ভূতদের ক্ষমতা কি আমাদের চেয়ে বেশি?
অবশ্যই বেশি। যারা অদৃশ্য তাদের ক্ষমতা বেশি তো হবেই। মানুষ চাঁদে যাওয়া নিয়ে কত হৈ চৈ করল। খোজ নিয়ে জানা যাবে ভূত-প্রেত মানুষের অনেক আগেই চাঁদ, মঙ্গল গ্ৰহ এই সব জায়গায় বসতি করেছে। এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় যেতে তাদের রকেট লাগে না।
কুকুর তিনটার কারণে মিসির আলি রাতের খাবারের হাত থেকে বেঁচে গেলেন। দোতলা থেকে কেউ নামতে সাহস পেল না। পরিবারের সবাই অভুক্ত থেকে গেল!
রাত অনেক হয়েছে। বারান্দায় বসে মিসির আলি কুকুরের কর্মকাণ্ড দেখছেন। আয়না এসে তার পাশে বসতে বসতে বলল, কুকুর তিনটা কি কাণ্ড করেছে দেখেছেন স্যার?
মিসির আলি বললেন, দেখছি।
আয়না বলল, এই বাড়ির চারপাশে তাদের ঘুরঘুর করার কি আছে? গজার মাছ পুড়ানোর আয়োজন। এ বাড়ি থেকে করা হয়েছে এই তথ্য কুকুরদের জানার কথা না। স্যার আপনি তো অনেক বিষয় জানেন- কুকুর বিষয়ে কি জানেন?
মিসির আলি বললেন, তেমন কিছু জানি না। আমার বিষয় মানুষের সাইকোলজি। কুকুরের সাইকোলজি না। তবে একটা বিষয় জানি-কুকুর মিষ্টির স্বাদ জানে না। জিহ্বায় যে টেস্টবাড মিষ্টির স্বাদ টের পায় সেই টেস্টবাড কুকুরের নেই। তাকে রসগোল্লা দিয়ে দেখ, সে খাবে না।
আয়না বলল, স্যার আপনিতো সব বিষয়ে একটা হাইপোথিসিস দাঁড়া করিয়ে ফেলেন। কুকুর তিনটা সম্পর্কে আপনার হাইপোথিসিস কি?
মিসির আলি বললেন, সহজ হাইপোথিসিস আছে। কুকুর মানুষের ভয় টের পায়। যে কুকুরকে ভয় পায় কুকুর তাকেই তাড়া করে। তোমার বাবা প্ৰচণ্ড ভয় পেয়েছেন। কুকুর তিনটা ভয় ধরে ধরেই এখানে এসেছে। তোমার বাবা যখন ঘুমিয়ে পড়বে ওরা চলে যাবে।
আয়না বলল, আপনার কি একবারও মনে হয়নি কুকুর তিনটার এখানে আসার পেছনে আমার ভূমিকা আছে? মানুষকে যে প্রভাবিত করতে পারে, সে তো কুকুরকেও করতে পারবে।
মিসির আলি বললেন, তোমার সঙ্গে এ বাড়িতে কুকুর আসার কোনো সম্পর্ক নেই। কুকুর তিনটার কারণে তোমাদের বাড়ির সব মানুষ না খেয়ে আছে। ঐই কাজটাতো তুমি হতে দেবে না। তুমি কুকুর এনে থাকলে তাদের বিদেয় করে দিতে। সেটা তুমি করেনি। তুমি নিজেও অভুক্ত।
আয়না বলল, স্যার রেলিং ধরে একটু দাঁড়ান। আমি এদের বিদায় করে দিচ্ছি। এরা একজন একজন করে উঠে চলে যাবে। আর ফেরত আসবে না।
মিসির আলি রেলিং ধরে দাঁড়ালেন। কুকুর তিনটা এক লাইনে হিজ মাস্টার্স ভয়েসের মত থাবা গেড়ে বসে আছে। একটা কুকুর হঠাৎ একটু নড়ে চড়ে উঠল। তারপরেই ছুটে চলে গেল। বাকি দুটা আগের মতই বাসা। এখন আরেকটা চলে গেল। আরো কিছুক্ষণ পরে গেল তৃতীয়টা।
মিসির আলি আয়নার দিকে তাকিয়ে বললেন, ভালো দেখিয়েছ। I am Impressed.
