স্বপ্না মায়ের দিকে তাকিয়ে বলল, তুমি কিছু বলবে?
ফায়জুন্নেসা বললেন, না, তোর নানির সঙ্গে আমি একমত। তবে তোর নানি ম্যানেজারকে যতটা বিশ্বাস করে আমি ততটা করি না। কারণ আজিজকে বিশ্বাস করেছিলাম। ফলে আমাদের অনেক অর্থসম্পদ হারাতে হয়েছে। তাই আমি আর কাউকেই তেমন বিশ্বাস করি না। তবে ম্যানেজারকে কিছুটা করি। কারণ তিনি এমন কিছু কথা বলেছেন যা শুনে বিশ্বাস করতে হয়েছে। তাই মসজিদ ও মাদরাসা প্রতিষ্ঠা ও সেগুলো পরিচালনা করার জন্য জলমহলগুলো ওয়াকফ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
সেই কথাগুলো আমাকে বলা যাবে না?
না। যা বলছি শোন, যে কারণে তুই ম্যানেজারকে সন্দেহ করিস, সেই কারণে আমার মনেও সন্দেহ জাগায়। মসজিদ মাদরাসা চালু হওয়ার পর জলমহল ওয়াকফ করা হবে। তার আগে যদি তুই সন্দেহের কারণ প্রমাণ করতে পারিস, তা হলে ওয়াকফ করব না।
মা তার দলে জেনে স্বপ্না যেমন খুশি হল তেমনি সাহসও পেল। বলল, তুমি দেখে নিও, আমি ম্যানেজারের শঠতা প্রমাণ করবই করব।
৫. ফায়জুন্নেসা ফায়সালকে ডেকে পাঠিয়ে
একদিন ফায়জুন্নেসা ফায়সালকে ডেকে পাঠিয়ে বললেন, আপনি তো জানেন স্বপ্লাই চৌধুরী স্টেটের একমাত্র উত্তরাধিকারী। ও যাতে চৌধুরী বংশের মুখ উজ্জ্বল করতে পারে সেভাবেই ওকে সবকিছু বুঝিয়ে দেবেন। উচ্চশিক্ষা নিলেও স্টেট চালাবার মতো জ্ঞান ওর নেই। আর বয়সই বা কত হয়েছে। তা ছাড়া চৌধুরী বংশের রক্ত ওর শরীরে। ন্যায় অন্যায় কিছু করে ফেলাই স্বাভাবিক। সেজন্যে মনে কিছু না করে ওর ভুল-ত্রুটি দেখিয়ে দেবেন। আপনি খুব বুদ্ধিমান আশা করি……..
ওনাকে হাত তুলে থামিয়ে দিয়ে ফায়সাল বলল, আর কিছু বলার প্রয়োজন নেই। কথাগুলো আমিই আপনাকে বলব ভেবেছিলাম, কাজের চাপে সময় করতে পারি নি। আজই বলতাম, তার আগে আপনি বলে ফেললেন। যাই হোক, আপনি নিশ্চিত থাকুন, এ ব্যাপারে যা কিছু করার ইনশাআল্লাহ আমি করব। তারপর মসজিদ মাদরাসা কোথায় প্রতিষ্ঠা হবে সে ব্যাপারে আলাপ আলোচনা করে বিদায় নিয়ে ফায়সাল চলে এল।
ম্যানেজারের পাশের রুমে ইনসান চৌধুরী স্টেটের হিসাব পত্র চেক করতেন। উনি মারা যাওয়ার পর ওনার জামাই হারেস সেই কাজ করতেন। হারেস মারা যাওয়ার পর ফায়জুন্নেসা এতদিন করে এসেছেন। আজ থেকে স্বপ্না মায়ের কাজ করবে।
স্বপ্না এই রুমে আগে আসে নি। আজ এসে রুমের পরিবেশ দেখে খুশি হল। দরজা জানালায় ভারি পর্দা, মেঝেয় কার্পেট বিছান, গদীওয়ালা মুভিং চেয়ার, সেক্রেটারিয়েট টেবিলটা খুব সুন্দর। দুটো সেগুন কাঠের আলমারী। টেবিলের উপর একগ্লাস পানি ঢাকা রয়েছে দেখে পিপাসা অনুত্ব করে পানি খেয়ে গ্লাস রেখেছে, এমন সময় দরজার বাইরে থেকে ম্যানেজারের গলা শুনতে পেল, আসতে পারি?
