আব্দুস সাত্তার বলল, না, আপনারা বসুন। তারপর মহসিনের দিকে তাকিয়ে বলল, চলুন, আমরা একসঙ্গে যাই।
মহসিন বলল, না, আপনি চলে যান। আমরা যাব, কিনা যাব সেটা আমাদের ব্যাপার।
তা হলে কথা দিন, ওঁদেরকে আর অপমান করবেন না?
মহসিন এতক্ষণ রাগ সামলে রাখতে পারলেও এখন আর পারল না। বলল, আর একটা কথা বললে তোর নায়কগিরি ছাড়িয়ে দেব।
আব্দুস সাত্তার বলল, ভার্সিটির ছাত্র হয়েও ভদ্রতা শেখেন নি?
তবে রে ভদ্রতা শেখাচ্ছি বলে মহসিন তার গালে একটা চড় মেরে বলল, যা শালা, ভাগ।
চড়ের আঘাতে আব্দুস সাত্তারের ফর্সা গালটা লাল হয়ে গেল। গালে হাত বুলোতে বুলোতে বলল, ভার্সিটিতে পড়লে কি হবে, আপনার বংশ বোধহয় ভালো নয়।
কী? বংশ তুলে কথা বলছিস? এত বড় সাহস বলে মহসিন এবার তার মুখে। ঘুষি মারতে গেল।
আব্দুস সাত্তার হাতটা এক হাতে ধরে অন্য হাত দিয়ে তার গালে একটা চড় মেরে বলল, একটু আগে বললেন না, “ইট ছুঁড়লে পাটকেল খেতে হয়?” পাটকেল। আর ছুঁড়লাম না, আপনার ইটটাই ফিরিয়ে দিলাম। তবে এরপর যদি আবার কিছু ছুঁড়তে চান, তা হলে আপনার কথাটা বাস্তবে ঘটবে। আর শুনুন, কথায় আছে, “জন্ম হউক যথা তথা, কর্ম হউক ভালো।” কথাটা মনে রাখবেন। তারপর হাত ছেড়ে দিয়ে বলল, লেখাপড়া যখন করছেন তখন ভদ্র হওয়ার চেষ্টা করুন।
মহসিন রাগে কাঁপতে কাঁপতে দাতে দাতে চেপে বলল, শালা শুয়োরের বাচ্চা, দাঁড়া, মজা দেখাচ্ছি বলে পকেট থেকে পিস্তল বের করে তার দিকে তাক করল।
আব্দুস সাত্তার পিস্তল দেখেও নির্ভয় কণ্ঠে বলল, আপনাদের মতো গুটিকয়েক ছেলের জন্য ভার্সিটির এত দুর্নাম। আপনার লজ্জা হওয়া উচিত।
মহসিন কর্কশ কণ্ঠে বলল, খুব যে বড় বড় বুলি ছাড়ছিস, আমাকে চিনিস?
তা আর চিনি না, আপনি হলেন…..পার্টির সহকারী নেতা।
তোকে এক্ষুনি শেষ করে দিতে পারি, তা বোধহয় জানিস না?
