আয়না মুখে কিছু বলল না। তবে মাথা নাড়িয়ে জানালো তার আপত্তি নেই।
মিসির আলি তার ছাত্রের দিকে তাকিয়ে বললেন, আমার সামনে সিগারেট খেতে কোনো বাধা নেই। সিগারেট ধরাও। আমি দেখলাম সিগারেটের খোঁজে পকেটে হাত দিয়ে চট করে হাত বের করে নিয়েছ তাই বললাম।
ফারুক বলল, আমার সিগারেট লাগবে না। আপনার কথায় হঠাৎ টেনশান তৈরি হয়েছিল বলে সিগারেটের প্যাকেটে হাত দিয়েছিলাম। স্যার আয়না বিষয়ে আমার যা বলার তা ডায়েরিতে লিখেছি। এর বাইরে তেমন কিছু নেই।
মিসির আলি বললেন, আয়না এবং তুমি তোমরা দু’জনই ডিলিউসনে ভূগছ এমন কি কখনো মনে হয়েছে?
জ্বি স্যার হয়েছে। শুরুতে আমি নিজেকেই। Delusion এর Patient ভেবেছি! এক সময় নিশ্চিত হয়েছি সমস্যা আমার না।
কি ভাবে নিশ্চিত হয়েছ?
ফারুক বলল, আঙুর মেয়েটা যখন দেখল তার আপ ঢুকে পড়ছে আয়নার ভেতরে তখন আঙুর নিতান্তই বাচ্চা মেয়ে। সে এমন একটা ঘটনা বানিয়ে বলবে না।
মিসির আলি বললেন, তোমার স্ত্রীর মানসিক ক্ষমতা প্রবল। সে তার ক্ষমতা দিয়ে আঙুর মেয়েটিকে প্রভাবিত করতে পারে। এমন এক illusion তৈরি করতে পারে যাতে আঙুরের ধারণা হবে তাঁর আপা আয়নার ভেতর ঢুকে গেছে।
ফারুক বলল, আয়না এই কাজ কখনো করবে না। সে আঙুরকে খুব পছন্দ করে। সে তাকে পালক পর্যন্ত নিতে চেয়েছে। মেয়েটা ভয় পায় এমন কিছু সে করবে না।
মিসির আলি বললেন, আয়নার ঘরে ভিডিও ক্যামেরা বসানোর কথা কখনো ভেবেছ? CCTV. সারাক্ষণ এই টিভি চলবে। আয়নার প্রতিটি কর্মকাণ্ডের রেকর্ড থাকবে। আয়নার ভেতর ঢুকুল কি ঢুকাল না জানা যাবে।
ফারুক বলল, এটা মাথায় আসে। नि। স্যার এখন আমি একটা সিগারেট ধরাব। হঠাৎ টেনশান বোধ করছি।
মিসির আলি বললেন, সিপারেট ধরাও। একটা বড় আয়না নিয়ে আস। আয়নাটা ব্যবহার করে আমি হিপনোটিক সাজেশন দেব। তোমাদের দু’জনকেই দেব। আয়না রাজি আছে। ফারুক! তুমিও নিশ্চয়ই রাজি।
ফারুক বলল, আপনি যা করতে বলবেন, আমি করব। আমি আয়না নিয়ে আসছি।
ফারুক আয়না আনতে গেল। মিসির আলি নিজেও একটা সিগারেট ধরালেন। আয়না বলল, চা খাবেন স্যার?
মিসির আলি বললেন, ঘন ঘন চা খাবার অভ্যাস আমার নেই। তোমার পাল্লায় পড়ে চা খাওয়ার অভ্যাস হয়েছে, পান খাওয়ার অভ্যাস হয়েছে। এখন চা পান কোনোটাই না। তুমি আমাকে এক পিস সাদা কাগজ এবং কলম দাও।
ফারুক আয়না নিয়ে এসেছে। মিসির আলি আয়নাটা তাদের দিকে ধরেছেন। তিনি বসেছেন আয়নার পেছনে। ফারুক বলল, স্যার কেন জানি আমার ভয় ভয় লাগছে।
মিসির আলি বললেন, এই কাগজ এবং কলম নাও! কাগজে লেখ, আমার ভয় ভয় লাগছে। উল্টো করে লিখবে। তোমার ডায়েরিতে তুমি যেমন উল্টো করে লিখেছি সে রকম। তোমার লেখা শেষ হবে। আর হিপনোটিক সাজেশন শুরু হবে।
ফারুক লিখছে— তার সময় লাগছে। আয়না আগ্রহ নিয়ে ফারুকের লেখা দেখছে, মাঝে মাঝে তাকাচ্ছে ফারুকের দিকে। মিসির আলি বললেন, ফারুক তোমার কি Dyslexia আছে? যেখানে মানুষ উল্টো করে লেখে?
