ও আসতে চেয়েছিল, না করে দিয়েছি।
আপনি ছোট ভাইয়ার সাথে কথা বলুন, তারপর আসছি বলে উম্মে কুলসুম বেরিয়ে বারান্দার রেলিং এর কাছে এসে গেটের দিকে তাকিয়ে রইল।
কিছুক্ষণ পরে তাদের গাড়ি গেটের কাছে দাঁড়াতে দেখে তাড়াতাড়ি নেমে এল। ততক্ষণে আব্দুল মজিদ ও উম্মে হাফসা নেমে দাঁড়িয়েছেন। উম্মে কুলসুম সালাম দিল।
সালামের উত্তর দিয়ে আব্দুল মজিদ জিজ্ঞেস করল, ছোট ভাইয়া কেমন আছে?
আল্লাহর রহমতে ভালো। তারপর স্বামীকে চোখ টিপে বলল, তুমি ডিউটিতে যাও, ফেরার সময় আসবে। আমি আম্মুকে নিয়ে যাচ্ছি।
আব্দুল মজিদ বুঝতে পারল, তাকে এখন যেতে নিষেধ করছে। বলল, ঠিক আছে; তা হলে আসি। তারপর গাড়িতে উঠে বলল, গাড়ি পাঠিয়ে দিচ্ছি, তুমি বাসায় গিয়ে গোসল করে খেয়ে ফুফুআম্মাকে নিয়ে এসে আম্মুকে পাঠিয়ে দিও।
গাড়ি ছেড়ে দেওয়ার পর উম্মে কুলসুম উম্মে হাফসাকে বলল, আম্মু চল। বারান্দায় এসে বলল, আমরা কিছুক্ষণ রিসেপসন রুমে বসি। ভাইয়ার সঙ্গে একজন দেখা করতে এসেছে।
রিসেপসন রূমে বসার পর উম্মে হাফসা জিজ্ঞেস করলেন, কে এসেছে চিনিস?
হ্যাঁ চিনি। কাল বিকেলে যে দুটো মেয়ে এসেছিল, তাদের বড় জন। নাম তাসনিম। জান আম্মু, ও না এক মন্ত্রীর মেয়ে।
উম্মে হাফসা অবাক হয়ে বললেন, তাই না কী?
হ্যাঁ আম্মু। ওর বাবার নাম বললে তুমিও চিনবে। আমাদের পাশের গ্রামের রোকন উদ্দিন।
উম্মে হাফসা চমকে উঠে গম্ভীর হয়ে বললেন, তার মেয়ের সঙ্গে আব্দুস সাত্তারের কি এমন সম্পর্ক যে, সাত সকালে দেখা করতে এসেছে?
ছোট ভাইয়া ওকে ভালবাসে। ও-ও ছোট ভাইয়াকে ভালবাসে।
উম্মে হাফসা আবার চমকে উঠে বললেন, কী বললি?
আম্মুর দু’বার চমকে উঠার কারণ উম্মে কুলসুম জানে। তাই দেখেও না দেখার ভান করে বলল, তুমি তো কাল তাসনিমকে ভালো করে দেখ নি, তার। সাথে আলাপও কর নি। আজ দেখলে ও আলাপ করলে বুঝতে পারবে, মেয়েটা কি দারুণ সুন্দরী আর ব্যবহারও কত সুন্দর। মন্ত্রীর মেয়ে হলেও এতটুকু অহঙ্কার। নেই। একদম সহজ সরল। ওকে তোমার পছন্দ হবেই।
উম্মে হাফসা রেগে উঠে বললেন, চুপ কর। মন্ত্রীর মেয়ে হোক, আর যতই রূপবতী-গুণবতী হোক, তোর আব্ব কিছুতেই বৌ করবে না। আর মেয়ের। আব্বাও আব্দুস সাত্তারকে জামাই করবেন না। বরং ওদের সম্পর্কের কথা জানতে পারলে মেয়েকে কি করবেন জানি না, আব্দুস সাত্তারকে বিপদে ফেলার চেষ্টা করবেন। ভেবে খুব আশ্চর্য হচ্ছি, সবকিছু জেনেও আব্দুস সাত্তার ঐ পথে পা বাড়াল কেন?
আমিও সবকিছু জানি আম্মু।
কার কাছে জেনেছিস?
ছোট ভাইয়ার কাছে।
তবু তুই মেয়েটার গুণগান করছিস? আব্দুস সাত্তারকে বাধা দিস নি কেন?