তরিকুল ইসলামের বিরাট সমস্যা
তরিকুল ইসলামের বিরাট সমস্যা হয়েছে। হঠাৎ করে কুকুর ভীতি তাকে কাবু করে ফেলেছে। দোতলা থেকে তিনি নামতে পারছেন না। তার মনে হচ্ছে একতলায় নামলেই তিন দিক থেকে তিনি কুকুর এসে তার উপর ঝাঁপিয়ে পড়বে। দোতলার বারান্দায় দাঁড়িয়েও তিনি স্বস্থি পাচ্ছেন না। কুকুরের খোজে। এদিক ওদিক দেখছেন। কালো রঙের কিছু দেখলেই তাঁর বুক ধড়ফড় করছে। কপালে ঘাম হচ্ছে। কেন তিনি এত ভয় পাচ্ছেন নিজেও বুঝতে পারছেন না। ভয়টা সময়ের সঙ্গে বাড়ছে।
সকাল দশটা ৷ তিনি নিজের ঘরে দরজা বন্ধ করে বসে আছেন। কারণ এখন তাঁর মনে হচ্ছে তিনটা কুকুরই সিঁড়ি বেয়ে দোতলায় উঠে আসবে। তারা আজ দিনের মধ্যেই একটা ঘটনা ঘটাবে। তরিকুল ইসলামের ইচ্ছা! করছে এই অঞ্চল ছেড়ে দূরে কোথাও চলে যেতে। বড় কোনো শহরে যেখানে কুকুরের উৎপাত নেই।
দেবার ক্ষমতা নেই তারপরেও তিনি ভীত গলায় বললেন, কে?
আমি মিসির আলি দরজা খুলুন। আমি আপনার কুকুর ভীতি সারিয়ে ििछ।
কি ভাবে?
হিপানোটিক সাজেশান বলে একটা পদ্ধতি আছে। ঐ পদ্ধতিতে। তরিকুল ইসলাম বললেন, কোনো পদ্ধতিতে কিছু হবে না ভাই সাহেব। তাবিজ কবচ লাগবে।
মিসির আলি বললেন, হিপিনোটিক পদ্ধতি কাজ না করলে অবশ্যই তাবিজ কবিচে যাওয়া হবে। আগে দেখি কাজ করে কি-না। দরজা খুলুন। সিঁড়ির গোড়ায় আমি মাজেদকে লাঠি হাতে দাঁড়া করিয়ে দিয়েছি। কুকুর সিঁড়ি বেয়ে উঠতে পারবে না। বাড়ি দিয়ে কোমর ভেঙে দেবে।
তরিকুল ইসলাম দরজা খুললেন। কাতর গলায় বললেন, কাল সারারাত জেগে ছিলাম। এক সেকেন্ডের জন্যে চোখের পাতা এক করতে পারি নাই। শেষ রূতে একটু ঝিমুনির মতো এসেছে তখন স্বপ্নে দেখি দুটা কুকুর আমার দুই পা কামড় দিয়ে ধরে আছে আর বড়টা ছিড়ে ছিড়ে আমার পেটের নাড়ি-ভূড়ি খাচ্ছে।
মিসির আলি বললেন, শান্ত হোন তো ভাই! দেখি সমস্যার সমাধান করা যায় কি-না।
তরিকুল ইসলাম চিন্তিত ভঙ্গিতে মেঝেতে বসে আছেন। তাঁর তিন ফুট সামনে মিসির আলি। মিসির আলির হাতে পকেট ঘড়ির চেইন। চেইনের মাথায় ঘড়ি। তিনি ঘড়িটা পেড়ুলামের মতো সামান্য দুলাচ্ছেন। তাদের বাঁ দিকে খাটের উপর আয়না বসে আছে। আয়নার চোখে তীব্র কৌতূহল। আয়নার পাশেই তার মা। ঘোমটা টেনে তিনি নিজেকে আড়াল করেছেন। মহিলা কিছুটা ভয় পাচ্ছেন। তিনি এক হাতে মেয়েকে শক্ত করে ধরে আছেন।
মিসির আলি বললেন, হেডমাস্টার সাহেব!
জ্বি।
আপনি সারারাত ঘুমান নি এখন আপনার ঘুম পাচ্ছে। ঘুমে চোখের পাতা বন্ধ হয়ে আসছে।