স্বপ্না বলল, আসুন।
ফায়সাল অনেকগুলো ফাইল নিয়ে ঢুকে স্বপ্নার দিকে তাকিয়ে দৃষ্টি ফেরাতে পারল না। তার মনে হল, স্বপ্নে তাকে যে পোশাকে দেখে, আজ সেই পোশাক পরেছে। তখন তার একরাতের স্বপ্নের কথা মনে পড়ল, স্বপ্না তাকে একদিন জিজ্ঞেস করেছিল, আমি এলেই তুমি আমার দিকে হা করে তাকিয়ে থাক কেন?
ফায়সাল বলেছিল, আল্লাহ তোমাকে নিখুঁত সুন্দরী করে সৃষ্টি করেছেন, তার উপর এই পোশাকে তোমাকে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ সুন্দরী বলে মনে হয়। তাই তোমাকে দেখলেই আমি বাস্তব জ্ঞান হারিয়ে ফেলি।
এখন সেই পোশাকে স্বপ্নাকে দেখে ফায়সাল বাস্তব জ্ঞান হারিয়ে অপলক নয়নে তার দিকে তাকিয়ে রইল।
আগে হলে স্বপ্না খুব রেগে যেত; এখন রাগল না বরং মৃদু হেসে মোলায়েম স্বরে বলল, দাঁড়িয়ে আছেন কেন, বসুন।
ফায়সাল সম্বিত ফিরে পেয়ে ফাইলগুলো টেবিলের একপাশে রেখে বলল, আপনাকে সবকিছু বুঝিয়ে দিতে আপনার মা বলেছেন।
স্বপ্না বলল, সে কথা আমি জানি।
ফায়সাল বসে একটা ফাইল খুলে খোকসাবাড়ির ম্যাপ বের করে চৌধুরী স্টেটের কোথায় কি আছে দেখাতে লাগল। জমি-জায়গা, আগান-বাগান, পুকুর ডোবা ও জলমহল দেখাতে প্রায় দু’ঘণ্টা সময় লাগল। ম্যাপটা ফাইলে রেখে ফায়সাল বলল, ঐ সমস্ত জায়গায় আপনাকে সরজমিনে যেতে হবে। লোকজনদের সঙ্গে পরিচিত হতে হবে, তাদের সুবিধে অসুবিধের কথা জানতে হবে এবং অসুবিধা দূর করার ব্যবস্থা করতে হবে। তারপর অন্য একটা ফাইলের দিকে হাত বাড়াল।
স্বপ্না বলল, টায়ার্ড ফিল করছি, আজ আর নয়।
তা হলে থাক, কাল শুরু করা যাবে বলে ফায়সাল উঠে দাঁড়াল।
স্বপ্না বলল, বসুন একটা কথা জানতে খুব ইচ্ছা করছে।
ফায়সাল বসে বলল, বলুন।
সেদিন রাস্তায় যেভাবে আমার দিকে তাকিয়েছিলেন, আজও রুমে ঢুকে সেভাবে তাকিয়েছিলেন। সেদিন অভদ্র ভেবে রেগে গিয়ে আপনার গালে চড় মেরেছিলাম, কিন্তু আজ আপনার চোখের দৃষ্টি আমাকে রাগাতে পারে নি। বরং অন্য কিছু মনে হয়েছে। দুদিন দুরকম প্রতিক্রিয়া হল কেন বলতে পারেন?
পারি, তবে শোনার পর সেদিনের মতো আমার গালে চড় মারতে আপনার ইচ্ছা করবে।
সেদিনের ঘটনায় খুব অনুতপ্ত, প্লীজ ক্ষমা করে দিন।
না-না, ক্ষমা চাইছেন কেন? সে দিন উচিত কাজই করেছিলেন। আপনার প্রশ্নের উত্তর দিতে গেলে সেদিনের মতো অন্যায় কিছু হয়ে যাবে। তাই উত্তরটা বলতে চাচ্ছি না।