সায়মা কিছু বলল না, শুধু তার ঠোঁটে মৃদু হাসি ফুটে উঠল। বাথরুমের কাজ সেরে এসে শোয়ার সময় বলল, আপু তুই কী ঘুমিয়ে পড়েছিস?
ঘুমাই নি, তবে ঘুম পাচ্ছে। তুই আর কোনো কথা বলবি না, চুপচাপ ঘুমিয়ে পড়।
আচ্ছা আপু, ছেলেটা তোকে প্রতিদিন ফোন করে কেন বলবি?
রূপা রেগে উঠে বলল, তোকে কথা বলতে নিষেধ করলাম, তবু কথা বলছিস? বললাম না, আমার ঘুম পাচ্ছে?
প্লীজ আপু, আমার প্রশ্নের উত্তরটা দিয়ে দে, আর একটাও কথা বলব না।
সায়মা, তুই কিন্তু খুব বাড়াবাড়ি করছিস। আর যদি একটা কথা বলিস, রিডিংরুমে গিয়ে ঘুমাব।
সায়মা খুব ভীতু। একা ঘুমাতে ভয় পায়। রূপা যেদিন কোনো কারণে খুব রেগে যায়, সেদিন রিডিংরুমে ঘুমাতে চলে যায়। সায়মা তখন অন্যায় স্বীকার করে অনেক কাকুতি মিনতি করে তাকে এই রুমে নিয়ে আসে। তাই এখন তার কথা শুনে আর কিছু না বলে ঘুমিয়ে পড়ল।
রূপা কিন্তু অনেক রাত পর্যন্ত ঘুমাতে পারল না। চিন্তা করতে লাগল, কিভাবে ছেলেটার পরিচয় পাওয়া যেতে পারে? হঠাৎ তার মাথায় একটা বুদ্ধি আসার পর ঘুমিয়ে পড়ল।
পরের দিন সকালে রূপা আব্বুকে বলল, আমাদের বেডরুমে একটা প্যারালাল ফোনের ব্যবস্থা করে দাও। পড়ার সময় ফোন এলে ড্রইংরুমে গিয়ে ফোন ধরতে খুব বিরক্ত লাগে। অনেক সময় ওখানে বাইরের লোকজন থাকে। অসুবিধে হয়।
রোকন উদ্দিন সাহেবের কোনো পুত্র সন্তান নেই। শুধু দু’টো মেয়ে। বড় মেয়ে রূপা মায়ের সবকিছু পেয়েছে। পুত্র সন্তান না থাকায় রোকন উদ্দিন সাহেব দুই মেয়েকেই ভীষণ ভালবাসেন। তবে রূপাকে একটু বেশি। তার কথা শুনে বললেন, প্যারালাল নয়, কয়েকদিনের মধ্যে আর একটা ফোন তোদের জন্য নেওয়ার ব্যবস্থা করে দেব।
রূপা বলল, কয়েকদিন পরে যা করার করো, আজ প্যারালাল ফোনের ব্যবস্থা করে দাও।
রোকন উদ্দিন সাহেব মৃদু হেসে বললেন, ঠিক আছে, অফিসে গিয়ে একজন লোক পাঠিয়ে দেব। সে ব্যবস্থা করে দেবে।
আজ সন্ধ্যের পর থেকে খুব ঝড়-বৃষ্টি হচ্ছে। রাত নটার পর বৃষ্টি একটু কমলেও দমকা দমকা ঝড় বইছে। দশটার সময় খেয়ে এসে রূপা সায়মাকে বলল, ঝড়-বৃষ্টির কারণে আজ হয়তো ছেলেটা ফোন করবে না। তবু যদি করে, তুই ফোন ধরবি। তারপর কি বলবে বুঝিয়ে বলল।
সায়মা বলল, আজ আবার মিথ্যে বলতে বলছ?
হ্যাঁ বলছি। বাজে ঝামেলা থেকে বাঁচার জন্য মিথ্যে বললে দোষ হয় না।
কিন্তু উনি তো আমার গলা চেনেন।
চিনুক, তবু যা বলতে বললাম বলবি।
ঠিক সাড়ে দশটায় ফোন বেজে উঠতে রূপা সায়মাকে রিসিভ করতে বলল।
সায়মা রিসিভার তুলে সালাম দিয়ে বলল, রূপা বলছি।
অপর প্রান্ত থেকে অজানা ছেলেটা সালামের উত্তর দিয়ে বলল, আপনি রূপা নন, সায়মা।
কী করে বুঝলেন? আমি তো রূপাই বলছি।
শুধু শুধু মিথ্যে বলে নিজেকে ছোট করছেন কেন?
