লুৎফা বেগম বললেন, ফিরে এসে যদি ঢাকাতে থাকে, তা হলে নিশ্চয় চিঠি দিয়ে জানাত। আমার মন বলছে স্বপ্না এখনও ফেরে নি।
————–
(১) বর্ণনায় : হযরত জরীর (রাঃ) – বুখারী।
(২) সূরা – হুজুরাত, আয়াত -৯, পারা ২৬।
(৩) সূরা-আল-ইমরান, আয়াত-১০৪, পারা-৪।
(৪) বর্ণনায় : হযরত আবু হোরায়রা (রাঃ) – বুখারী।
(৫) বর্ণনায় : হযরত আনাস (রাঃ) -আবুদাউদ।
(৬) বর্ণনায় : হযরত আয়েশা (রাঃ) – আবু দাউদ।
(৭) বর্ণনায় : হযরত আনাস (রাঃ) – আবু দাউদ।
(৮) সূরা রায়ান, আয়াত-২৬, পারা-১৩।
(৯) বর্ণনায় : হযরত সহল (রাঃ) – আবুদাউদ, তিরমিজী।
৪. হারেস মাঝে মাঝে ঢাকা গিয়ে
হারেস মাঝে মাঝে ঢাকা গিয়ে মেয়ে স্বপ্নাকে দেখে আসতেন, কিন্তু বাড়িতে নিয়ে আসতেন না। মেয়ের প্রতি ফায়জুন্নেসার তেমন টান না থাকলেও মাঝে মধ্যে স্বামীর সঙ্গে তাকে দেখার জন্য যেতে চাইতেন। হারেস রাজি না হয়ে বলতেন, মেয়েকে আমি নিজের মতো করে মানুষ করব, তাই আমি চাই না তুমি তার সঙ্গে দেখা কর। এই নিয়ে স্বামী স্ত্রীর মধ্যে প্রায় রাগারাগি হত।
লুৎফা বেগম মেয়ে ফায়জুন্নেসার উপর খুব অসন্তুষ্ট ছিলেন। তাই তিনি জামাই-এর হয়ে মেয়েকে বলতেন, “জামাইয়ের সঙ্গে আমিও একমত। স্বপ্নার উপর তোর ছায়াও যেন না পড়ে। তোর মা হওয়ার যোগত্যা নেই। যে দিন যোগ্যতা অর্জন করতে পারবি, সেদিন স্বপ্নার কাছে মা বলে পরিচয় দিবি।” তারপর থেকে ফায়জুন্নেসা মেয়েকে দেখতে যাওয়ার অথবা তাকে নিয়ে আসার ব্যাপারে স্বামী খুন হওয়ার আগে পর্যন্ত তাকে ঠিকানা অথবা মেয়ে কেমন আছে জিজ্ঞেস করেন নি। এমন কি আজিজকে নিয়ে যতদিন প্রেম সাগরে সাঁতার কেটেছেন, ততদিন মেয়ের কথা একরকম ভুলেই গিয়েছিলেন। হঠাৎ একদিন রাতে ঘুমের মধ্যে স্বপ্নে দেখলেন, “মেয়ে স্বপ্না যেন বাড়িতে এসে আজিজের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ অবস্থায় দেখে জিজ্ঞেস করল, কে ইনি? বাবা মারা যাওয়ার পর ইনাকে কি তুমি বিয়ে করেছ?”
মেয়েকে দেখে ফায়জুন্নেসা এত লজ্জা পেলেন যে, সরে বসে মাথা নিচু করে ছিলেন। কোনো কথা বলতে পারলেন না।
তুমি কথা বলছ না কেন মা? তা হলে আমার ভাবা কি অনুচিত হবে, ইনি তোমার উপপতি? ছিঃ মা ছিঃ তুমি নারী জাতির কলঙ্ক। তোমার মতো চরিত্রহীন মেয়ের পেটে জন্মেছি ভেবে নিজেকে খুব ঘৃণা হচ্ছে। আমি এক্ষুনি চলে যাচ্ছি, তোমাকে কখনও মা বলে স্বীকৃতি দেব না। কথা শেষ করে স্বপ্না সেখান থেকে চলে গেল।
আর তখনই ফায়জুন্নেসার ঘুম ভেঙ্গে গেল। এই স্বপ্না দেখার পর থেকে বার বার যেমন মেয়ের কথা মনে পড়তে লাগল, তেমনি মনে পাপবোধ জেগে উঠল। তারপর থেকে আজিজকে এড়িয়ে চলতে শুরু করেন এবং শেষমেষ আজিজকে চাকরি থেকে বরখাস্থ করে তাড়িয়ে দেন। তারপর মেয়ের খোঁজ খবর নেয়ার জন্য অস্থির হয়ে পড়েন। কিন্তু মেয়ে কোথায় থাকে, এতদিন তার খবরচপত্র কে দিচ্ছে, কিছুই জানেন না। ভাবলেন, মা নিশ্চয় নাতনির সবকিছু জানেন।
একদিন মাকে জিজ্ঞেস করলেন, স্বপ্না কোথায় থাকে জান?
