তাই যদি জানেন, তা হলে তার সঙ্গে কি রকম ব্যবহার করা উচিত নিশ্চয় জানেন?
জি, জানি।
তা হলে আমার সঙ্গে হেঁয়ালী করছেন কেন? আমার প্রশ্নের উত্তরও দিচ্ছেন কেন?
আমি হেঁয়ালী করি নি, তবে যে সব প্রশ্নের উত্তর দিই নি, সেগুলো আমার ব্যক্তিগত ব্যাপার। আর ব্যক্তিগত ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করা কারো উচিত নয়।
ব্যক্তিগত ব্যাপার যদি মালিকের সঙ্গে সম্পর্কিত হয় তখন মালিকের জানার অধিকার নিশ্চয় আছে?
তা আছে, তবে কেউ অপারগ হলে মালিকের জোর খাটিয়ে জানা ঠিক নয়। স্বপ্না গর্জে উঠল, একজন কর্মচারী হয়ে মালিককে জ্ঞান দান করছেন?
আপনি ক্রমশ রেগে উঠছেন। রাগ খুব খারাপ জিনিস। রাগের বশে মানুষ এমন কাজ করে ফেলে, সারাজীবনেও যার ক্ষতি পূরণ করা যায় না। তাই রাগকে আল্লাহ হজম করতে বলেছেন। নুন, আপনাকে জ্ঞান দেয়ার জন্য কিছু বলি নি। যা সত্য তাই বলেছি।
স্বপ্না আর ধৈর্য ধরতে পারল না, উঁচু গলায় বলল, মিত্যুক, ভণ্ড কোথাকার, এক্ষুনি আপনাকে বিদায় করে দিতে পারি জানেন?
জি, জানি। আরো জানি, আপনি তা করতে পারবেন না।
পারি কি না দেখবেন?
ফায়সাল হাসি মুখে বলল, আপনার মাও অনেকবার আমাকে বিদায় করতে চেয়েছেন; কিন্তু পারেন নি। কথাটা সত্য কিনা ওনাকে জিজ্ঞেস করলে জানতে পারবেন।
এই পনের দিনেই মায়ের মন মেজাজ স্বপ্না জেনে গেছে। তাই ফায়সালের মুখে মায়ের কথা শুনে চুপ করে গেল।
ফায়সাল তা বুঝতে পেরে অল্পক্ষণ অপেক্ষা করে বলল, আপনি কি ভাববেন জানি না, এতকিছুর পরও আপনার প্রতি আমার শ্রদ্ধা এতটুকু কমে নি। একটা কথা বলছি, রাগ করবেন না। জ্ঞানীরা বলেছেন, “ভাবিয়া করিও কাজ, করিয়া ভাবিও না।” স্বপ্নাকে তার দিকে অগ্নি দৃষ্টিতে তাকাতে দেখেও আবার বলল, এবার আপনি আসুন। পনের দিন ছিলাম না, অনেক কাজ জমা হয়ে আছে। প্রয়োজনে অন্য সময় বা অন্যদিন আলাপ করবেন।
স্বপ্না রাগের সঙ্গে বলল, আপনি ভীষণ চালাক ও পাকা অভিনেতা। শুনে রাখুন, আপনি যা কিছু হন না কেন, আমাকে ফাঁকি দিতে পারবেন না। কিছুদিনের মধ্যে আপনার মুখোশ সবার কাছে খুলে দেব।
ফায়সাল হেসে উঠে বলল, তা যদি পারেন, তা হলে আমার জীবন ধন্য হয়ে যাবে।
জেলের ঘানি টেনে যদি ধন্য হতে চান, তবে সেই ব্যবস্থাই করব বলে প্লা সেখান থেকে গটগট করে চলে গেল।
ফায়সাল মৃদু মৃদু হাসতে হাসতে তার চলে যাওয়া দেখল। তারপর কাজে মন দিল।
ফায়জুন্নেসা মেয়েকে ঘণ্টাখানেক আগে অফিসরুমের দিকে যেতে দেখে ভেবেছিলেন, ম্যানেজারের সঙ্গে আলাপ করতে যাচ্ছে। এখন তাকে রাগান্বিত মুখে ফিরতে দেখে চিন্তা করলেন, নিশ্চয় ম্যানেজারের সঙ্গে কিছু একটা হয়েছে। কাছে এলে জিজ্ঞেস করলেন, ম্যানেজারের সঙ্গে আলাপ করতে গিয়েছিলি বুঝি?
