সব কিছু আল্লাহর মর্জি। আমি আপনার চাচাকে একটু পরীক্ষা করব। তার আগে ওঁর সম্পর্কে সবকিছু জানতে চাই।
সবকিছু বলতে গেলে অনেক কথা বলতে হবে। সময়ও নষ্ট হবে আপনার।
তা হোক, তবু শুনব। সবকিছু না জানলে চিকিৎসা করব কী করে?
তার আগে আমার একটা কথা জানতে খুব ইচ্ছা করছে।
এমন সময় যীনাত দু’কাপ ধূমায়িত চা নিয়ে ফিরে এলে হাবিব ডাক্তার তার চোখের দিকে তাকাবার জন্য মনে প্রচণ্ড চাহিদা সত্ত্বেও তাকাল না। চলে যাওয়ার পর বলল, বলুন কি জানতে চান?
চামচে খাওয়া ডাক্তারী মতে নিষেধ; না ইসলামে নিষেধ, না এটা আপনার গোড়ামী?
ভাইয়ার কথা শুনে ডাক্তার কি বলে শোনার জন্য যীনাত দরজার বাইরে এসে পর্দার আড়ালে দাঁড়িয়ে পড়ল।
হাবিব ডাক্তার বলল, কোনোটাতেই নিষেধ নেই। আর এটা গোড়ামীও নয়। আসল ব্যাপার হল, ইসলামের প্রতিটি বিধান বিজ্ঞান ভিত্তিক ও ইহকাল ও পরকালের ভালোর জন্যই। তাই মুসলমানদের প্রতিটি কাজ, যেমন খাওয়া দাওয়া, চলা-ফেরা, শোয়া-বসা, সভা-সমিতি, আচার-আচরণ, ব্যবসা-বাণিজ্য, রাজনীতি, এমন কি পেশাব-পায়খানা থেকে স্ত্রী মিলন পর্যন্ত ধর্মের নিয়মানুসারে করা উচিত। এতে করে কিন্তু এইসব কাজ এতটুকু বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছে না। আর একটা জিনিস হল, মুসলমানদের প্রতিটি কাজ ইবাদত। তবে কিভাবে প্রতিটি কাজ করলে ইবাদত হবে, তা তাদেরকে জানতে হবে। একটা উদাহরণ দিলে বুঝতে পারবেন। যেমন ধরুন, আপনি ভাত খাবেন, ইসলাম শিক্ষা দিচ্ছে, খাওয়ার আগে দু’হাতের কজি পর্যন্ত ভালো করে ধুবেন। খাওয়া শুরু করার আগে ডান হাতের শাহাদাত আঙ্গুলে সামান্য লবণ নিয়ে বিসমিল্লাহ বলে মুখে দেবেন। তারপর নিজ পাশ থেকে ভাত নিয়ে মুখে দেয়ার আগে বলবেন, “বিসমিল্লাহি ওয়া আয়ালা বারকাতিল্লাহি।” এর অর্থ হল, আল্লাহর নামে শুরু করছি এবং এই খাবারে আল্লাহ তুমি বরকত দান কর। তারপর অল্প অল্প ভাত মুখে দিয়ে ভালো করে চিবিয়ে খাবে। পেট পুরে না খেয়ে আধপেট খাবে। বাকি অর্ধেকের একভাগ পানি দিয়ে পূর্ণ করবে। আর একভাগ খালি রাখবে। খাওয়ার পর প্লেটে ও হাতে লেগে থাকা খাবার জিহ্বা দিয়ে চেটে খেতে হবে। তারপর প্লেটে হাত না ধুয়ে আলাদা পাত্রে অথবা অন্যখানে আবার দু’হাত ভালো করে ধুতে হবে। শেষে পানি খেয়ে বলতে হবে, “আলহামদুলিল্লাহিল্লাজী আতআ’মানা ওয়া শাকায়না ওয়াজ আলনা মিনাল মুসলেমিন।” এর অর্থ হল, সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর, যিনি আমাকে খাবার খাওয়ালেন, পানি পান করালেন ও মুসলমান দলভুক্ত করেছেন। যিনি আহার দিলেন, আহারের পর তাঁর প্রশংসা বা গুণগান করাই তো উচিত।
