এরপরও ওমর মাকে দিয়ে ফুফু-ফুফার কাছে বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছিল। তারা জানতেন, রূপা কমিউনিষ্ট ছেলেকে বিয়ে করবে না। তাই না করে দেন।
ওমর ভাই আপুকে পছন্দ করে এবং বিয়ে করতে চায়, সায়মা জানে; কিন্তু আপু যে কেন তাকে পছন্দ করে না, তা জানে না। তাই রূপা যখন বলল, “ওমর ভাইকে টানছিস কেন? জানিস তো তাকে আমি ঘৃণা করি” তখন বলল, কেন যে। তুই তাকে সহ্য করতে পারিস না, তা বুঝি না। ওমর ভাইয়ের মতো হ্যান্ডসাম ও ভালো ছেলে আজকাল দেখাই যায় না।
রূপা বলল, তুই যে দেখছি কলেজে ঢুকতে না ঢুকতেই পেকে খয়ের হয়ে। গেছিস। ভার্সিটিতে ঢুকে কী হবি আল্লাহই জানে।
পেকে খয়ের হওয়া কি জিনিস জানি না। আমার যা মনে হয়েছে বলেছি।
ওমর ভাইকে যদি তোর এতই পছন্দ, তা হলে বল, আম্মুকে বলে এনগেজমেন্ট করে রাখতে বলি।
কথাটা মন্দ বলনি। তবে মাঝ পথে তিনটে বাধা। প্রথম বাধা হল, ওমর ভাই তোমাকে পছন্দ করে। দ্বিতীয় বাধা, সে আমাকে কিছুতেই বিয়ে করবে না। আর। তৃতীয় বাধা, যে তোমাকে পছন্দ করে তাকে বিয়ে করা আমার পক্ষে কিছুতেই সম্ভব। নয়। এসব কথা রেখে আমাকে সঙ্গে নেবে কিনা বল?
তোকে নিতে পারি। তারপর আব্দুস সাত্তারের সঙ্গে দেখা করার পদ্ধতিটা বলে। বলল, তোর বায়নোকুলারটা নিবি।
সায়মা বলল, বায়নোকুলার নেওয়ার দরকার কী? নামায পড়া হয়ে গেলে আমরা কাছে গিয়ে আলাপ করব। নামায পড়ে যখন, ফ্রড হতে পারে না। তা ছাড়া ঐ সময় ওখানে অনেক লোকজন বেড়াতে আসে। কিছু ক্ষতি করার সম্ভাবনা নেই।
তবু তুই নিবি।
ঠিক আছে, নেব।
.
প্রতিদিন বিকেলে শহরের বিভিন্ন এলাকা থেকে সংসদ ভবন চত্বরে লোকজন বেড়াতে আসে। তাদের মধ্যে প্রেমিক-প্রেমিকা বেশি। আবার অনেকে স্বপরিবারেও বেড়াতে আসে। গ্রামদেশ থেকেও অনেকে সংসদ ভবন দেখার জন্য আসে।
রূপা ও সায়মা বেশ কয়েকবার বেড়াতে এসেছে। আজ দু’বোন পৌঁনে পাঁচটায় এল। গাড়ি থেকে নেমে রূপা ড্রাইভারকে বলল, আমাদের সঙ্গে আসতে হবে না, গাড়িতেই থাকুন। তারপর তারা হেঁটে এসে সংসদ ভবনের সিঁড়িতে বসল।
এমন সময় তিনটে ছেলে তাদের সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় একজন দেখ দেখ, কি খাসা দু’টা মাল বলে দাঁড়িয়ে অন্য দু’জনকে ইশারা করে দেখাল।
অন্য দু’জন রূপা ও সায়মার দিকে তাকিয়ে মুগ্ধ হয়ে বলল, সত্যি দোস্ত, এরকম মাল জীবনে দেখি নি।
তাদের কথা শুনে দু’বোনই বিব্রত বোধ করল। সায়মা কিছু বলতে যাচ্ছিল, তার আগেই রূপা বলে উঠল, এই যে দ্র ঘরের ছেলেরা, মাল শব্দটার লটা বাদ দিলে কি হয়?
