সরি আপু, আমার ভুল হয়ে গেছে। আর কখনও বলব না।
আরো একমাস পর রূপার পরীক্ষা শুরু হল। শেষ হতে প্রায় দু’মাস সময় লাগল। যেদিন শেষ হল সেদিন রাতে দশটার সময় খেয়ে এসে ঘুমিয়ে পড়ল। পরীক্ষায় ভালো রেজাল্ট করার জন্য দৈনিক প্রায় চৌদ্দ পনের ঘণ্টা পড়াশোনা করেছে। তাই বিছানায় যাওয়া মাত্র ঘুমিয়ে পড়েছে।
সায়মার দু’মাস পরে পরীক্ষা। তাই সে রাত দেড়টা দুটো পর্যন্ত পড়ে। আজও পড়ছিল। হঠাৎ এতদিন পর ফোন বেজে উঠতে ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখল, সাড়ে। বারটা। ভাবল, নিশ্চয় আব্দুস সাত্তার ফোন করেছে। সেটটা রূপার খাটের মাথার দিকের টেবিলের উপর। ফোন বাজার শব্দে আপুর ঘুম ভাঙার জন্য অপেক্ষা করতে লাগল। পাঁচ ছ’বার রিং হওয়ার পরও যখন তার ঘুম ভাঙল না তখন উঠে এসে রিসিভার তুলে বলল, হ্যালো, কে বলছেন?
আমি আব্দুস সাত্তার। তারপর সালাম দিয়ে বলল, আপনি সায়মা তাই না?
সালামের উত্তর দিয়ে সায়মা বলল, হ্যাঁ।
আপনার আপুকে একটু দিন তো?
এতদিন কোথায় ছিলেন বিদ্রুপকণ্ঠে বলতে গিয়েও সায়মা সামলে নিল। বলল, আপু ঘুমাচ্ছে, ডাকা যাবে না।
কেন?
পরীক্ষা চলছিল, দিন রাত পড়াশোনা করেছে। আজ শেষ পরীক্ষা ছিল। তাই দশটায় খেয়ে এসে ঘুমিয়েছে। কাল সকালে না হয় ফোন করুন। আমি আপুকে আপনার ফোন করার কথা বলে রাখব।
ঠিক আছে, তাই করব। তারপর জিজ্ঞেস করল, আপনারা নিশ্চয় ভালো আছেন?
হ্যাঁ ভালো।
আপনার তো সামনে পরীক্ষা, পড়ছিলেন বুঝি?
হ্যাঁ তাই।
সকালে ক’টার সময় ফোন করলে আপনার আপুকে পাব?
সাতটা থেকে আটটার মধ্যে। পরে হয়তো আপু কোথাও বেরিয়ে যেতে পারে।
এবার রাখছি তা হলে, বলে আব্দুস সাত্তার সালাম বিনিময় করে লাইন কেটে দিল।
সায়মা যত রাত জেগে পড়ুক না কেন? ফজরের নামাযের সময় ঘুম ভাঙবেই। নামায পড়ে ও কুরআন তেলাওয়াত করে ঘণ্টাখানেক ঘুমাবে। তারপর উঠে নাস্ত। খেয়ে পড়তে বসবে। এটাই তার প্রতিদিনের রুটিন।
সূর্য ওঠার আধঘণ্টা আগে ওঠা রূপার বরাবরের অভ্যাস। ফজরের নামায পড়ে পনের মিনিট কুরআন তেলাওয়াত করবে। তারপর আধঘণ্টা বাগানে হাঁটবে। কিন্তু আজ ফজরের নামায পড়ে কুরআন তেলাওয়াত করার সময় ঘুমে চোখ বুজে আসছিল বলে তেলাওয়াত বন্ধ করে ঘুমিয়ে পড়েছিল। ফোন বাজার শব্দে জেগে গেল। হাত বাড়িয়ে রিসিভার কানের কাছে নিয়ে ঘুম জড়ান কণ্ঠে সালাম দিয়ে বলল, হ্যালো, কাকে চান?
সালামের উত্তর দিয়ে আব্দুস সাত্তার বলল, যাকে চাই তিনিই ফোন ধরেছেন। মনে হচ্ছে, আজ বাগানে হাঁটতে না গিয়ে ঘুমিয়ে পড়েছিলেন। ঘুম ভাঙিয়ে নিশ্চয় অন্যায় করে ফেললাম। সেজন্য ক্ষমা চাইছি।
আব্দুস সাত্তারের গলা বুঝতে পেরে রূপার ঘুমের ভাবটা দ্রুত কেটে গেল। তখন তার তনুমনে আনন্দের শিহরণ বইতে শুরু করল। ধড়ফড় করে উঠে বসে। কিছু বলতে গিয়েও পারল না। অনেকক্ষণ চুপ করে রইল।
কী হল? ক্ষমা চাইলাম, তবু চুপ করে আছেন যে?