আপনি যখন বিশ্বাসই করছেন না তখন ফোন রেখে দিচ্ছি।
প্লীজ রাখবেন না, দয়া করে আপনার আপুকে দিন।
আপনি তো বিশ্বাসই করছেন না, আমি রূপা। রেখে দেব না তো কী করব?
তা হলে বলুন, “আল্লাহর কসম আমি রূপা বলছি।”
সায়মা জানে আল্লাহর নামে মিথ্যে কসম খাওয়া কবীরা গুণাহ। তাই কিছু বলতে না পেরে চুপ করে রইল।
কী হল? আল্লাহর কসম খেয়ে বললেন না যে?
সায়মা মাউথপীসে হাত চাপা দিয়ে রূপার দিকে তাকিয়ে কসম খাওয়ার কথা বলে বলল, এখন কী করব?
রূপা তার হাত থেকে রিসিভার নিয়ে বলল, আমার একটা অনুরোধ রাখবেন?
ছেলেটা আহতস্বরে বলল, ছোট বোনকে দিয়ে এভাবে ফোন রিসিভ করতে বলা আপনার উচিত হয় নি। এটা আমার আপনার ব্যক্তিগত ব্যাপার। আমার কাছে সায়মা কত ছোট হয়ে গেল বলুন তো?
উচিত অনুচিতের কথা পরে, আমার একটা অনুরোধ রাখবেন কী না বলুন?
একটা কেন, হাজারটা অনুরোধ রাখব। তবে ফোন করার ব্যাপারটা ছাড়া। তারপর বলল, বেডরুমে ফোন নিয়ে খুব ভালো করেছেন। পড়ার সময় আর ডিস্টার্ব করব না। কাল থেকে সাড়ে বারটার সময় যখন ঘুমাতে যাবেন তখন করব।
রূপা খুব অবাক হয়ে বলল, এ রুমে ফোন নিয়েছি আপনি জানলেন কিভাবে?
আল্লাহর ইচ্ছায় আমি অনেক কিছু জানতে পারি। শু
ধু আমাদের অনেক কিছু জানতে পারেন, না অন্যদেরও জানতে পারেন?
অন্যদের কোনো কিছু জানার ইচ্ছা কখন হয় নি। তাই সেকথা বলতে পারলাম না। তারপর বলল, কী যেন অনুরোধ করবেন বললেন?
তা আর করব না। তবে একটা প্রশ্ন করব, সঠিক উত্তর দেবেন তো?
উত্তর জানা থাকলে সঠিকই দেব। কারণ কোনো মুমীন মুসলমান মিথ্যে বলতে পারে না।
আপনি আমার পেছনে লেগেছেন কেন?
উত্তরটা আপনি জানেন, তবু জিজ্ঞেস করছেন কেন?
সিওর হওয়ার জন্য।
যা জেনেছেন সেটাই সত্যি।
আমি কি জেনেছি, তা আপনি বুঝলেন কী করে? কারো মনের কথা তো আল্লাহ ছাড়া অন্য কেউ জানতে পারে না। এটা কুরআন পাকের কথা।
আপনি ঠিক কথা বলেছেন। তবে আল্লাহ যাদেরকে পছন্দ করেন তাদেরকে মানুষের মনের খবর জানার জ্ঞান দান করেন।
তারা তো আল্লাহর খাস বান্দা। আপনিও কী নিজেকে তাই ভাবেন?
কখনই না। তাদের পায়ের ধূলোর সমান যোগ্যতাও আমার নেই।
তা হলে ঐ কথা বললেন কেন?
আল্লাহর মেহেরবাণীতে আমি হিকমতের দ্বারা শুধু আপনাদের সবকিছু জেনে নিই।
বুঝলাম না।
পরে এক সময় বুঝিয়ে দেব। অবশ্য আপনিও চেষ্টা করলে হিকমতের দ্বারা আমার সবকিছু জানতে পারেন।