এরকম প্রশ্ন শুনে দু’জন লজ্জা পেলেও যে ছেলেটা প্রথমে মাল বলে ইশারা করেছিল, সে পেল না। বরং হাসিমুখে বলল, আমরা বাদ দিলে কী হবে? বাবারা তো ছাড়বে না।
এবার রূপা কিছু বলার আগে সায়মা রাগের সঙ্গে বলল, আপনাদের ঘরে কী মা বোন নেই?
ঘরে তো সবারই মা বোন আছে। বাইরের মেয়েদের মা বোন ভাবলে বিয়ে করব কাকে?
এই কথার উত্তর দিতে না পেরে দু’বোন যেমন অপমান বোধ করল, তেমনি লজ্জা পেয়ে মাথা নিচু করে নিল।
তাই দেখে ছেলেগুলো হো হো করে হেসে উঠল। তাদের মধ্যে সেই ছেলেটা বলল, এই যে ম্যাডামদ্বয়, ঢিল ছুঁড়লে যে পাটকেল খেতে হয়। তা বুঝি জানা ছিল না?
রূপা ও সায়মা আসার আগে আব্দুস সাত্তার এসে কিছুটা দূরে বসে ছিল। ওদেরকে আসতে দেখে। কাছাকাছি এসে এতক্ষণ ঘটনাটা দেখছিল। রূপা ও সায়মার অবস্থা বুঝতে পেরে ছেলেগুলোর কাছে এসে তাদেরকে উদ্দেশ্য করে বলল, বাইরের মেয়েদের মা বোনের মতো মনে না করলেও তাদেরকে সম্মানের চোখে দেখতে হয়।
ছেলেগুলো ভার্সিটির ছাত্র। নাম আজিজ, মহসিন ও ইউসুফ। তিন জনেই ধনী ও ভদ্র ঘরের ছেলে। চান্স পেয়ে একটু মজা করছিল। আজিজ ও ইউসুফ এক পার্টির সমর্থক হলেও পার্টির কাজ করে না। কিন্তু মহসীন করে। সে একই পার্টির। নেতার সহকারী। তাই তার কাছে সব সময় পিস্তল থাকে। বেশ একটু রাগী ধরণের ছেলে। দু’টো সুন্দরী ললনাকে বিব্রত অবস্থায় ফেলে বেশ আনন্দ উপভোগ করছিল। বাধা পড়তে রেগে গিয়ে আব্দুস সাত্তারের দিকে কটমট করে তাকিয়ে। বলল, আপনি আবার কোথা থেকে এলেন? ভালো চান তো কেটে পড়ন।
আজিজ ও ইউসুফের দিকে তাকিয়ে আব্দুস সাত্তার হাসিমুখে বলল, আপনারাই বলুন তো ভাই, আমি কী কোনো খারাপ কথা বলেছি?
তার কথার উত্তর না দিয়ে আজিজ মহসিনের একটা হাত ধরে বলল, বাদ দে দোস্ত, গ্যাঞ্জাম করে লাভ নেই, চল যাই।
ইউসুফ জানে মহসিন সামান্য কারণে রেগে যায় এবং প্রায় সময়ই কোনো না কোনো ঘটনা ঘটিয়ে বসে। তাই তার কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিস ফিস করে বলল, ছেলেটা হয়তো ওদের কাজিন। প্লীজ, কোনো সীন ক্রীয়েট করিস না। চারদিকে লোকজন রয়েছে, সমস্যা হয়ে যাবে।
মহসিন তাদের কথায় কান না দিয়ে আব্দুস সাত্তারের দিকে তাকিয়ে বলল, ওরা কী আপনার কাজিন? না ওদের কাছে নিজেকে হীরো প্রমাণ করার চেষ্টা করছেন?
আব্দুস সাত্তার মৃদু হেসে বলল, আপনার দু’টো অনুমানই ভুল। আপনাদের মতো আমিও এখানে বেড়াতে এসেছি।
তা হলে আর কথা না বাড়িয়ে কেটে পড়ন।
আব্দুস সাত্তার মুখে হাসি ধরে রেখেই বলল, আপনারা প্রথম, তারপর আমি।
রূপা দাঁড়িয়ে বলল, প্লীজ, আপনারা চুপ করুন, আমরাই চলে যাচ্ছি।