হিকমত টিকমত বুঝিও না, আর জানিও না। আমার প্রশ্নের উত্তর দেবেন। কিনা বলুন?
বললাম তো, উত্তর জানা থাকলে নিশ্চয় দেব।
আপনার নাম বলুন।
আব্দুস সাত্তার।
বাবার নাম?
বলা যাবে না।
ঠিকানা?
তাও বলা যাবে না।
কেন?
বললাম বলা যাবে না, তবু জিজ্ঞেস করছেন কেন?
আপনি কী করেন?
দু’তিন মাস পরে ইসলামিক স্টাডিজে মাস্টার্স দেব।
আপনার বাবা কী করেন?
একটা বেসরকারী কলেজে অধ্যাপনা করেন।
আপনি যখন ইসলামিক স্টাডিজে মাস্টার্স করছেন তখন ধর্ম সম্পর্কে নিশ্চয় অনেক জ্ঞান রাখেন?
তাতো কিছু রাখি।
তা হলে প্রতি রাতে একজন গায়ের মহররম মেয়েকে ফোন করা যে ইসলামের পরিপন্থী, তা তো জানার কথা। তবু করেন কেন?
আপনাকে প্রায় দু’বছর আগে থেকে ভালবাসি এবং সিদ্ধান্ত নিয়েছি, বিয়ে। করব। জীবন সাথী পছন্দ করা ইসলামের পরিপন্থী নয়।
এই আইন শুধু ছেলেদের বেলায়, না মেয়েদের বেলায়ও।
উভয়েরই।
আমি তো আপনাকে দেখি নি, চিনি নি, আপনাকে যদি আমার পছন্দ না হয়?
ছেলেরা যেসব কারণে মেয়েদের পছন্দ করে, সে সব আপনার মধ্যে আছে। তাই আমি যেমন আপনাকে পছন্দ করেছি, তেমনি মেয়েরা যেসব কারণে ছেলেদের পছন্দ করে, সেসব আমার মধ্যে আছে। তাই আমি হান্ড্রেডপার্সেন্ট সিওর, আমাকে দেখলে আপনি অপছন্দ করবেন না।
আপনার কথা সত্য হলেও সবক্ষেত্রে নয়। যেমন অনেক সুন্দরী মেয়ে অসুন্দর ছেলেকে পছন্দ করে। আবার অনেক সুন্দর ছেলে অসুন্দর মেয়েকে পছন্দ করে।
আপনার কথা অস্বীকার করব না। আমি বাস্তব দৃষ্টিভঙ্গিতে বলেছি। আর আপনি যা বললেন, তা ব্যতিক্রম।
আপনি আমাকে দেখে শুনে ও আমাদের সবকিছু জেনে পছন্দ করেছেন এবং বিয়ে করার সিদ্ধান্তও নিয়েছেন বললেন। আমারও কী উচিত নয়, আপনাকে দেখে।
ও আপনাদের সবকিছু জেনে পছন্দ করা?
অফকোর্স।
তা হলে বলুন, কবে-কখন ও কোথায় আপনার সঙ্গে আলাপ করব।
কাল বলব, আজ অনেক রাত হয়েছে। ঘুমিয়ে পড়ন, নচেৎ ফজরের নামায কাযা হয়ে যাবে। তারপর রূপা কিছু বলার আগেই সালাম দিয়ে লাইন কেটে দিল।
রূপা সালামের উত্তর দিয়ে রিসিভার রেখে দিল।
সায়মা এতক্ষণ নিজের খাটে বসেছিল। ছেলেটার কথা শুনতে না পেলেও আপুর কথায় বুঝতে পারল, সে আপুকে ভালবাসে ও বিয়ে করতে চায়। তাই রিসিভার রেখে দেওয়ার পর জিজ্ঞেস করল, ছেলেটা পরিচয় বলেছে?
শুধু নাম বলেছে আব্দুস সাত্তার। বাবার নাম ও বাসার ঠিকানা বলে নি।
তুই দেখা করার কথা বলতে কী বলল?
কাল বলবে বলেছে?
আর কী করেন জিজ্ঞেস করতে?