লুৎফা বেগম হাশেমের কাছ থেকে মেয়ের সব কিছুর খবর রাখেন আর মেয়েকে হেদায়েত করার জন্য সব সময় দোয়া করেন। আজিজকে বরখাস্থ করার খবর যেদিন শোনেন, সেদিন আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করেন।
আজ তাকে স্বপ্নার কথা জিজ্ঞেস করতে গম্ভীরস্বরে বললেন, এত বছর পর মেয়ের খবর জানতে চাচ্ছিস কেন? যদি বলি সে নেই, আল্লাহ তাকে দুনিয়া থেকে তুলে নিয়েছেন?
ফায়জুন্নেসা চমকে উঠে কান্নাজড়িতরে বললেন, এমন কথা বলো না মা। তুমি একদিন বলেছিলে, “যেদিন মা হওয়ার যোগ্য হবি, সেদিন মেয়ের কাছে মা বলে পরিচয় দিবি।” এত বছর পর কেন তার খবর জানতে চাচ্ছি, নিশ্চয় বুঝতে পারছ। মন বলছে, তোমার সঙ্গে স্বপ্নার যোগাযোগ আছে।
হ্যাঁ, আছে। তুই কি তার সঙ্গে দেখা করতে চাস?
হ্যাঁ, মা। তাকে দেখার জন্য মন খুব অস্থির হয়ে পড়েছে।
কিন্তু সে তো পড়াশোনা শেষ না করা পর্যন্ত আসবে না।
আমি যাব তার সঙ্গে দেখা করতে, তুমি ঠিকানা দাও।
ঠিকানা দিলেও কাজ হবে না।
কেন?
স্বপ্না তোর সঙ্গে দেখা করবে না।
সে আমি বুঝব, তুমি ঠিকানা দাও।
লুৎফা বেগম কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বললেন, তোর কারণে আজ পনের বছর তাকে দেখতে না পেয়ে কি ভাবে দিন কাটাচ্ছি, তা আল্লাহ ভালো জানেন, কথা শেষ করে চোখ মুছলেন।
ফায়জুন্নেসা মায়ের দু’পা জড়িয়ে ধরে ভিজে গলায় বললেন, আমি আমার ভুল বুঝতে পেরেছি। আমাকে মাফ করে দাও মা। তারপর আবার বললেন, হয় ঠিকানা দাও, না হয় তাকে আবার ব্যবস্থা কর।
লুৎফা বেগম পা ছাড়িয়ে নিয়ে বললেন, উঠে বস। বসার পর বললেন, তোর কাছ থেকে এই কথা শোনার জন্য এত বছর বুকে পাথর চাপা দিয়ে সবর করে ছিলাম। আজ তোর কথা শুনে সেই পাথর আপনা থেকে সরে গেছে। তাই স্বপ্নাকে দেখার জন্য আমিও অস্থির হয়ে পড়েছি। ওর ঢাকার পড়াশোনা শেষ। আরও পড়াশোনা করার জন্য আমেরিকা যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে জানার পর ভেবেছিলাম, মৃণালবাবু ও হাসেমকে নিয়ে এয়ারপোর্টে তার সঙ্গে দেখা করতে যাব। আল্লাহ যখন তোর সুমতি দিয়েছেন তখন তুইও আমাদের সঙ্গে যাবি।
খুশিতে ফায়জুন্নেসার চোখে পানি এসে গেল। মাকে জড়িয়ে ধরে বললেন, স্বপ্নাকে কিছুদিনের জন্য এখানে আনা যায় না?