ফায়জুন্নেসা খুব অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলেন, সাজ্জাদ সঙ্গে ছিল না?
না, তবে ওর কোনো দোষ নেই। ও সঙ্গে যেতে চেয়েছিল, ম্যানেজার সাহেব নেন নি।
ম্যানেজারের সাহসতো কম না, একা একা দুশমনের গ্রামে গেছেন? ওনাকে বলে দিবি আর কখনও যেন না যান। আর শোন, আজ সন্ধ্যের পর দোতলার ড্রইংরুমে ওনাকে নিয়ে আসবি। সে কথা এখনই গিয়ে বলবি।
জ্বি বলব বলে হাসেম অনুমতি নিয়ে চলে গেল।
.
লুৎফা বেগম মেয়ের কার্যকলাপে অসন্তুষ্ট হয়ে যখন বুঝিয়ে ও বকা-বকি করে তার মতিগতি শুধরাতে পারলেন না তখন থেকে তিনি সংসার থেকে নিজেকে গুটিয়ে নেন। চৌধুরী স্টেটের ও সংসারে কি হচ্ছে না হচ্ছে কোনো] খোঁজ খবর রাখেন না। বেশিরভাগ সময় ইবাদত বন্দেগী করে কাটান। একদিন ওনার খাস চাকরানি ফরিদাকে নামায পড়তে দেখে অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলেন, হঠাৎ আজ নামায পড়লি যে? তোকে তো কোনো দিন নামায পড়তে দেখি নি।
ফরিদা বলল, আমাদের নতুন ম্যানেজার শুধু আমাকে নয় এ বাড়ির সবাইকে নামায ধরিয়েছেন।
আরো অবাক হয়ে লুৎফা বেগম বললেন, সবাইকে মানে? তোদের মালেকিনকেও?
মালেকিন তো ম্যানেজার সাহেবের ওয়াজ শোনেন না। শুনলে নিশ্চয় পড়তেন।
ম্যানেজার মৌলবী না কি যে, তোদেরকে ওয়াজ করে।
মনে হয় মৌলবী।
তা কখন তাদের কাছে ওয়াজ করে?
রাত দশটা থেকে এগারটা পর্যন্ত।
অতরাতে কোথায় ওয়াজ করে?
ওনার ঘরে। পুরুষরা ওনার ঘরের মেঝেয় বসে আর আমরা মেয়েরা দরজার সামনে বারান্দায় বসি। জানেন বড় মা, হাসেম মিয়া বলেন, ম্যানেজার সাহেব আল্লাহর খাস বান্দা।
এসব কথা তোদের মালোকন জানে?
তা বলতে পারব না।
ফরিদার কথা শুনে লুৎফা বেগম ম্যানেজারের উপর খুব সন্তুষ্ট হয়ে দোয়া করলেন, “আল্লাহ তুমি ওকে দুশমনদের হাত থেকে হেফাজত করো, ওর দ্বারা ফায়জুন্নেসাকে হেদায়েত করো।” ভেবে রাখলেন, সময় সুযোগ মতো ম্যানেজারের সঙ্গে আলাপ করবেন।
মাগরিবের নামাযের পরে হাসেম ফায়সালকে দোতলার ড্রইংরুমে নিয়ে এসে বসতে বলে চলে গেল। ফায়সাল আসবাবপত্র দেখে বুঝতে পারল, এ নিচতলার ড্রইংরুমের থেকে আরো উন্নত। প্রায় দশ মিনিট পর ফায়জুন্নেসাকে ঢুকতে দেখে দাঁড়িয়ে সালাম দিল।
ফায়জুন্নেসা সালামের উত্তর দিয়ে বসতে বলে নিজেও বসলেন। তারপর বললেন, শুনলাম আপনি নাকি ওয়াজ নসিহত করে সবাইকে হেদায়েত করে ফেলেছেন?
ফায়সাল বলল, হেদায়েত করার মালিক একমাত্র আল্লাহ। আমি শুধু আল্লাহ ও তাঁর রসুল (দঃ)-এর বাণী সবাইকে শুনিয়েছি। আর এটা করা প্রত্যেক জ্ঞানী মুমিন মুসলমানের কর্তব্য। নচেৎ কাল কেয়ামতের ময়দানে জ্ঞানীদেরকে আল্লাহর কাছে জবাবদিহি করতে হবে। ফ93
আপনিতো ভার্সিটি থেকে পলিটিক্যাল সাইলে মাস্টার্স করেছেন, কুরআন হাদিসের জ্ঞান পেলেন কি করে?
