখা মেয়েটির অভিসারের ব্যাপারটা তাকে খুব চিন্তায় ফেলে দিয়েছে। অনেক সময় তার মনে হয়, ফায়সাল তাকে ক্যাপচার করার জন্য ঘটনাটা বানিয়ে বলেছে। পরক্ষণে মনে পড়ে তা হলে তার দু’দুটো অপারেশানের কথা জানল কি করে?
স্টেটের সবকিছু স্বপ্নাকে বুঝিয়ে দেয়ার পর ফায়সাল অফিসে থাকে না বললেই চলে। মসজিদ-মাদরাসা প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে ব্যস্ত থাকে। অবশ্য স্বপ্নাকে নিয়ে মাঝে মাঝে গ্রাম থেকে গ্রামান্তরে সরজমিনে যায়। সে সময় স্বপ্নার পরিচয় গ্রামবাসীদের জানায়।