পুরো মেডিকেল চেক আপ। নোশিনের বাধা নিজেও একজন ডাক্তার, পিজিতে কাজ করেন।
মেডিকেল চেকাপে খারাপ ধরনের জন্ডিস ধরা পড়ল। হেপাটাইটিস সি বা ডি এই ধরনের কিছু। সুস্থ সবল মেয়ে দেখতে দেখতে মরার মত হয়ে গেল। তাকে ভর্তি করা হল পিজি হাসপাতালে। মেডিকেল বোর্ড বসল। নোশিনের অবস্থা দ্রুত খারাপ হওয়া শুরু করল। বেশির ভাগ সময় সে চোখ বন্ধ করে থাকে। ঘরের আলো সহ্য করতে পারে না।
এক রাতে নোশিন তার মাকে বলল জন্তুটা তার সামনে চলে এসেছে। বসে আছে হাসপাতালের বিছানার পাশে। নোশিনকে অদ্ভুত ভাষায় কি সব বলে নোশিন বুঝতে পারে না।
আমি প্রতিদিনই নোশিনকে দেখতে যাই। তাকে সান্ত্বনা দেয়া বা প্ৰবোধ দেবার কিছু নেই। আমি যাই ব্যাপারটা বুঝতে। নোশিনকে নানান প্রশ্ন করি। সে প্রতিটা প্রশ্নেরই জবাব দেয়। জবাব দিয়ে কাঁদে।
নোশিনী! জন্তুটা এখন কোথায়?
আমার সামনে।
কি করছে?
আঙুল নেড়ে নেড়ে কি যেন বলছে।
তুমি হাত ইশারায় তাকে চলে যেতে বল।
নোশিন হাত ইশারায় চলে যেতে বলল। মুখেও বলল, তুমি চলে যাও। তুমি চলে যাও।
আমি বললাম, নোশিন এখন জন্তুটা কি করছে?
হাসছে।
জন্তুটা হাসতে পারে?
পারে।
অষ্টম দিনে নোশিনের মা আমাকে টেলিফোন করে আসতে বললেন। বিশেষ একটা ঘটনা না কি ঘটছে। আমি তৎক্ষণাৎ হাসপাতালে উপস্থিত হলাম। নোশিন আধশোয়া হয়ে আছে। তার হাতে কি যেন আছে। সে দুই হাতে সেটা আড়াল করতে চাইছে। আঙুলের ফাঁক দিয়ে সবুজ রঙের কি যেন দেখা যাচ্ছে। মনে হচ্ছে কোনো গাছের কষ। আমি বললাম, কি ব্যাপার?
নোশিন জানালি জন্তুটা তাকে ঘন্টাখানিক আগে এটা দিয়েছে এবং খেতে বলেছে। বার বার ইশারা করছে মুখে দিতে। সে কি করবে বুঝতে পারছে না।
আমি বললাম, কখন দিয়ে গেল?
নোশিন বলল, কখন দিয়েছে আমি জানি না। ঘুমাচ্ছিলাম হঠাৎ জেগে দেখি জোলির মত এই জিনিসটা আমার হাতে। জন্তুটা বিছানার পাশে দাড়িয়ে। হাত দিয়ে ইশারা করে আমাকে খেতে বলছে। চাচা আমি কি খাব?
আমি কি বলব বুঝতে পারছি না। জন্তুর ব্যাপারটাই নিতে পারছি না। সে খাবার এনে দিচ্ছে এটা কি ভাবে নেব? বার বার মনে হচ্ছে হাসপাতালের কোনো নার্স বা অ্যাসিস্টেন্ট মেয়েটার হাতে এটা দিয়েছে। টুথপেস্ট হবার সম্ভাবনা। দেখতে সে রকমই।
নোশিন বলল, কেউ খেতে দিচ্ছে না। সবাই বলছে খেলেই আমি মরে যাব। জন্তুটা আমাকে তাড়াতাড়ি মরার জন্যে এটা এনে দিয়েছে!
