আমার জন্য কোনো দুশ্চিন্তা করো না। আন্ধু আমাকে ভীষণ ভালবাসেন। আমার কথা না রেখে পারবেন না।
দোয়া করি আল্লাহ যেন তাই করেন। তবে কী জান, অধিকাংশ মা বাবা তাদের পছন্দমতো ছেলেমেয়ের বিয়ে দিতে চান। ছেলেমেয়েরা নিজের পছন্দ মতো বিয়ে করবে, এটা তারা পছন্দ করেন না। তার উপর যদি ছেলে বা মেয়ে শত্রুপক্ষের হয় অথবা তাদের মনের মতো না হয়। আমার তো মনে হচ্ছে, তুমি যত সহজ ভাবছ, ততটা সহজ নয়।
সহজ কঠিন যাই হোক না কেন, আব্বুকে যদি একান্ত রাজি করাতে না পারি, আম্মুকে পারবই। আর কাউকেই যদি না পারি, তোমার কাছে চলে আসব।
ওটা নিকৃষ্ট পথ। যারা কাপুরুষ তারাই ঐ পথ বেছে নেয়। ঐসব কাপুরুষের মধ্যে এমনও অনেকে আছে, যারা নাকি প্রেমাস্পদকে না পেয়ে আত্মহত্যা করে। ইসলাম এই পথ পরিহার করতে শিখিয়েছে। মা-বাবার মনে কষ্ট দিতে আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (দঃ) নিষেধ করেছেন। আমরা মুসলমান হয়ে মা-বাবার মনে কষ্ট দিয়ে কিছু করব না। আমরা আধুনিক শিক্ষার যেমন শিক্ষিত, তেমন কুরআন-হাদিসের জ্ঞানও আমাদের আছে। সেইসব জ্ঞানের দ্বারা যুক্তির মাধ্যমে আমাদের মা-বাবাকে রাজি করাব। তারপর কি কি যুক্তি দেখাবে তা আলোচনা করে আব্দুস সাত্তার মুখে হাসি ফুটিয়ে জিজ্ঞেস করল, কী? পারবে না?
তাসনিমও মুখে হাসি ফুটিয়ে বলল, ইনশাআল্লাহ পারব।
এমন সময় রাইসা বেগম দু’টো আইসক্রীম নিয়ে এসে বললেন, খুব গরম পড়েছে, খাও। আধঘণ্টা পরে কফি দেব। তারপর তাসনিমকে জিজ্ঞেস করলেন, বাসায় ফোন করেছ মা?
জ্বি, করেছি।
তোমরা গল্প কর, যাই দেখি, জমিলা আবার আরেক করতে এক করে বসবে।
রাইসা বেগম চলে যাওয়ার পর তাসনিম বলল, তোমার আম্মুর ও ফুফুআম্মার মনের ইচ্ছা আমি বুঝতে পেরেছি।
আব্দুস সাত্তার বলল, ওরাও প্রথমে রাজি ছিলেন না। যখন বললাম, তাসনিম আমার দীলের ধড়কন। দীলের ধড়কন থেমে গেলে যেমন মানুষ বাঁচে না। তেমনি ওকে না পেলে আমার দীলের ধড়কনও বন্ধ হয়ে যাবে। ব্যাস, এই কথা শুনে রাজি হয়ে গেলেন। অবশ্য সেইসাথে তোমার আমার আব্বুর পূর্ব সম্পর্ক ফিরিয়ে আনার সিদ্ধান্তটাও বলেছি। তুমিও আমার পদ্ধতিটা টুকলিফাই করে তোমার আম্মুকে রাজি করাতে পার। তারপর আব্বুকে রাজি করাবার পদ্ধতি প্রয়োগ করবে।
তাসনিম হেসে উঠে বলল, টুকলিফাই শেখানোর জন্য ধন্যবাদ। বিকেলে তাসনিমকে গাড়িতে তুলে দেওয়ার সময় আব্দুস সাত্তার বলল, তোমাকে কাল আসতে হবে না। আমি সকাল নটায় যাব।
১০. সকালে নাস্তা খাওয়ার সময়
সকালে নাস্তা খাওয়ার সময় রোকন উদ্দিন সাহেব বড় মেয়েকে বললেন, ছেলেটাকে আজ নিয়ে আসবি বলেছিলি না?
