ডাক্তার দেখিয়েছিলেন?
তরিকুল ইসলাম বললেন, ডাক্তার কবিরাজ কিছু করতে পারবে না রে ভাই। মূল বিষয় হচ্ছে-খারাপ বাতাস। জানি সায়েন্স এইসব স্বীকার করবে না। তারপরেও খারাপ বাতাস বলে একটা বিষয় আছে। এই বিষয়ে আপনার মতামত কি?
মিসির আলি কিছু বললেন না। তরিকুল ইসলাম বললেন, খারাপ বাতাস তৈরি করে খারাপ জ্বীন ভূত। তাবিজ কবচ দিয়ে জীন ভূত তাড়ানো যায়, কিন্তু খারাপ বাতাস তাড়ানো যায় না। এইটাই সমস্যা।
মিসির আলিকে আয়োজন করে মাছ দেখানো হলো। গজফিতা আনা হয়েছিল। গজফিতা দিয়ে মিসির আলিকেই সেই মাছ মাপতে হলো। তিন ফুট সাড়ে সাত ইঞ্চি। মিসির আলি মাছ মাপামাপি করছেন সেই দৃশ্যের ছবি তোলা হলো মোবাইল টেলিফোনে। একটা ছবি না, একাধিক ছবি।
মিসির আলি হতাশ বোধ করলেও যন্ত্রণা সহ্য করে গেলেন। মোবাইল ফোনের সঙ্গে ক্যামেরা যুক্ত হয়ে বিরাট সমস্যা হয়েছে। সবাই ফটোগ্রাফার। বাংলাদেশে মোবাইল ব্যবহারকারীর সংখ্যা এক কোটি। এর অর্থ এক কোটি ফটোগ্রাফার ক্যামেরা হতে ঘুরছে।
তরিকুল ইসলাম বললেন, ভাই সাহেব! আমার ধারণা পাঁচ দশ বছরের মধ্যে এমন ক্যামেরা বার হবে যা দিয়ে ভূত প্রেতের ছবি তোলা যাবে। যারা এইসব বিশ্বাস করে না, তাদের গালে পড়বে থাপ্লড়। ঠিক বলেছি কি-না বলুন।
মিসির আলি বললেন, সে রকম ক্যামেরা আবিষ্কার হলে অবিশ্বাসীরা বড় ধরনের ধাক্কা অবশ্যই খাবে।
আপনি কি অবিশ্বাসী?
জি।
তরিকুল ইসলাম বললেন, আচ্ছা যান আমি আপনাকে ভূত দেখাব। কথা দিলাম।
ভূত দেখাবেন?
অবশ্যই দেখাব। আমার লাগবে বড় সাইজের গজার মাছ। সেই মাছ আগুনে পুড়ে জঙ্গলে ভোগ দিতে হবে। সব ধরনের ভূত প্রেতের প্রিয় খাদ্য হচ্ছে গজার মাছ। খড়ের আগুনে আধাপুড়া গজার মাছ। আর পেতন্ত্রীগুলির প্রিয় খাদ্য ইলিশ মাছ ভাজি। আপনি আগামী শনিবার পর্যন্ত থাকুন আমি প্ৰেত দেখায়ে দিব। শনি-মঙ্গলবার ছাড়া এদের দেখা পাওয়া কঠিন।
মিসির আলি ভোজন রসিক মানুষ না, কিন্তু চিতল মাছের পেটি আগ্রহ করে খেলেন। পোলাওয়ের চালের সুগন্ধি ভাত। প্রচুর ধনে পাতা দেয়া মাছের পেটি। বাটি ভর্তি চিতল মাছের গাদা দিয়ে বানানো কোপ্তা। পেটি খাবার সঙ্গে সঙ্গে একটা করে কোপ্তা মুখে দিয়ে চিবুতে হয়। খাবার তদারকি করছেন হেডমাস্টার সাহেবের স্ত্রী। আয়নাকে আশেপাশে কোথাও দেখা যাচ্ছে না। মিসির আলি বললেন, আয়না কোথায়?