প্রত্যেক মুসলমানের কুরআন হাদিসের জ্ঞান অর্জন করা অবশ্য কর্তব্য। শুধু মাদরাসার ছাত্ররা কুরআন হাদিসের জ্ঞান অর্জন করবে আর স্কুল, কলেজ ও ভার্সিটির ছাত্ররা করবে না, এটা অত্যন্ত ভুল ধারণা। মুসলমান হিসাবে তাদের পাঠ্য বইয়ের পড়ার অবসর সময়ে ধর্মীয় জ্ঞান যেমন অর্জন করতে হবে তেমনি সেই জ্ঞানের অনুশীলনও করতে হবে। আল্লাহর মেহেরবাণীতে আমি তাই করেছি বলে সেই জ্ঞান প্রসার করার চেষ্টা করছি। স্কুল, কলেজ ও ভার্সিটির ছেলেমেয়েরা তা করছে না বলে তারা ধর্মের জ্ঞান যেমন পাচ্ছে না তেমনি অনুশীলনও করছে না। আপনার কথাই ধরুন না, আপনি যদি স্কুল ও কলেজে পড়ার সময় ধর্মীয় জ্ঞান অর্জন করতেন ও অনুশীলন করতেন, তা হলে আপনার ও আপনার বাড়ির সবার জীবন ধারা অন্য রকম হত।
ফায়জুন্নেসা বললেন, এসব কথা এখন থাক। যা বলছি শুনুন, কয়েকদিনের মধ্যে একটা জলমহলের মাছ ধরে বিক্রি করা হবে। খবর পেয়েছি আমাদের শত্রুরা মাছ লুট করতে আসবে। আপনি আমাদের বাহিনী নিয়ে তৈরি থাকবেন যেন তারা তা করতে না পারে।
ফায়সাল মৃদু হেসে বলল, আমি সে কথা জানি এবং সেভাবে প্রস্তুতি নিয়েই আছি। ও নিয়ে আপনি কোনো চিন্তা করবেন না। ইনশাআল্লাহ আমরা সফলতা লাড করব।
ফায়জুন্নেসা শত্রু পক্ষের খবর জানার জন্য বশির নামে এমন একজনকে নিযুক্ত করেছেন, যার বাড়ি আজিজের গ্রামে এবং সে আজিজের বাড়ির চাকর। বশির আর দশ বার বছরের ছেলে সাগিরের দ্বারা খবরটা পাঠিয়েছে। ম্যানেজার খবর জানে শুনে অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলেন, আপনি জানলেন কি করে? এ ম্যানেজার হিসাবে স্টেটের শত্রু মিত্রের সব খবর রাখা আমার কর্তব্য নয়
হ্যাঁ কর্তব্য। এবার আমার প্রশ্নের উত্তর দিন।
আপনি যেভাবে জেনেছেন।
আরো অবাক হয়ে ফায়জুন্নেসা বললেন, মানে?
মানে আপনার মতো আমারও গুপ্তচর আছে। এরপর আর কোনো প্রশ্ন করবেন না। কারণ উত্তর দিতে পারব না।
ফায়জুন্নেসা একটু রাগের সঙ্গে বললেন, ভুলে যাচ্ছেন কেন, আপনি আমার বেতনভুক্ত একজন কর্মচারী। কর্মচারীর উচিত নয় মালিককে কোনো প্রশ্ন করতে নিষেধ করা।
আপনিও ভুলে যাচ্ছেন কেন, এতবড় স্টেটের ভালো মন্দের দায়িত্ব যার উপর, সে একজন বেতনভুক্ত কর্মচারী হলেও তার ব্যক্তিগত স্বাধীনতার উপর মালিকের হস্তক্ষেপ করা উচিত নয়।
ফায়জুন্নেসা রাগ সামলাতে না পেরে কঠিন কণ্ঠে বললেন, আপনি কিন্তু সীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছেন।