আয়না বলল, দোতলা থেকে দেখলাম তুমি বাবার জন্যে চা বানিয়ে এনেছি। আমার জন্যে চা বানিয়ে আন।
এখুনি আনছি। ইলিশ সন্দেশ এনেছি। খাবে?
তুমি বললে খাব। সকালে আমি মিষ্টি খাই না। খেতে বলো না।
আচ্ছা বলব না।
আমি চা খাব আর তুমি আমার সামনে বসে বলবে কেন তুমি মিসির আলি নামের মানুষটাকে এত পছন্দ কর?
ফারুক বলল, আচ্ছা যাও বলব।
আয়না বলল, আমিও পছন্দ করি তবে আমার পছন্দের কারণ আর তোমার পছন্দের কারণ এক না।
তোমার পছন্দের কারণ কি?
আয়না। হাসতে হাসতে বলল, বলব না।
ফারুক চা বানিয়ে এনেছে। আয়না আগ্রহ করে চায়ের কাপে চুমুক দিচ্ছে। ফারুক বলল, মিসির আলি স্যারকে এত পছন্দ করি কেন বলছি। মন দিয়ে শোন।
মন দিয়ে শুনছি।
তাঁর চিন্তা করার ধারা বা বুদ্ধিবৃত্তির বিন্যাস বাদ থাকুক মানুষ মিসির আলির একটা গল্প শোনা। মন দিয়ে শোন।
বাr বার মন দিয়ে শোনা বলছ কেন? আমি যা শুনি মন দিয়ে শুনি।
একদিন ক্লাসে তিনি বললেন, আমি মানুষের অর্থনৈতিক অবস্থার সঙ্গে তার চিন্তা করার ক্ষমতার ভেতর একটা সম্পর্ক বের করার চেষ্টা করছি। তোমরা হচ্ছে আমার প্রথম সাবজেক্ট। তোমরা সবাই তোমাদের অর্থনৈতিক অবস্থা বর্ণনা করবে এবং বোর্ডে লেখা পাঁচটা প্রশ্নের উত্তর দেবে।
১. রাতে বাতি নিভিয়ে ঘুমুতে যাও না বাতি জুলিয়ে ঘুমুতে যাও?
২. উচ্চতা ভীতি কি আছে?
৩. দিঘির পানির কাছে গেলে কি পানিতে নামতে ইচ্ছা করে?
- আগুন ভয় পাও?
৫. অপরিচিত কোনো ফুল হাতে পেলে গন্ধ শুঁকে দেখ?
আমরা সবাই আমাদের অর্থনৈতিক অবস্থার কথা লিখলাম এবং আগ্ৰহ নিয়ে প্রশ্নগুলির জবাব দিলাম। কাজটা স্যার কেন করলেন জন? আমাদের মধ্যে হতদরিদ্র যারা তাদের খুঁজে বের করার জন্যে।
আয়না বলল, মজার তো।
ফারুক বলল, স্যার তিনজন হতদরিদ্র খুঁজে বের করলেন যাদের ইউনিভার্সিটির খরচ তিনি দিতেন। আমি ছিলাম তিন জনের একজন।
বাহ্।
আরেকটা গল্প বলব?
वन।
স্যারের একবার প্লুরিসি হলো। খুবই খারাপ অবস্থা। তিনি এমন একটা ক্লিনিক বের করলেন যার খোজ কেউ জানে না। তিনি সেখানে ভর্তি হলেন। কেন জান?
কেন?
যাতে ছাত্ররা তাঁকে খুজে না পায়। তাকে সেবার জন্যে ব্যস্ত না হয়। তিনি কারোর সেবা নেন না। মিসির আলি স্যার এমনই একজন পূণ্যবান ব্যাক্তি যার কাছাকাছি বসে থাকলেও পূণ্য হয়।
আয়না বলল, তোমার চোখে পানি এসে গেছে। পানি মোছ।
ফারুক চোখ মুছল।
মিসির আলির সঙ্গে ফারুকের দেখা হল সকালে নাশতার টেবিলে। ফারুক বলল, স্যার আমাকে চিনেছেন?
