কথাটা রূপার মনে ধরল। বলল, তা হলে বলুন, কিভাবে আপনাকে দেখব?
আজ পাঁচটার সময় সংসদ ভবন চত্বরে একটা লাইট পোস্ট সামনে রেখে আমি আসরের নামায পড়ব। সে সময় আমাকে দেখতে পারেন। যদি আপনার। বায়নোকুলার থাকে, তা হলে কাছে না গিয়ে দূর থেকে খুব ভালোভাবে দেখতে পাবেন।
ঠিক আছে, তাই হবে। এবার রাখি তা হলে?
তার আগে বলুন, কেমন আছেন?
আলহামদুলিল্লাহ, ভালো আছি। আপনি কেমন আছেন?
তা জানার দরকার নেই।
কেন?
লোকে আপনজনের ভালো মন্দ জিজ্ঞেস করে। আমি তো আপনার তেমন কেউ নই।
কথাটা ঠিক বলেন নি। আপনজন না হলেও এমনি আলাপ পরিচয় থাকলে সবাই-ই ভালো মন্দ জিজ্ঞেস করে। আর এটা করাও ভদ্রতা। যেমন আপনি আমাকে জিজ্ঞেস করলেন।
আপনি অবশ্য ঠিক কথা বলেছেন। তবে আপনাকে আমি আপনজন ভাবি। তাই জিজ্ঞেস করেছি। যাই হোক, পাঁচটার সময় সংসদ ভবন চত্বরে নিশ্চয় আসছেন?
ইনশাআল্লাহ আসব। এবার রাখছি বলে রূপা সালাম বিনিময় করে লাইন কেটে দিল।
ফোন বাজার সাথে সাথে সায়মারও ঘুম ভেঙ্গে যায়। ঘড়ি দেখে বুঝতে পারে আব্দুস সাত্তার ফোন করেছে। আপুর ঘুম ভাঙ্গার জন্য অপেক্ষা করে। তারপর তাকে ফোন ধরে কথা বলতে দেখে এতক্ষণ ঘুমের ভান করে শুয়ে ছিল। লাইন কেটে দিতে জিজ্ঞেস করল, আব্দুস সাত্তার ফোন করেছিল, তাই না?
রূপা বলল, হ্যাঁ।
ইনশা আল্লাহ আসব বললি, নিশ্চয় তার সঙ্গে দেখা করতে যাবি?
হ্যাঁ যাব।
কখন? কোথায়?
আজ পঁচটার সময় সংসদ ভবন চত্বরে।
আমিও তোর সঙ্গে যাব।
কেন?
কেন আবার? সেদিন বললাম না, ছেলেটা ফ্রড হতে পারে? একা পেয়ে তোর ক্ষতি করতে পারে? তাই বলছিলাম কি, ওমর ভাইকেও আমাদের সঙ্গে নিলে ভালো হয়।
তুই যেতে চাচ্ছিস যাবি। ওমর ভাইকে টানছিস কেন? জানিস তো, তাকে আমি একদম সহ্য করতে পারি না।
ওমর ওদের মামাতো ভাই। তার বাবার আর্থিক অবস্থা ভালো। ধানমণ্ডিতে বাড়ি করেছেন। গাড়িও আছে। ওমর পল সাইন্সে মাষ্টার্স করেছে। সুস্বাস্থ্যের অধিকারী। দেখতেও খুব সুন্দর। কলেজ লাইফ থেকে কমিউনিষ্ট পার্টি করে। মাষ্টার্স করার পর পুরোপুরি রাজনীতিতে ঢুকে পড়েছে। আত্মিয়তার সুবাদে রূপাও সায়মার সঙ্গে ঘনিষ্টভাবে মেলামেশা করে। রূপা যে বছর অনার্সে ভর্তি হয়, সে। সময় ওমর একদিন তাকে বলল, তোকে আমার ভীষন পছন্দ। পড়াশোনা শেষ করে বিয়ে করব। তুই যেন এর মধ্যে আবার কারো প্রেমে-ট্রেমে পড়ে যাস নি।
ওমর ভাই যে কোনো অংশে তার অনুপযুক্ত নয়, তা রূপা জানে। শুধু সে রাজনীতি করে বলে তাকে অপছন্দ করে। তাই বলল, কারো প্রেমে-ট্রেমে পড়ব। কিনা জানি না; তবে তুমি যে কথা বললে, তা কখনই সম্ভব নয়।
ওমর বলল, কেন?