ইসলামিক স্টাডিজে মাস্টার্স দেবে।
নাম ছাড়া অন্য কিছুই যখন বলে নি, মনে হয় ছেলেটা ফ্রড। একা একা তার সঙ্গে দেখা করতে যাওয়া তোর ঠিক হবে না।
তোকে অত পাকামী করতে হবে না। নে এবার শুয়ে পড় বলে রূপা বাথরুম থেকে এসে শুয়ে পড়ল।
০২. প্রায় চার মাস হতে চলল
প্রায় চার মাস হতে চলল, আব্দুস সাত্তারের ফোন না পেয়ে রূপা চিন্তা করল, নিশ্চয় কিছু একটা হয়েছে। নচেৎ যে নাকি তিন মাস প্রতি রাতে ফোন করত, সে এতদিন ফোন না করে আছে কি করে? যাকগে, ভালই হল, কোথাকার কে না কে? ফোন করা বন্ধ করতে দুশ্চিন্তার হাত থেকে রক্ষা পাওয়া গেল। এইসব ভাবলেও প্রতিদিন রাত সাড়ে বারটার সময় ফোনের সেটের দিকে পড়তে পড়তে নিজের অজান্তেই দৃষ্টি চলে যায়। তার মনে হয়, এক্ষুনি বুঝি রিং বেজে উঠবে। কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে নিরাশ হয়ে আবার পড়ায় মন দেয়। আব্দুস সাত্তার যখন ফোন করত তখন রূপা বিরক্ত হলেও মনের মধ্যে এক ধরণের রোমাঞ্চ অনুভব করত। ফোন না আসায় সেই রোমাঞ্চ থেকে বঞ্চিত হয়ে ব্যথা অনুভব করে।
আপুর হাবভাব সায়মার চোখ এড়াল না। একদিন সাড়ে বারটার সময় তাকে ফোনের দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে বলল, কী রে আপু, সেটের দিকে তাকিয়ে আছিস কেন? আব্দুস সাত্তার ফোন করে নি বলে তুই কী কিছু ফিল করছিস?
রূপা বড় বড় চোখে তার দিকে তাকাল।
আহ হা, তুই ওভাবে তাকাচ্ছিস কেন? আমার মনে হচ্ছে, ছেলেটা সত্যিই ফ্রড। তুই দেখা করার কথা বলতে কেটে পড়ল। তা না হলে এতদিন ফোন না করার কারণ কী?
তার কথা শুনে রূপার মনে হল, সায়মা ঠিক কথাই বলেছে। দৃষ্টি সংযত করে বলল, তোকে লেকচার দিতে হবে না। নিজের চরকায় তেল দে বলে পড়ায় মন দিল।
এরপর কয়েকদিন রূপা সাড়ে বারটার সময় ফোনের সেটের দিকে তাকাল না আব্দুস সাত্তারের কথা ভুলে যাওয়ার জন্য। আজ হঠাৎ অজান্তে ঐ সময়ে সেটের দিকে তাকিয়ে ভাবল, সত্যিই কি আব্দুস সাত্তার আর কোনোদিন ফোন করবে না? সে কি সত্যিই ফ্রড? তার মন বলে উঠল, না-না, আব্দুস সাত্তার কোনোদিন ফ্রড হতে পারে না।
আজও ব্যাপারটা সায়মার চোখ এড়াল না। বলল, আব্দুস সাত্তারের ফোন না করার দুটো কারণ থাকতে পারে।
রূপা তার দিকে তাকিয়ে একটু রাগের সঙ্গে বলল, তোকে আমার ব্যাপারে নাক গলাতে নিষেধ করেছি না?
রাগ করছিস কেন আপু? কথাটা হঠাৎ মনে হল তাই বলছি। প্রথমটা হল, তার মাস্টার্সের পরীক্ষা শেষ হয়েছে। পরীক্ষার পর গ্রামের বাড়িতে চলে গেছে। দ্বিতীয়টা হল, হয়তো কোনো কঠিন অসুখ হয়ে মারা গেছে।
গ্রামের বাড়িতে চলে গেছে শুনে রূপা একটু কষ্ট অনুভব করলেও মারা যাওয়ার কথা শুনে খুব রেগে গেল। বলল, তুই একটা শিক্ষিত মেয়ে হয়ে একজনের সম্পর্কে মারা যাওয়ার কথা বলতে বিবেকে বাধল না? জানিস না, কারো মৃত্যু কামনা করতে নেই? খবরদার ওরকম কথা আর মুখে আনবি না।