তাসনিম বলল, কাল ওর সঙ্গে দেখা হয়েছিল, নিজেই আসবে বলেছেন। কিছুক্ষণের মধ্যে হয়তো এসে পড়বেন।
নাস্তা খেয়ে তাসনিম দোতলার বারান্দায় দাঁড়িয়ে গেটের দিকে তাকিয়ে রইল। প্রায় দশ মিনিট পর আব্দুস সাত্তারের গাড়ি এসে গেটের কাছে দাঁড়াতে দেখে নেমে এল।
তাসনিম আগেই দারোয়ানকে আব্দুস সাত্তারের নাম ও গাড়ির নাম্বার বলে গেট খুলে দিতে বলেছিল। আব্দুস সাত্তার গাড়ি নিয়ে ভিতরে ঢুকল।
রোকন উদ্দিন সাহেব ড্রইংরুমে পেপার পড়ছিলেন। তাসনিম আব্দুস সাত্তারকে নিয়ে এসে বলল, আব্ব, উনি এসেছেন।
রোকন উদ্দিন মুখ তুলে তাকাতে আব্দুস সাত্তার সালাম দিল।
সালামের উত্তর দিয়ে রোকন উদ্দিন সাহেব বসতে বললেন।
তাসনিম আব্বুকে বলল, তুমি ওর সঙ্গে কথা বল, আসছি।
আব্দুস সাত্তারের সুঠাম দেহ ও চেহারায় আভিজাত্যের ছাপ দেখে রোকন উদ্দিন সাহেব খুশী হলেন। বললেন, আমার মেয়েরা তোমার অনেক গুণগান। করে। ওদেরকে একদিন বাজে ছেলেদের খপ্পর থেকে রক্ষা করতে গিয়ে গুলি খেয়েছ, তাও বলেছে। তুমি করে বলছি বলে কিছু মনে করনি তো?
জ্বি না, এটাই তো স্বাভাবিক।
তোমার নাম তো আব্দুস সাত্তার?
জ্বি।
নামের অর্থ জান।
জ্বি, গোপনকারীর বান্দা বা দাস।
রেজাল্ট বেরোবার পর কী করবে কিছু ভেবেছ?
আমাদের একটা ব্যবসা আছে। পরীক্ষার পর থেকে সেটাই দেখাশোনা করছি। ভবিষ্যতে……।
তোমার বাবার ব্যবসা নিশ্চয়?
জ্বি না। উনি গ্রামের এক কলেজে আছেন।
তাসনিমের সঙ্গে কতদিনের পরিচয়?
তা প্রায় আড়াই বছর।
হোম ডিস্ট্রিক্ট কোথায়?
নিলফামারী।
রোকন উদ্দিন সাহেব কুচকে জিজ্ঞেস করলেন, তোমার বাবার নাম?
আব্দুল হামিদ।
রোকন উদ্দিন-চমকে উঠে গম্ভীর হয়ে কিছুক্ষণ চুপ করে রইলেন। তারপর কিছু না বলে উঠে চলে গেলেন।
তাসনিম ড্রইংরুম থেকে ভিতরে এসে মাকে আব্দুস সাত্তারের আসার কথা জানিয়ে নাস্তা পাঠাবার কথা বলল। তারপর ফিরে এসে এতক্ষণ দরজার পর্দা ফাঁক করে সবকিছু শুনছিল ও দেখছিল। আব্ব দরজার বাইরে এলে জানা সত্ত্বেও বলল, চলে এলে যে?
রোকন উদ্দিন সাহেব মেয়ের দিকে কঠিন দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে বললেন, ওকে চলে যেতে বলে আমার কাছে আয়। তারপর হনহন করে চলে গেলেন।
তাসনিম ভিতরে এসে ছলছল চোখে আব্দুস সাত্তারের দিকে তাকিয়ে রইল।
আব্দুস সাত্তার এগিয়ে এসে বলল, এত সামান্য ঝড় সহ্য করতে পারছ না? সবে তো শুরু, তারপর যখন দেড়শ দু’শ মাইল বেগে ঝড়ের তাণ্ডব শুরু হবে তখন কী করবে? রাতে ফোন করব, এখন আসি। তারপর আল্লাহ হাফেজ বলে। চলে গেল।