বাধা দিয়েছি, কাজ হয় নি। বলল, সে নিজেও তাসনিমকে ভুলে যেতে চেষ্টা করেও সফল হয় নি।
আব্দুস সাত্তার জেনে শুনে একি আগুন নিয়ে খেলছে? মেয়ের বাবা ওদের সম্পর্কের কথা জানেন?
না।
জানলে যে কি হবে আল্লাহই জানে। আচ্ছা, মেয়েটা কি তোদের আব্বুর পরিচয় জানে?
ছোট ভাইয়া তাকে এখনও পরিচয় বলে নি।
আমার খুব ভয় করছে। আল্লাহ বড় ছেলেকে দুনিয়া থেকে তুলে নিলেন। আব্দুস সাত্তার কত বড় বিপদ থেকে মরতে মরতে বাঁচল। এখন আবার আর এক বিপদের কথা শোনালি। আল্লাহ তকদিরে কি রেখেছেন কি জানি। কথা শেষ করে আঁচলে চোখ মুছলেন।
তুমি কোনো দুশ্চিন্তা করো না তো আম্মু। মেয়ে যদি ভাইয়াকে সাপোর্ট করে, তা হলে মন্ত্রী হোক আর যেই হোক, ছোট ভাইয়ার কোনো ক্ষতি করতে পারবেন না। ছোট ভাইয়াকে অত কাঁচা ছেলে মনে করো না, সে জেনে শুনেই এই পথে পা বাড়িয়েছে। আমি যখন ঐসব বলে বাধা দিয়েছিলাম তখন বলল, তাসনিমকে বিয়ে করে আব্বুর সঙ্গে ওর আব্বুর পুরানো বন্ধুত্ব ফিরিয়ে আনবে।
উম্মে হাফসা দীর্ঘনিশ্বাস ফেলে বললেন, তা যদি করতে পারে, তা হলে তোর আব্বুর থেকে আর কেউ বেশি খুশী হবে না। দোয়া করি, “আল্লাহ যেন ওর মনের উদ্দেশ্য পূরণ করেন। তারপর বললেন, চলতো দেখি মেয়েটার সঙ্গে আলাপ করি।”
কেবিনের দরজার কাছে এসে পর্দার বাইরে থেকে উম্মে কুলসুম বলল, ছোট ভাইয়া, আম্মু এসেছে।
তাসনিম তখন বেডে বসে আব্দুস সাত্তারের বুকে হাত রেখে বলছিল, আল্লাহ কবে এখানে মাথা রাখার সুযোগ দেবেন, তা তিনিই জানেন। উম্মে কুলসুমের গলা পেয়ে তাড়াতাড়ি হাত সরিয়ে দাঁড়িয়ে পড়ল।
আব্দুস সাত্তার বলল, বাইরে রয়েছিস কেন? আম্মুকে নিয়ে ভিতরে আসবি
ওরা ঢুকতেই তাসনিম সালাম দিয়ে এগিয়ে এসে উম্মে হাফসাকে কদমবুসি করল।
উম্মে হাফসা থাক মা থাক বলে তার মাথায় চুমো খেয়ে দোয়া করলেন, “আল্লাহ তোমাকে সুখী করুক, হায়াতে তৈয়েবা দিক।” তারপর চিবুক ধরে কয়েক সেকেন্ড মুখের দিকে তাকিয়ে হাসিমুখে সুবহান আল্লাহ, মাশাআল্লাহ বলে বললেন, বাহ! কী সুন্দর চেহারা? যেমন চোখ মুখ, তেমনি নাক। গায়ের রংও দুধে আলতা। যে বাড়ির বৌ হয়ে যাবে, তারা খুব ভাগ্যবান। দাঁড়িয়ে আছ কেন মা, বস। তারপর ছেলের বেডের কাছে এসে বললেন, কেমন আছিস বাবা?
আব্দুস সাত্তার বলল, আল্লাহর রহমতে ও তোমার দোয়ার বরকতে গতকালের চেয়ে অনেকটা ভালো। একটু আগে ডাক্তার এসেছিলেন। বললেন, আর কোনো ভয় নেই।
আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করে উম্মে হাফসা বললেন, মেয়েটা দাঁড়িয়ে আছে। আমি ওকে নিয়ে বসে একটু আলাপ করি। এত সুন্দর মেয়েকে কাল আসতে না আসতেই তুই তাড়িয়ে দিয়ে ভালো করিস নি। তারপর তাসনিমের একটা হাত ধরে বললেন, এস মা, আমরা আলাপ করি। বসার পর তাসনিমকে বললেন, তুমি মন্ত্রীর মেয়ে উম্মে কুলসুম বলেছে। নিশ্চয় লেখাপড়া করছ?