স্বপ্না বলল, হ্যাঁ, গিয়েছিলাম।
কি রকম বুঝলি?
আমারটা পরে বলছি, আগে তুমি ওনার সম্পর্কে কমেন্ট কর।
ওনার মতো ভালো ছেলে দ্বিতীয় আছে কি না জানি না। এবার তোরটা বল।
আমারটা ঠিক বিপরীত, ওনার মতো হীন চরিত্রের ছেলে আমিও দ্বিতীয় দেখি নি। ভালোর, মুখোশ পরে তোমাদের সবাইয়ের মন জয় করেছে। আমি ওনার মুখোশ খুলে দিয়ে জেলের ঘানি টানাব।
ফায়জুন্নেসা মেয়ের কথা শুনে খুব অবাক হয়ে বললেন, কি বলছিস তুই?
হ্যাঁ, মা, যা সত্য তাই বলছি। উনি খুব ধূর্ত ও শঠ। ধর্মের মুখোশ পরে ধার্মিক সেজে আমাদের সবকিছুর মালিক হতে চান। আমি ওনার শঠতা ধরে ফেলেছি।
ফায়জুন্নেসা বিরক্ত কণ্ঠে বললেন, তুই ম্যানেজারকে বুঝতে ভুল করেছিস। তোকে আর দোষ দেব কি, প্রথম দিকে আমিও ওনাকে ভুল বুঝেছিলাম। পরে উনিই ভুল ভাঙ্গিয়ে দিয়েছেন। আমার কথা বিশ্বাস না হলে তোর নানিকে জিজ্ঞেস করতে পারিস।
তোমার মতো নানিও ওনাকে খুব ভালো ছেলে মনে করেন। আমিও বলে রাখছি, যেমন করে হোক একদিন না একদিন ওনার মুখোশ খুলে দেবই দেব।
তুই ওনাকে কেন সন্দেহ করছিস বলতো?
পরে বলব। তবে এখন এতটুকু বলতে পারি, সবার মুখে ওনার সুখ্যাতি শুনেও মাত্র ঘণ্টা খানেক আলাপ করে তোমাদের মতো আমারও মনে হয়েছে ওনার মতো ভালো ছেলে এযুগে বিরল। আর সেটাই হল সন্দেহের কারণ।
সন্দেহটা কি বলবি তো।
বললাম না, পরে বলব? আশা করি, কিছুদিনের মধ্যে সন্দেহটা প্রমাণ করতে পারব। সবাই তখন এমনই জানতে পারবে।
তুই কি আমাদের পূর্ব পুরুষদের ইতিহাস জানিস?
হ্যাঁ, নানি বলেছেন। তবে আমি বিশ্বাস করি নি। তারপর নানিকে স্বপ্না যা কিছু বলেছিল সব পুনরায় বলে বলল, তোমাদের বিশ্বাসের সুযোগ নিয়ে শঠতার জাল বিস্তার করেছেন স্বার্থ হাসিল করার জন্য।
ফায়জুন্নেসা চিন্তা করলেন, মেয়ের মনে যে সন্দেহ ঢুকেছে তা কোনো যুক্তিতেই দূর করা যাবে না। তাই ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করা ছাড়া উপায় নেই। অল্পক্ষণ চুপ করে থেকে বললেন, মা হয়ে একটা কথা বলব, রাখবি?
বল। রাখার মতো হলে নিশ্চয় রাখব।
ম্যানেজারের শঠতা প্রমাণ করার জন্য এমন কোনো দুর্ব্যবহার ওনার সঙ্গে করবি না, যার ফলে চলে না যান।
চলে যাবেন কি করে? তোমাদের গুণ্ডাবাহিনী রয়েছে না? তুমিই তো একদিন বললে, বাইরের কেউ চৌধুরী স্টেটে চাকরি করতে এসে স্ব-ইচ্ছায় কখনও ফিরে যেতে পারে না?
তা বলেছি, তবে এটা বলি নি আমাদের গুণ্ডাবাহিনীতে যে কয়জন আছে, তারা ম্যানেজারের সঙ্গে পারবে না। তা ছাড়া তারা এখন ওনাকে পীরের মতো ভক্তি শ্রদ্ধা করে।