কোনো মুসলমান মেয়ে কমিউনিষ্ট ছেলেকে বিয়ে করতে পারে না। কমিউনিষ্টরা কুরআন-হাদিস বিশ্বাস করে না। তারা ধর্মকে অফিসের সঙ্গে তুলনা। করে। এক কথায় কমিউনিষ্টরা ইসলামের দুশমন।
তোর কথা ঠিক নয়। পৃথিবীর অনেক মুসলিম রাষ্ট্রে কমিউনিষ্ট পার্টি আছে।
দেখ ওমর ভাই, তুমি আমার থেকে অনেক জ্ঞানী। তোমার সঙ্গে যুক্তি তর্কে পারব না। তবু একটা কথা না বলে পারছি না। প্রত্যেক মানুষের নিজস্ব মতবাদ আছে। আর তা একের সঙ্গে অন্যের মিলে না। ফলে যে যার মতবাদ প্রচার ও প্রতিষ্ঠিত করতে গিয়ে সারা পৃথিবীতে যুদ্ধ ও হানা-হানিতে জড়িয়ে পড়ছে। এর কারণ কোনো মানুষের মতবাদ যত ভালো হোক না কেন, তা তার যুগের জন্য প্রযোজ্য হলেও সর্বযুগের জন্য হতে পারে না। কারণ মানুষ যত বড় জ্ঞানীই হোক, তার জ্ঞান সসীম। আর বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের একমাত্র সৃষ্টিকর্তা ও পালনকর্তা আল্লাহ। রাব্দুল আল-আমিন অসীম জ্ঞানের অধিকারী। তিনি তাঁর সৃষ্টিকূলের মঙ্গলের জন্য যে মতবাদ আমাদের নবী (দঃ) এর মারফত জানিয়েছেন, তা সর্বযুগের ও সর্বকালের জন্য প্রযোজ্য। যারা প্রকৃত মুসলমান, তারা তাঁর সেই মতবাদ ছাড়া মানুষের মতবাদ গ্রহণ করতে পারে না। যারা করে তারা মুসলমান নামের অযোগ্য। এবার নিশ্চয় বুঝতে পারছ, কেন আমি তোমার প্রস্তাব গ্রহণ করা সম্ভব নয় বললাম?
ওমর বলল, ধর্ম মানুষকে অলস ও অকর্মণ্য করে দেয়, সভ্যতাকে বাধা দেয়, সম্মুখে অগ্রসর হতে দেয় না, অন্ধকার যুগের দিকে পিছিয়ে নিয়ে যেতে চায়। তাই কমিউনিষ্টরা ধর্মকে স্বীকার করে না।
চুপ কর ওমর ভাই, চুপ কর। তাই যদি হত, তা হলে হযরত মুহাম্মদ (দঃ) যখন ইসলাম ধর্ম প্রচার করেন তখন সমগ্র আরব অজ্ঞানতার অন্ধকারে ডুবেছিল। মানুষ অন্যায়-অবিচার, অত্যাচার-ব্যভিচার, মদ-জুয়া, হিংসা-বিদ্বেষ ও হানা-হানিতে লিপ্ত ছিল। ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে তারা কি আরো অসভ্য ও বর্বর হয়েছিল? না সত্য জ্ঞানের আলোতে সভ্যতার চরম শিখরে উঠেছিল? তুমি বোধহয় ইসলামের ইতিহাস পড় নি অথবা পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের ইসলাম ধর্ম সম্পর্কে মণিষীদের উক্তিও পড় নি। যদি ঐ সব পড়তে ও জানতে, আরবের মরুভূমিতে যে জ্ঞানের আলোকবর্তিকা আল্লাহ পাক বপন করেছিলেন, মাত্র কয়েক বছরের মধ্যে। সেই আলো সারা পৃথিবীর অন্ধকার দূর করে আলোয় আলোকিত করেছে। জ্ঞানের স্বল্পতার কারণে এর বেশি কিছু তোমাকে বলতে পারলাম না। আমার কথা শুনে তুমি আবার মনে করো না, আমি তোমাকে ঘৃণা করি। তবে তোমার পার্টির মতবাদকে ঘৃণা করি।