তাসনিম বলল, তুমি দেখে নিও আম্মু। তুমি যা পার নি, ইনশাআল্লাহ আমি তা করেই ছাড়ব।
মুমীনা বেগম আবার দীর্ঘনিশ্বাস ফেলে বললেন, দোয়া করি, “আল্লাহ যেন তোর মনের আশা পূরণ করেন। তারপর আমি যাই, রান্নার ব্যবস্থা করতে হবে বলে চলে গেলেন।
সায়মা বলল, আব্লু বুঝি আব্দুস সাত্তার সাহেবকে খুব অপমান করে তাড়িয়ে দিয়েছে?
তাসনিম বলল, না, তা করে নি। হাজার হোক এককালের বন্ধুর ছেলে তো। পরিচয় জানার পর চুপচাপ ড্রইংরুম থেকে চলে এসেছে। আমি দরজার বাইরে ছিলাম। দেখে তাকে শুনিয়ে শুনিয়ে বলল, “ওকে চলে যেতে বল। ওর সঙ্গে তুই আর কখন মেলামেশা করবি না।”
এখন কী করবি ভেবেছিস?
ও চলে যাওয়ার সময় রাতে ফোন করবে বলেছে। কি বলে শুনি, তারপর চিন্তা করব।
.
রাত সাড়ে বারটায় আব্দুস সাত্তার ফোন করতে তাসনিম সালাম বিনিময় করে আব্ব যা কিছু বলেছে এবং সে কি বলেছে বলল।
সায়মা সবকিছু জেনেছে?
হ্যাঁ।
সে কিছু বলে নি?
প্রথমে তোমাকে ফ্রড বলেছিল এবং আমাকেও যা তা করে বলে তোমাকে ভুলে যেতে বলেছিল। তারপর যখন তোমার মহৎ উদ্দেশ্যের কথা বললাম তখন মাফ চেয়ে নিয়েছে।
তোমার আম্মু কিছু বলেন নি?
আম্মুও সায়মার মতো বলেছিল। পরে আমি যখন তোমার আমার গভীর সম্পর্কের কথাও আমাদের উদ্দেশ্যের কথা বললাম তখন শুধু রাজি হননি, দোয়াও করেছেন।
আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করে আব্দুস সাত্তার বলল, আম্মুর অসুখ, কাল সকালে দেশের বাড়িতে যাচ্ছি। কবে ফিরব আল্লাহকে মালুম। তুমি কোনো চিন্তা করো না। আব্বুকে রাজি করিয়ে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ফিরব। দোয়া করো, “আল্লাহ যেন আমার মনের বাসনা পূরণ করেন।”
তাতো করবই। তুমি কিন্তু প্রতিদিন ফোন করে খালাআম্মার খবর জানাবে।
আম্মু নানির বাড়িতে গিয়ে অসুখে পড়েছে। ওখানে ফোন নেই। তবু খবর দেওয়ার চেষ্টা করব।
ফুফুআম্মা উম্মে কুলসুমও কী যাচ্ছেন?
ফুফুআম্মা আমার সঙ্গে যাচ্ছেন। উম্মে কুলসুমের স্বামী আব্দুল মজিদ এখন রাজশাহী মেডিকেলে আছে। ওরা ওখান থেকে যাবে।
মনে হচ্ছে, খালাআম্মার অবস্থা সিরিয়াস। নিলফামারী সদর হাসপাতালে বা ঢাকায় নিয়ে এসে চিকিৎসা করালে হয় না?
সে রকম বুঝলে নিশ্চয় তাই করব। এবার রাখি, খুব ভোরেই রওয়ানা দেব। কিছু কাজ বাকি আছে।
ঠিক আছে, রাখ বলে তাসনিম সালাম বিনিময় করে লাইন কেটে দিল।
ফোনে আব্দুস সাত্তার কি বলে জানার জন্য সায়মা আজ জেগেছিল। তাসনিম রিসিভার রাখার পর বলল, খালাআম্মার চিকিৎসার ব্যাপারে কী যেন বললি?