আব্দুস সাত্তার চড় মেরে হাত ছেড়ে দেওয়ার পর খানিকটা পিছিয়ে গিয়ে মহসিন পিস্তল বের করে তার দিকে তাক করে রয়েছে।
শেষ করে দেওয়ার কথা শুনে আব্দুস সাত্তার তার দিকে এগিয়ে আসতে আসতে বলল, শেষ করার মালিক একমাত্র আল্লাহ। তবে আপনার হাতে আমার মৃত্যু লেখা থাকলে মরব। নচেৎ……।
তাকে থাটা শেষ করতে না দিয়ে মহসিন গর্জে উঠল, দাঁড়া বলছি। আর একপা এগোলে গুলি খাবি।
আজিজ ও ইউসুফ মহসিনকে জাপটে ধরে বলল, এ কী করছিস? তারপর আব্দুস সাত্তারকে বলল, আপনি চলে যান তো ভাই।
তোরা আমাকে ছেড়ে দে বলে আজিজ গুলি করল।
ধস্তাধস্তির ফলে গুলিটা আব্দুস সাত্তারের বুকে না লেগে বাম কাঁধের কিছু মাংস নিয়ে বেরিয়ে গেল।
আব্দুস সাত্তার তা গ্রাহ্য না করে মহসিনের হাত থেকে পিস্তল কেড়ে নিয়ে বলল, এবার আমি যদি আপনাকে গুলি করে শেষ করে দিই, তা হলে কী অন্যায় হবে? তারপর মৃদু হেসে বলল, ভয় নেই, গুলি করব না। আমি আপনাদের চিনি। আর কোনো সীন ক্রিয়েট না করে চলে যান। পিস্তলটা কাল আপনার পার্টির নেতার কাছ থেকে নেবেন।
আজিজ ও ইউসুফ মহসিনকে ধরে জোর করে বেশ কিছুটা দূরে নিয়ে আসার পর আজিজ বিরক্ত কণ্ঠে বলল, তুই সামান্য ব্যাপার নিয়ে এমন কাণ্ড করিস, যা। মোটেই উচিত নয়।
আজিজ থেমে যেতে ইউসুফ বলল, এত ছোটখাট ব্যাপার নিয়ে মাথা গরম করা তোর উচিত হয় নি। ছেলেটা তোকে চিনে বলল, নেতার কাছে নালিশ করতে পারে। নেতা অবশ্য তোকে কিছু বলবে না। তা জেনে ছেলেটা এ্যাকসান নিতে পারে।
মহসিন সরকারী পক্ষের এক এমপির ছেলে। তাই তাচ্ছিল্যের স্বরে বলল, আরে দূর, ও আবার কি এ্যাকসান নেবে? এ্যাকসান নিতে এসে শেষে জানটাই হারাবে।
ইউসুফ বলল, তুই নেতার সহকারী, তোকে ধৈর্যশীল হতে হবে।
হয়েছে হয়েছে, তোদেরকে আর উপদেশ দিতে হবে না। ঐ দিকটায় চল, বসে আড্ডা দিই।
গুলির শব্দ শুনে দূরের অনেকে তাদের দিকে তাকিয়েছিল। যারা কাছে ছিল, তারা দূরে সরে গিয়ে ঘটনাটা বোঝার চেষ্টা করছিল। কেউ এগিয়ে আসার সাহস করে নি।
রূপা ও সায়মা আব্দুস সাত্তারের কার্যকলাপে মন্ত্রমুগ্ধের মতো তার দিকে তাকিয়েছিল।
ছেলেগুলো চলে যাওয়ার পর হঠাৎ রূপার লক্ষ্য পড়ল, সাহায্যকারী ছেলেটার ক্ষত থেকে গলগল করে রক্ত বেরিয়ে জামাকাপড় ভিজে যাচ্ছে। তাড়াতাড়ি এগিয়ে। এসে নিজের গায়ের ওড়না ছিঁড়ে বেঁধে দিয়ে বলল, শীঘ্রই সরওয়ার্দিতে চলুন।
আব্দুস সাত্তার যন্ত্রণা ভুলে একদৃষ্টে রূপার মুখের দিকে তাকিয়েছিল। বাধার পর রূপা যখন তার মুখের দিকে তাকিয়ে সরওয়ার্দিতে যাওয়ার কথা বলল তখন। চোখে চোখ পড়ল। কয়েক সেকেন্ড কারো চোখের পলক পড়ল না।
প্রথমে রূপাই বলে উঠল, কই চলুন। বাঁধলেও রক্ত বন্ধ হয়নি। তারপর সায়মাকে দেখিয়ে বলল, আমার বোন। আমরা গাড়ি নিয়ে এসেছি, চলুন আমাদের সঙ্গে।
আব্দুস সাত্তার মৃদু হেসে বলল, ধন্যবাদ। আপনাদেরকে যেতে হবে না, আমি একাই যেতে পারব। তারপর সালাম দিয়ে হাঁটতে শুরু করল।
রূপা সায়মাকে আসতে বলে তার পাশে হাঁটতে হাঁটতে বলল, আমাদের জন্য আপনার এই অবস্থা। আপনাকে সাহায্য করা কী উচিত নয়?
বাম হাতটা ভীষণ যন্ত্রণা হচ্ছে। মনে হচ্ছে ছিঁড়ে পড়ে যাবে। দাঁতে দাঁত চেপে আব্দুস সাত্তার সহ্য করছে। তাই কিছু বলতে পারল না।