- বইয়ের নামঃ স্বপ্নে দেখা সেই মেয়েটি
- লেখকের নামঃ কাসেম বিন আবুবাকার
- প্রকাশনাঃ আফসার ব্রাদার্স
- বিভাগসমূহঃ উপন্যাস
১. ট্রেন যখন নীলফামারী স্টেশনে পৌঁছাল
ট্রেন যখন নীলফামারী স্টেশনে পৌঁছাল তখন বিকেল পাঁচটা। ফায়সাল ট্রেন থেকে নেমে স্টেশনের বাইরে এসে একজনকে জিজ্ঞেস করল, মসজিদ কোন দিকে বলতে পারেন?
ঐ তো দেখা যাচ্ছে, বলে হাত তুলে দেখিয়ে লোকটা চলে গেল। সাড়ে পাঁচটায় জামাতের সঙ্গে আসরের নামায পড়ে ফায়সাল মসজিদের বাইরে একজন বৃদ্ধ লোকের সঙ্গে সালাম বিনিময় করে বলল, আমি খোকসাবাড়ি যাব, কিভাবে যাব একটু বলে দেবেন?
বৃদ্ধ লোকটির বয়স প্রায় সত্তর বছর, চুলদাড়ি সব পেকে সাদা হয়ে গেছে। তবে জরা এখনও ওনার ধারে কাছে আসে নি। একহারা চেহারা হলেও সুঠাম দেহের অধিকারী। ফায়সালের আপাদমস্তক একবার চোখ বুলিয়ে নিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, আপনি কোথা থেকে আসছেন?
ঢাকা থেকে।
কার বাড়িতে যাবেন?
ইনসান চৌধুরীর বাড়ি।
উনি আপনার আত্মীয়?
বৃদ্ধকে একের পর এক প্রশ্ন করতে শুনে ফায়সাল ক্রমশ বিরক্ত হয়ে উঠলেও তা প্রকাশ না করে বলল, না, উনি আত্মীয় না। এবার কিভাবে যাব বলুন।
বৃদ্ধ তার কথায় কর্ণপাত না করে জিজ্ঞেস করলেন, তা হলে ওনার বাড়িতে যাচ্ছেন কেন?
ফায়সাল আরো বেশি বিরক্ত হয়ে বলল, এসব জেনে কি লাভ আপনার?
লাভ আমার নেই, তবে আপনার আছে?
আপনার কথা ঠিক বুঝতে পারছি না। ঠিক আছে, আপনাকে বলতে হবে না, অন্যের কাছ থেকে জেনে নেব বলে ফায়সাল হাঁটতে শুরু করল।
এই যে দাদু, রাগ করে চলে যাচ্ছেন কেন? দাঁড়ান। তারপর নিজেই এগিয়ে এসে বললেন, আপনাকে দেখে আমার নাতির কথা মনে পড়ল। তাই ঐ সব, জিজ্ঞেস করে আপনাকে দেখছিলাম।
বৃদ্ধের কথা শুনে ফায়সাল দাঁড়িয়ে পড়েছিল। জিজ্ঞেস করল, আপনার নাতি এখন কোথায়?
নেই। আল্লাহ তাকে দুনিয়া থেকে তুলে নিয়েছেন। তারপর বললেন, খোকসাবাড়ি এখান থেকে প্রায় চার-পাঁচ মাইল। রিকশায় গেলে ত্রিশ চল্লিশ টাকা ভাড়া নেবে। হেঁটে গেলে ঘণ্টা দেড়েক সময় লাগবে। ওখানে কেন যাচ্ছেন বললেন না তো, তবে যে কারণেই যান না কেন, খুব সাবধানে থাকবেন।
ফায়সাল অবাক হয়ে বলল, কেন বলুন তো?
