আজকাল মাওলানা হাফেজ ও সাধারণ লোকেরা সুন্নতি পোশাক হিসাবে লম্বা পীরান পরেন যার কুল টাখনুর উপরে পড়ে। এমন কি টাখনুর নিচেও চলে যায়। এতে সুন্নত আদায় হয় না, বরং কঠিন গুনাহ হয়। কারণ পাজামা, লুঙ্গি ও পিরানের ঝুল পায়ের গোচ পর্যন্ত থাকা সুন্নত। আর টাখনুর উপর (টাখনু যেন দেখা যায়) পর্যন্ত পাজামা, লুঙ্গি ও পিরানের ঝুল থাকলে জায়েজ হবে। যে কোনো পোশক টাখনুর নিচে ঝুলিয়ে পরলে মানুষের মনে অহঙ্কার জন্মায়। অহঙ্কার মুসলমানদের জন্য হারাম। হাদিসে আছে, আমাদের নবী করিম (দঃ) বলিয়াছেন, “পায়ের গোড়ালীর নিয়ে পায়জামার যে অংশ ঝুলিতে থাকে, উহা দোযখের অগ্নিতে অবস্থিত।”[৪]
এখন কেউ যদি বলেন, আমি অহঙ্কার বশত গোড়ালীর নিচে ঝুলিয়ে কাপড় পরি না, তবে তাকে বলব, গোড়ালীর উপরে কাপড়ের কুল রেখে পরে দেখুন আপনার মনের অবস্থা কি হয়। অনেক ইমাম সাহেব জামাতে নামায পড়ার সময় ইকামতের আগে মুসুল্লীদের উদ্দেশ্যে বলেন, সবাই গোড়ালীর উপর কাপড়ের ঝুল তুলে নেন। মুসুল্লীরা তাই করে থাকেন। ফলে মুসুল্লীরা মনে করেন, শুধু নামায পড়ার সময় গোড়ালীর উপর কাপড়ের ঝুল থাকা দরকার, অন্য সময় দরকার নেই। তাই নামায শেষ করে তারা কাপড়ের ঝুল গোড়ালীর নিচে আবার ঝুলিয়ে দেন।
আসলে ইমাম সাহেবরা যদি অন্য সময়ে হাদিসের বাণী শুনিয়ে সব সময় গোড়ালীর উপর কাপড়ের ঝুল রেখে পরতে বলতেন, তা হলে হয়তো মুসুল্লীদের ভুল ধারণা হত না।
আর একটা কাজ মুসুল্লীরা করে থাকেন, তা হল নামায পড়ার জন্য মসজিদে এসে সামনের কাতারে জায়গা থাকা সত্ত্বেও নিজের সুবিধেমতো জায়গায়, অর্থাৎ জানালার ধারে অথবা ফ্যানের নিচে নামায পড়তে শুরু করে দেন অথবা বসে থাকেন। ফলে পরে যারা আসেন তারা তাদের গায়ের উপর থেকে সামনের কাতারে যান। এরকম করা মোটই উচিত নয়। এ সম্পকে দু’টো হাদিস বলছি, রসুলুল্লাহ (দঃ) বলিয়াছেন, “প্রথম সারিকে প্রথম পূর্ণ করিবে অতঃপর তাহার সংলগ্ন পিছনের সারিকে। যাহা কম থাকে তাহা যেন সর্বশেষ সারিতে থাকে।”[৫]
একদা রসুলুল্লাহ (দঃ) বলিলেন, “লোক সর্বদা প্রথম সারি হইতে পিছনে থাকিতে চাহিবে, ফলে আল্লাহও তাহাদিগকে পিছাইতে পিছাইতে দোযখ পর্যন্ত পিছাইয়া দিবেন।”[৬]
এ জামাতে নামায পড়ার সময় গায়ে গা ঠেকিয়ে দাঁড়াতে হবে, ফঁক রেখে দাঁড়ান নিষেধ। হাদিসে আছে, রসুলুল্লাহ (দঃ) বলিয়াছেন, “তোমরা সারি সমূহে পরস্পরে মিলিয়া মিশিয়া দাঁড়াইবে এবং উহাদিগকে (অপর নামাযীদিগকে) নিকটে নিকটে রাখিবে। তোমাদের ঘাড় সমূহকে সমপর্যায়ে সোজা রাখিবে। সেই আল্লাহর শপথ, যাহার হাতে আমার জীবন রহিয়াছে। নিশ্চয় আমি শয়তানকে দেখি, সে সারির ফাঁক সমূহে প্রবেশ করে যেন কালো ভেড়ার বাচ্চা।” [৭]
অনেকে জেনে না জেনে গরুমের জন্য হোক অথবা অহঙ্কার বশত হোক গায়ে গা না ঠেকিয়ে ফাঁক রেখে দাঁড়ান, এটা উক্ত হাদিস মোতাবেক একেবারেই উচিত নয়।
এবার অন্য কথায় আসি, প্রত্যন্ত অঞ্চলে খ্রিস্টান মিশনারী খুলে হাসপাতাল ও স্কুল প্রতিষ্ঠা করে বিনা পয়সায় গরিবদের চিকিৎসা করাচ্ছে, গরিব ছেলেমেয়েদের বই পুস্তক দিয়ে এমন কি একবেলা খাইয়ে স্কুলে লেখাপড়া করাচ্ছে। আবার অনেক দুঃস্থ মহিলা ও পুরুষকে আর্থিক সাহায্য করছে। তাদের অনেকের চাকরি দিচ্ছে। তারপর অতি কৌশলে তাদেরকে ধর্মান্তরিত করে খ্রিস্টান করছে। আর মুসলমানরা ভাইয়ে ভাইয়ে জমি জায়গা নিয়ে ঝগড়া মারামারি দলাদলি ও মামলা করে অধঃপতনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। মুসলমানরা লোভ, হিংসা ও অহঙ্কারের বশবর্তী হয়ে এমন কোনো জঘন্য কাজ নেই যে, করছে না। খ্রিস্টানরা যে কাজ করছে, সেই কাজ মুসলমানদের করতে হবে এবং করা একান্ত উচিত।
যাদের স্বচ্ছল অবস্থা তারা সম্মিলিতভাবে এসব কাজ করে প্রতিটি ঘরে ইসলামের জ্ঞান ছড়িয়ে দিয়ে খ্রিস্টান মিশনারীদের মোকাবেলা করতে হবে। তা না করে যদি শুধু দুনিয়াতে গরিবদের রক্ত শুষে কি করে আরো বড়লোক হবেন, কি করে গরিবদের উপর মাতবরী করবেন, কি করে নিজের শান শওকাত বাড়াবেন, এসব কাজে ব্যস্ত থাকেন, তা হলে কাল হাশরের মাঠে আল্লাহর কাছে খুব কঠিন অবস্থার সম্মুখীন হতে হবে আর দুনিয়াতেও তার ফল ভোগ করতে হবে।
একদিন মুসলমানরা কুরআন ও হাদিসের জ্ঞান অর্জন করে ও সেসব অনুসরণ-অনুশীলন করে জ্ঞান-বিজ্ঞানে, শৌর্যে-বীর্যে ও সভ্যতায় পথিবীর শ্রেষ্ঠ জাতি ছিল। আর বর্তমানে মুসলমানরা কুরআন-হাদিসের বাণী ত্যাগ করে ইহুদী-খ্রিস্টানদের পদলেহন করে আত্মতৃপ্ত করছে। ফলে সারা দুনিয়াতে মুসলমানদের উপর আল্লাহর গযব নিপতীত হয়েছে। যাদের পদলেহন করে আত্মতৃপ্ত করছে, সেই ইহুদী ও খ্রিস্টানরা মুসলমান রাষ্ট্রগুলোর প্রশাসকদের উপর প্রভুত্ব করছে? এক মুসলিম রাষ্ট্রের সঙ্গে অন্য মুসলিম রাষ্ট্রের যুদ্ধ বাধিয়ে মুসলমানদের শিরদাঁড়া গুড়িয়ে দিচ্ছে, মুসলমানদের সন্ত্রাসী আখ্যা দিয়ে অত্যাচারের স্টিম রোলার চালাচ্ছে। তবু মুসলমানদের হুঁশ হচ্ছে না, তাদেরকেই প্রভুত্বের আসনে বসিয়ে নিজেরা দাসে পরিণত হয়েছে শুধু নিজেদের গদি রক্ষার জন্য।