কাল ফোন করার কথা বলে ছ’মাস ডুব মেরে ছিলেন কেন?
সেজন্যও ক্ষমা চাইছি।
ডুব মারার কারণ আগে বলুন। তারপর ক্ষমা করার কথা চিন্তা করব।
প্রথম কারণ, ঐদিন ফোনে যা কিছু বলেছি, আম্মু সব শুনে জিজ্ঞেস করলেন, মেয়েটা কে? বললাম, ঐ মেয়েকে আমি ভালবাসি। আম্মু পরীক্ষার আগে আপনাকে ফোন না করার ওয়াদা করিয়েছিলেন। দ্বিতীয় কারণ, আমার ও আপনার পরীক্ষার ব্যাপার ছিল। তৃতীয় কারণ, পরীক্ষার পরের দিন আমাকে নিয়ে আম্মু তার বাপের বাড়ি গিয়েছিলেন। সেখানে ফোন নেই। এমন কি আট দশ মাইলের মধ্যেও নেই। গতকাল ফিরে রাতে ফোন করেছিলাম। সায়মা ফোন ধরে বললেন, “আপনি ঘুমাচ্ছেন, জাগান যাবে না। আগামীকাল সকালে ফোন করবেন। আমি আপাকে আপনার কথা বলে রাখব?” তিনি কি বলেন নি?
না। হয়তো জানাতে ভুলে গেছে অথবা সময় পাই নি।
উনি এখন কোথায়?
ঘুমাচ্ছ।
এবার তা হলে বলুন ক্ষমা করেছেন?
আপনি দু’টা ব্যাপারে ক্ষমা চেয়েছেন। প্রথমটা ক্ষমা করলাম। দ্বিতীয়টার ব্যাপারে সামনা-সামনি না হলে ক্ষমা করব না। বলুন, কখন আমাদের সাক্ষাৎ হচ্ছে?
তা বলব, তবে তার আগে বলতে হবে, “আমাকে ভালবাসেন।”
বোকার মতো কথা বলছেন কেন? আপনি এতকিছু জানেন, আর একথা জানেন, ভালবাসা মনের ব্যাপার? আপনাকে কখনও দেখি নি। দেখার পর যদি মনে ভালবাসা জন্মায় অথবা আপনার আচার-আচরণ ভালো মনে হয়, তখন না হয় বলতে পারি? তা ছাড়া শুধু মুখে ভালবাসি বললে তো আর সত্যিকার ভালবাসা হয় না।
আপনি ঠিক কথা বলেছেন। তবে কী জানেন? আমার খুব ভয় হয়, আমাকে দেখে যদি আপনার মনে ভালবাসা না জন্মায়? তখন হয়তো নিজেকে সামলাতে পারব না। কিছু অঘটন ঘটিয়ে ফেলতে পারি।
তার কথা শুনে রূপা একটু ঘাবড়ে গিয়ে চিন্তা করল, বড় লোকের বখে যাওয়া ছেলে নয়তো? যদি সত্যিই তাই হয় তা হলে তার সামনে যাওয়া বোধহয় ঠিক হবে না। কি করা উচিত বেশ কিছুক্ষণ চুপ করে চিন্তা করতে লাগল।
কী ব্যাপার, চুপ করে আছেন কেন? আমার কথা শুনে খুব ভয় পেয়েছেন, তাই?
রূপা আমতা আমতা করে বলল, না, মানে, ভয় পাব কেন? ||||||
|||| আব্দুস সাত্তার হেসে উঠে বলল, আমি সিওর, আমার কথা শুনে আপনি ভয় পেয়েছেন। শুনুন, আমাকে দেখার পর আপনার মনে ভালবাসা জন্মান অথবা না জন্মান আল্লাহ পাকের মর্জি। এতে আপনার কোনো দোষ হবে কেন? অঘটন ঘটার কথা যে বললাম, তা আমার ব্যক্তিগত ব্যাপার। তবে বিশ্বাস রাখতে পারেন, আপনার এতটুকু ক্ষতি করব না। একটা কথা জেনে রাখুন, কেউ কাউকে মন প্রাণ উজাড় করে ভালবাসলে একবিন্দু পরিমাণ ক্ষতি তার করতে পারে না। যে করে, সে ভালবাসার মর্ম বোঝে না অথবা সত্যিকার ভালবাসা কাকে বলে জানে না। ঠিক আছে, আপাততঃ সামনা-সামনি হওয়ার দরকার নেই। আরো কিছুদিন যাক। তারপর আপনার মন যখন চাইবে তখন সামনা-সামনি হওয়া যাবে। তবে ইচ্ছা করলে এখন আমাকে দূর থেকে দেখতে পারেন। কাছে গিয়ে আলাপ করার প্রয়োজন নেই।