ইনসান চৌধুরী মানুষ না, হাইওয়ান ছিলেন। ওনার নাম হাইওয়ান চৌধুরী হওয়া উচিত ছিল? এমন কোনো জঘন্য কাজ নেই, যা উনি করেন নাই। আপনি
বললেও বুঝতে পারছি, চৌধুরীর স্টেটে চাকরি করার জন্য এসেছেন। এর আগেও কয়েকজন এসেছেন, তাদের মধ্যে শুধু একজনই প্রাণ নিয়ে পালাতে সক্ষম হয়েছেন, বাকিরা পারেন নি। আপনি দেখতে অনেকটা আমার নাতির মতো, তাই এত কিছু বলে সাবধান করলাম। আর আমার কথা যদি শোনেন, তা হলে বলব, ঢাকার ছেলে ঢাকায় ফিরে যান।
কিন্তু ইনসান চৌধুরী তো অনেক বছর আগে মারা গেছেন? ওনার একমাত্র মেয়ে সম্পত্তি দেখাশোনা করার জন্য একজন ম্যানেজার চেয়ে কাগজে বিজ্ঞপ্তি দিয়েছেন।
হ্যাঁ, উনি অনেক বছর আগে মারা গেছেন। কিন্তু ওনার মেয়েও বাবার মতো। ইনসান চৌধুরী মেয়ের বিয়ে দিয়ে জামাইকে ঘরজামাই করে রেখেছিলেন। জামাই খুব ভালো ছেলে ছিল। শ্বশুরের জঘন্য কাজের প্রতিবাদ করত বলে ইনসান চৌধুরী জামাই-এর উপর খুব অসন্তুষ্ট ছিলেন। ওনার মেয়েও স্বামীর প্রতি তেমন সন্তুষ্ট ছিলেন না। তাই বাবা মারা যাওয়ার পর স্বামীকে ওনার প্রেমিকের দ্বারা মেরে ফেলেন। তারপর থেকে মেয়ে বাবার সবকিছু দেখাশোনা করছেন। যে মেয়ে স্বামীকে মেরে ফেলতে পারে, সে মেয়ে কেমন হতে পারে নিশ্চয় বুঝতে পারছেন?
ফায়সাল বৃদ্ধের কথা বিশ্বাস করতে পারল না। বলল, হাদিসে পড়েছি শোনা কথা বিশ্বাস করতে নেই। অনুসন্ধান করে সত্য মিথ্যা যাচাই করতে হয়।
হাদিসটা আমিও জানি। ঠিক আছে যান। আর দেরি করাব না।
ফায়সাল সালাম বিনিময় করে ভাড়া ঠিক করে একটা রিকশায় উঠে বসল।
খোকসাবাড়ি গ্রামে ঢুকে রাস্তার পাশে একটা মসজিদে মাগরিবের আযান হচ্ছে শুনে ফায়সাল রিকশাওয়ালাকে থামতে বলে বলল, আমি নামায পড়ব। সে জন্য আপনাকে পাঁচটাকা বেশি দেব। তারপর জিজ্ঞেস করল, এখান থেকে চৌধুরী বাড়ি কত দূর?
রিকশাওয়ালা বলল, বেশ খানিকটা দূর। পাঁচ টাকা বেশি দিতে হবে না, আমিও নামায পড়ব।
নামায শেষে রিকশায় উঠে ফায়সাল বলল, আপনি নামায পড়েন জেনে খুব খুশি হয়েছি। কবে থেকে নামায পড়েন?
ছোটবেলায় আব্বা নামায ধরিয়েছেন তারপর আর ছাড়ি নি।
সুবহান আল্লাহ, আপনার আব্বা বেঁচে আছেন?
হ্যাঁ বেঁচে আছেন, তবে খুব বুড়ো হয়ে গেছেন।
আপনারা কয় ভাই?
পাঁচ ভাই।
সবাই এক সংসারে আছেন?
না। আব্বা এক এক করে ছেলে বিয়ে দিয়ে ভিন্ন করে দিয়েছেন।
সব ভাইয়ের বিয়ে হয়ে গেছে?
চার জনের হয়েছে। আমি সবার ছোট, আমার এখনও হয় নি।
আপনি তা হলে মা বাবার সংসারে আছেন?
হ্যাঁ, তবে সামনের বছর বিয়ে দিয়ে আব্বা ভিন্ন করে দেবেন।
আপনার তো বয়স হয়েছে, এখনও আপনার বাবা বিয়ে দেন নি কেন?
আমি এখনও দশ হাজার টাকা আব্বার কাছে জমা করতে পারি নি।
টাকার সঙ্গে বিয়ের কি সম্পর্ক? বিয়ে তো দেবেন আপনার বাবা।
তা তো দেবেন, কিন্তু দেন মোহরের টাকা আমাকে যে দিতে হবে। তাই সেই টাকা জোগাড় করছি।