হ্যাঁ, ওর আম্মুর খুব অসুখ। কাল ফুফুআম্মাকে নিয়ে দেশে যাচ্ছে। নে এবার শুয়ে পড়, একটা বাজে।
১১. প্রায় পনের ষোল দিন হয়ে গেল
প্রায় পনের ষোল দিন হয়ে গেল আব্দুস সাত্তারের কোনো খোঁজ নেই। তাসনিম প্রতিদিন তার বাসায় ফোন করে। কিন্তু কাজের বুয়া জমিলা কিছু বলতে পারে না। আজ মাগরিবের নামাযের পর নসিম হেযাজীর “খুন রাঙা পথ” পড়ছিল।
কাজের বুয়া এসে বলল, আপা, আপনারে সাহেব বোলাইছেন।
তাসনিম বলল, তুমি যাও, আসছি। তারপর বইটা বন্ধ করে যাওয়ার সময় সায়মাকে আব্বর রুমের দিকে যেতে দেখে জিজ্ঞেস করল,কী রে, তোকেও ডেকেছে না কী?
তাসনিম বেডরুমে পড়ছিল, আর সায়মা রিডিংরুমে। কাজের বুয়ার মুখে আবু ডাকছে শুনে সায়মাও যাচ্ছিল। আপুর কথা শুনে বুঝতে পারল, তাকেও ডেকেছে। বলল, হ্যাঁ। জিজ্ঞেস করল, কেন ডেকেছে কিছু বুঝতে পারলি?
তাসনিম যেতে যেতে বলল, দু’জনকে একসঙ্গে যখন ডেকেছে তখন নিশ্চয় কোনো গুরুত্বপূর্ণ কারণ আছে।
সায়মা বলল, আমারও তাই মনে হচ্ছে। তারপর আব্বর রুমে ঢুকে দেখল, আম্মুও আছে।
তাদের দেখে রোকন উদ্দিন সাহেব হাসিমুখে বললেন, আয় বস। বসার পর তাসনিমকে উদ্দেশ্য করে বললেন, ভেবেছিলাম, তোকে ওমরের হাতে তুলে দেব। তোর মায়ের মুখে শুনলাম, তুই তাকে পছন্দ করিস না। তাই একটা ভালো ছেলের খোঁজে ছিলাম। আল্লাহ মিলিয়ে দিয়েছেন। ছেলের মা বাবা আমেরিকায়। সেটেল্ড। সেখানে তাদের বাড়ি, গাড়ি ও ব্যবসা আছে। সবাই ওখানকার নাগরিক। তাদের একমাত্র ছেলে আবু সাঈদ ডাক্তারী পাশ করে ওখানকার হাসপাতালে জয়েন করেছে। ওরা সবাই ধার্মিক। এরকম ছেলের সঙ্গে বিয়ে হলে তুই সুখী হবি। এখানে তাদের বাড়ি মাগুরা। দিন দশেক হল মা-বাবা ছেলেকে নিয়ে দেশে এসেছেন, ধার্মিক বাংলাদেশী মেয়ে বৌ করে নিয়ে যাবেন বলে। আমার এক বন্ধুর বাড়ি মাগুরায় ওদের গ্রামে। সে সম্বন্ধটা এনেছে। ছেলে ও তার মা বাবা কাল সকালে তোকে দেখতে আসবেন। পছন্দ হলে দু’চার দিনের মধ্যে ছেলের বিয়ে দেবেন। মাসখানেক পর বৌ নিয়ে আমেরিকায় চলে যাবেন। কাল তোরা কোথাও যাবি না, বাসায় থাকবি।
মুমীনা বেগম বললেন, অন্যের কথায় বিশ্বাস করে কিছু করা উচিত নয়। বিশেষ করে বিয়ে শাদীর ব্যাপারে। তুমি ভালো করে খোঁজ খবর নিয়েছ?
তা আর নিই নি? আমার চাচাত ভাই আব্দুস সামাদকে তো তুমি চেন। বছর দুই হল সে আমেরিকা গেছে। ওদের কাছাকাছি থাকে। বন্ধু বলার পর তাকে ফোন করেছিলাম। যা বলল, বন্ধুর কথার সঙ্গে সব মিলে গেছে। আরো বলল, আজকালের যুগে এত ভালো ঘর ও ভালো ছেলে লাখে একটা আছে কিনা সন্দেহ। তুমি দেখো তাসনিমের মা, আমাদের তাসনিম সুখে থাকবে।