আমি বললাম, তোমার মন যা চায়। তাই কর। কিছু বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিজেকেই নিতে হয়। তবে আমি তোমার জায়গায় হলে হয়তো খেয়ে ফেলতম।
নোশিন হঠাৎ জিনিসটা মুখে দিয়ে মুখ বিকৃত করে গিলে ফেলল। এবং চোখ বড় বড় করে বলল, জন্তুটা দরজা দিয়ে চলে যাচ্ছে।
নোশিনের সঙ্গে আমার কোনো যোগাযোগ নেই। সে অতি দ্রুত সুস্থ হয়ে ওঠে। তার বিয়ে হয়। একজন মেরিন ইঞ্জিনিয়ারের সঙ্গে। তার নিজের জৰ্ত্তটাকে চলে যেতে দেখার পর জন্তু দেখার রোগটা তার পুরোপুরি সেরে যায়। এই হচ্ছে অমীমাংসিত রহস্যের গল্প।
আয়না বলল, সব রহস্যের মীমাংসা না হওয়াই ভাল। তাই বুঝি? জ্বি তাই। সব রহস্যের মীমাংসা হয়ে গেলে পৃথিবী সাধারণ হয়ে যাবে। আমি চাই না। আপনি আমার রহস্যের মীমাংসা করেন।
তুমি নিজে কি তোমার রহস্যের মীমাংসা করেছ? যদি করে ফেল তাহলেই হবে।
পোড়া গজার মাছ ভূত প্রেতকে দিয়ে খাওয়ানো প্ৰকল্প বাতিল হয়ে গেল। ঘটনা এরকম- খড়ের গাদায় আগুন দিয়ে লবণ মাখানো গজার মাছ ঢুকানো হবে। প্রস্তুতি সম্পন্ন। আগুন দেয়া হয়েছে। খড় ভেজা বলে আগুন ঠিকমত জ্বলছে না। একজন গেছে কেরোসিন আনতে। হেড মাস্টার সাহেব বললেন, কেরোসিন দিয়ে আগুন ধারালে চলবে না। মাছে কেরোসিনের গন্ধ থাকলে ভূত সেই মাছ খাবে না। অল্প আগুনেই মাছ পুড়ানো শুরু হোক। দু’জন মিলে মাছটাকে আগুনে রাখতে যাচ্ছে তখন বনের ভেতর থেকে ভয়াল দৰ্শন এক কুকুর বের হয়ে এল। লাঠি নিয়ে একজন কুকুরটাকে তাড়া করতে গেল। কুকুরটা তার পা কামড়ে ধরল। আর তখন কনের ভেতর থেকে আরো দুটা কুকুর বের হল। তারা ঝাঁপিয়ে পড়ল মাছের উপর।
কুকুরের তাড়া খেয়ে হেড মাস্টার সাহেব উল্টে পড়লেন। পা মাচকালেন। মাছ ধরার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট চারজনের ভেতর তিনজনই কুকুরের কামড় খেল। হেডমাস্টার সাহেব কোনক্রমে রক্ষা পেলেন।
রাত বাড়ার পর শুরু হল আরেক উপদ্রব্য। কুকুর তিনটা হেড মাস্টার সাহেবের বাড়ির চারদিকে চক্রাকারে ঘুরতে শুরু করল। মাঝে মাঝে তারা থামে। তখন তিনজনই এক সঙ্গে ঘেউ ঘেউ করতে থাকে।
হেডমাস্টার সাহেব মিসির আলিকে বললেন, অবস্থা কিছু বুঝলেন?
মিসির আলি বললেন, না।
তিন কুকুর হচ্ছে ঐ জিনিস।
কি জিনিস?
খারাপ জিনিস। কুকুরের বেশ ধরে এসেছে।
ভূত-প্ৰেত?
অবশ্যই। এদের আচার আচরণ দেখে বুঝতে পারছেন না?
মিসির আলি বললেন, ভূত-প্ৰেত কুকুরের বেশ ধরে আসবে কেন?
হেডমাস্টার সাহেব বললেন, ভয় দেখানোর জন্যে এসেছে।
ধরে আসা উচিত। যেমন ধরুন চিতাবাঘ।
এরা যে কুকুর না। অন্য কিছু তা আপনি বিশ্বাস করছেন না?
মিসির আলি বললেন, না। আপনার কাছে বন্দুক থাকলে আমি বলতাম। একটা কুকুর গুলি করে মারতে। তাহলে আপনি ভূত মারার দুর্লভ সম্মান পেতেন। ভাই আপনার কাছে কি বন্দুক আছে?
না বন্দুক নাই। বন্দুক থাকলেও আমি গুলি করতাম না। ভূত-প্রেতের সাথে বিবাদে যাওয়ার কোনো মানে হয় না। এদের ক্ষেপিয়ে দিলে সমস্যা আছে। সমানে সমানে বিবাদ চলে। অসমানে বিবাদ চলে না।