মিসির আলি বললেন, তোমার নাম দেখে তোমাকে চিনতে পারি নি। এখন চিনেছি। খুব ভালো মত চিনেছি। তুমি অনার্স এবং এমএ দুটোতেই ফাস্টক্লাস ফাস্ট হয়েছিলে। ইউনিভার্সিটিতে লেকচারার হবার কথা ছিল। কি সব পলিটিক্সের কারণে হয়নি।
ফারুক বলল, আমার বিষয় আর কিছু কি মনে আছে স্যার?
মনে আছে। আমার একবার প্লুরিসি হয়েছিল। মারতে বসেছিলাম। ভর্তি হয়েছিলাম। এমন এক ক্লিনিকে যার খোজ কেউ জানে না। তুমি কি ভাবে কি ভাবে সেখানে উপস্থিত হলে। কেমন আছ ফারুক?
স্যার ভালো আছি। আপনি সুস্থ আছেন এবং ভালো আছেন দেখে ভালো লাগছে।
মিসির আলি বললেন, তুমি যে ডেকেছি সেই সমাধান আমি করতে পারিনি। পারব সে রকম মনে হচ্ছে না।
ফারুক বলল, সব সমস্যার সমধান থাকে না। স্যার। যেসব সমস্যার সমাধানই নেই আপনি তার কি সমাধান করবেন? এইসব নিয়ে আমরা রাতে কথা বলব।
বঙ্গোপসাগরে ডিপ্রেসন
মনে হয় বঙ্গোপসাগরে ডিপ্রেসন হয়েছে। দুপুর থেকে আকাশে মেঘা জমতে শুরু করেছে। সন্ধ্যার পর থেকে টিপটপ বৃষ্টি, ঝড়ো বাতাস। তাঁরকুল ইসলাম আনন্দিত— ঝড় বৃষ্টি উপলক্ষে বিশেষ কিছু রান্না হবে। খিচুড়ি, ঝাল গরুর মাংস। ময়মনসিংহে BT ট্রেনিংয়ের সময় তিনি গরুর মাংস রান্নার একটা পদ্ধতি শিখেছিলেন। সেটা করবেন কি-না বুঝতে পারছেন না। মাটির হাঁড়িতে মাংস, লবণ সামান্য তেল এবং এক গাদা কাচামরিচ দিয়ে অল্প আঁচে জ্বাল দেয়া। অন্য সব মসলা নিষিদ্ধ। মাংসের বিশেষ যে গন্ধ আছে, কাচামরিচ সেই গন্ধ নষ্ট করবে। আলাদা ফ্লেভার নিয়ে আসবে।। তিনি নিজেই গরুর মাংস আনতে গেলেন। গ্রামে কসাই-এর কোনো স্থায়ী দোকান নেই। শুধু হাটবারে মাংস বিক্রি হয়। সৌভাগ্যক্রমে আজ হাটবার।
বাড়িতে মেহমান শুধু না, জামাইও উপস্থিত। বিশেষ বিশেষ রান্নার অতি উপযুক্ত উপলক্ষ।
মিসির আলি নিজের ঘরে দরজা জানালা বন্ধ করে বসে আছেন। তিনি খাটে হেলান দিয়ে আধশোয়া হয়ে আছেন। তার পায়ের উপর কম্বল। তার সামনে বসেছে আয়না এবং ফারুক। এরা দু’জন বসেছে খাটের শেষ প্রান্তে। সোলার লাইট কাজ করছে না। মেঘলা দিন ছিল বলেই প্যানেল চার্জ হয়নি। ঘরে হরিকেন জ্বলছে। টেবিলে দেয়াশলাই এবং মোমবাতি রাখা আছে।
ফারুক বলল, স্নাতটা ভূতের গল্পের জন্যে অসাধারণ। স্যার আমি অতিথিপুর রেলস্টেশনে একবার একটা ভূত দেখেছিলাম। এই গল্পটা বলব? ভূত সাধারণত মানুষের সাইজের কিংবা মানুষের চেয়ে লম্বা হয়। এই ভূতটা বামণ। ছয় সাত বছরের ছেলের হাইট।
মিসির আলি বললেন, ভূতের গল্প থাকুক। তুমি বরং আয়নার গল্প শোনাও। তুমি একজন সাইকোলজিস্ট। তোমার চোখে আয়না মেয়েটি কি? তুমি তার অদ্ভুত কর্মকাণ্ডের নিশ্চয়ই কোনো ব্যাখ্যাও দাঁড়া করিয়েছ। সেই ব্যাখ্যাও শুনি। আয়নার কি আপত্তি আছে?