হেডমাস্টার বললেন, মাছ রান্না হচ্ছে তো-ও দোতলা থেকে নামবে না। মাছের গন্ধ সহ্য করতে পারে না
মিসির আলি বললেন, আমাদের নবীজিও (স.) মাছের গন্ধ সহ্য করতে পারতেন না। তিনি কখনো মাছ খান নি। একবার ইয়েমেনে তাকে মাছ খেতে দেয়া হয়েছিল। দুৰ্গন্ধ বলে তিনি সরিয়ে রেখেছিলেন।
হেডমাস্টার বললেন, জানতাম নাতো।
এই জ্ঞান হেডমাস্টার সাহেবকে তেমন অভিভূত করতে পারল না। তিনি শুরু করলেন ভূতের গল্প।
বুঝলেন ভাই সাহেব! আমি নিজের চোখে ভূত দেখেছি। দুই বছর আগে। চৈত্র মাসে।। ঘটনাটা বলব?
বলুন শুনি।
আপনি যে ঘরে ঘুমান, সেই ঘরে আমি এবং আমার স্ত্রী শুয়েছি। হঠাৎ ঘুম ভেঙে গেল। ঘর অন্ধকার, কিন্তু ক্যারাম খেলার আওয়াজ আসছে।
ক্যারাম?
জ্বি ক্যারাম। বড় একটা ক্যারামবোর্ড কিনেছিলাম। আমার স্ত্রী ক্যারাম খেলতে পছন্দ করেন, তার জন্যেই কেনা। সেই ক্যারামে কেউ ক্যারাম খেলছে। ঘটাস ঘটাস শব্দে স্ট্রাইকার মারছে। গুটি গর্তে পড়ছে। আমি টর্চ ফেলে দেখি ক্যারামবোর্ড মেঝেতে বিছানো। গুটি বোর্ডে ছড়ানো। ঘরে কেউ নেই। দরজা ভেতর থেকে বন্ধ।
একদিনই শুনেছেন। আর শুনেন নি?
জ্বি না। ঐ ঘরে থাকাই ছেড়ে দিলাম।
মিসির আলি বললেন, ক্যারাম বোর্ডটা কি আছে? না সেটাও ফেলে দিয়েছেন।
ক্যারামবোর্ড আছে। ক্যারামবোর্ড ফেলব। কেন? আপনার ঘরেই আছে। রাতে ঘুম ভাঙলে একটু খেয়াল রাখবেন। ক্যারাম খেলার শব্দ শুনলেও শুনতে পারেন। তবে ভয় পাবেন না। যে সব ভূত প্ৰেত মানুষের বাড়িতে থাকতে আসে তারা সাধারণত নিরীহ হয়। এদের ভয় পাওয়ার কিছু নেই। অবশ্য প্ৰটেকশান নেয়া আছে আপনার তোষকের নিচে মোজা ভর্তি সরিষা আর দুটা রসুন রাখা আছে। সরিষা এবং রসুন যেখানে থাকে। সেখানে ভূত ज ब।।
কারণ কি?
রসুন আর সরিষার ঝাঁঝ তারা সহ্য করতে পারে না। ভূত প্রেতের স্মেল সেন্স খুবই ডেভেলপড। রাতে কি খাবেন বলেন।
রাতে কিছু খাব না-রে ভাই।
অসম্ভব কথা বললেন। রাতে থাবেন না মানে? রাজহাঁস কখনো খেয়েছেন? রাজহাঁস খাওয়াই।
এত সুন্দর একটা প্ৰাণী। তাকে কেটে কুটে খেয়ে ফেলব? আমি এর মধ্যে নাই। হেডমাস্টার বিরক্ত গলায় বললেন, আপনিতো ছাতু খাওয়া হিন্দু সাধুর মত কথা বলছেন। আপনি হিন্দু সাধু না। আপনি গরু খাওয়া মুসলমান। রাজহাঁস খেতেই হবে।
মিসির আলি হতাশ গলায় বললেন, ঠিক আছে রাজহাঁস খাব।
মিসির আলিকে রক্ষা করল তাঁর দুর্বল পাকস্থলী। চিতল মাছের পেটি দুর্বল স্টমাক সহ্য করল না। সন্ধ্যার দিকে কয়েকবার বমি করে তিনি নেতিয়ে পড়লেন। রাজহাঁস না খেয়েই রাতে ঘুমুতে গেলেন। তাকে কিছু খেতে হবে। না। এই আনন্দেই তিনি অভিভূত। আধশোয়া হয়ে লেপ গায়ে বিছানায় শুয়ে থাকতে ভাল লাগছে। কদম ফুলের হালকা সুবাস নাকে আসছে। তিনি ঠিক করলেন, শীতকালে ফুল ফুটে এমন কদমের চারার খোজ করবেন। ঢাকায় যে বাড়িতে থাকেন তার সামনে ফাঁকা জায়গা আছে। কদমের চারা সেখানে পুতে দেবেন।