ফারুক বলল, জি না স্যার।
মিসির আলি বললেন, ব্যাপারটা খুব আশ্চর্যের না? তুমি পুরো একটা চ্যাপ্টার উল্টো করে লিখেছি। নির্ভুল ভাবে লিখেছি আর এখন একটা বাক্য লিখতে পারছি না। তোমার কপাল ঘামছে।
ফারুক কপালের ঘাম মুছতে মুছতে বলল, স্যার একটা সিগারেট খাব ৷
খাও। একবার অনুমতি দিয়ে দিয়েছি— বার বার অনুমতি চাইতে হবে না। লেখা শেষ?
জ্বি না। লেখা উল্টো হয়েছে কিন্তু মিরর ইমেজ হয় নি।
বাদ দাও পরে লিখবো। সিগারেট শেষ করে- আমরা হোপনোসিস শুরু করব। আয়নাকে নিয়ে আমি এখন। তিনটা হাইপোথিসিস দাঁড়া করিয়েছি। এক এক করে বলি—
হাইপোথিসিস-A
এখানে আমি ধরে নিচ্ছি। আয়নার ভেতর ঢুকে পড়ার অস্বাভাবিক ক্ষমতা এই মেয়েটির আছে! এই হাইপোথিসিসের পেছনে আছে মেয়েটির নিজের স্বীকারোক্তি। ফারুকের বক্তব্য এবং আঙ্গুর মেয়েটির বক্তব্য। বিজ্ঞান এই হাইপোথিসিস অগ্রাহ্য করবে। আমি নিজেও অগ্ৰাহ্য করছি। তারপরেও হাইপোথিস দাঁড়া করানো হ’ল। ভুলের ভেতর দিয়ে শুদ্ধকে খোঁজার নিয়ম আছে।
হাইপোথিসিস-B
হাইপোথিসিস বলছে- আয়নার ভেতর কেউ কখনো ঢুকেনি। এক Reality থেকে অন্য Reality তে যেতে হলে আয়না লাগে না। বিছানায় শুয়ে শুয়েও একজন মানুষ Reality বদলাতে পারে। বিজ্ঞান এই হাইপোথিসিস সমর্থন করবে।
হাইপোথিসিস-C
এই হাইপোথিসিস বলছে পুরো ব্যাপারটাই আয়নার স্বামী ফারুকের কল্পনা। যে সাইকোলজির ছাত্র। Delusion এর বিষয়টা সে জানে। আয়না তার Delusion এ সাহায্য করেছে। মার্থ নামের এক বাচন মেয়ে বলতো সে আয়না জগতে বাস করে। মার্থার কাহিনী ফারুকের Delusion কে ট্রিগার করেছে। তার স্ত্রীর আয়না প্রীতি তাকে সাহায্য করেছে। তার স্ত্রীর নামও আয়না। সব কিছুই তাকে সাহায্য করেছে।
আয়না ৱাতে তার স্বামীর সঙ্গে ঘুমায় না। এটিও ফারুকের Delusion এর অংশ। ফারুক চায় না তার সঙ্গে স্ত্রীর রাত্রি যাপন করতে।
মিসির আলিকে থামিয়ে দিয়ে ফারুক বলল, স্যার আমি কেন চাইব না?
মিসির আলি বললেন, তুমি নারী বিদ্বেষী পুরুষদের একজন। বিয়ের আগে তোমার ইচ্ছা হয়নি যে মেয়েটিকে বিয়ে করবে তাকে দেখতে বা তার ছবি দেখতে। বিয়ের পরেও দীর্ঘ সময় তাকে এই বাড়িতে ফেলে রেখেছ। নিজের কাছে নিয়ে যাও নি।