শরীরকে সুস্থ ও সবল রাখার জন্য আমরা খাওয়া-দাওয়া করি। ধর্মীয় নিয়মে না খেলেও খাওয়ার প্রয়োজনীয়তা মিটবে ঠিক, কিন্তু ইবাদত হবে না। বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গিতে কিন্তু খাওয়ার ধর্মীয় নিয়মগুলো অতি উত্তম। আরো একটু খোলাসা করে বলি, খাওয়ার আগে ময়লা পরিষ্কার করার জন্য দু’হাত ধুতে বলা হয়েছে। এক হাতে নিশ্চয় তা সম্ভব নয়। তারপর অল্প একটু লবণ মুখে দেওয়ার উদ্দেশ্য জিবের লালা বের করা। এই লালাই আমাদের খাদ্য হজম করে। অল্প অল্প খাবার মুখে দিয়ে ভালো করে চিবানো মানে খাবারের সঙ্গে ঐ লালা বেশি করে মিশে যায় এবং হজমের সহায়তা করে। তারপর প্লেট ও হাত চেটে খাওয়া মানে অধিক পরিমাণ জিহ্বা থেকে লালা বের করা। যা নাকি হজমের জন্য লাগে। শেষে আবার দু’হাত খোবার অর্থ, এক হাতে ভালো করে ধোয়া হয় না। এখন আপনিই বলুন, কেউ যদি ধর্মীয় নিয়মে খাওয়া-দাওয়া করে, তাকে কী গোঁড়া বলবেন?
আজরাফ হোসেনকে না সূচক মাথা নাড়তে দেখে হাবিব ডাক্তার বললেন, এবার নিশ্চয় বুঝতে পেরেছেন। ধর্মীয় বিধান মানুষের জন্য কত মঙ্গলময়? আরো একটা জিনিস নিশ্চয় বুঝতে পারছেন, মুসলমানদের যে কোনো কাজের ফলাফল দু’টো। একটা ইহলৌকিক আর অন্যটা পারলৌকিক? ইসলামের বিধান প্রধানত তিনভাগে বিভক্ত। যেমন—ফরয, ওয়াজীব ও সূন্নত। অবশ্য নফল, মোস্তাহাবের কথাও ইসলামে উল্লেখ আছে। সেগুলো করলে সওয়াব আর না করলে কোনো দোষ নেই। ফরয হল, শরীয়তের বিধানানুসারে যে সকল বিষয় কুরআন ও সুন্নাহর অকাট্য প্রমাণ দ্বারা নির্ধারিত হয়েছে এবং অবশ্য পালন করতে হবে, উহাকে ফরয বলে। ফরয পালন না করলে কবীরা গুনাহ হয় এবং অস্বীকার করলে কাফের হয়। ওয়াজীব হল, যে সকল শরীয়ত বিধান অস্পষ্ট প্রমাণ দ্বারা প্রমাণিত হলেও অপরিহার্য বলে নির্ধারিত হয়েছে, উহাকে ওয়াজীব বলে। আর সুন্নত হল, যা করার জন্য হযরত নবী করিম (দঃ) তাগিদ দিয়াছেন এবং নিজে সদা সর্বদা তা করেছেন। তবে কোনো মুসলমানদের উচিত নয়, রাসুল (দঃ) এর সুন্নতকে ছোট মনে করা অথবা অবহেলা করা। তা না হলে পূর্ণ মুসলমান হতে পারবে না। কারণ আল্লাহ কুরআন পাকে বহু জায়গায় বলেছেন, “আল্লাহকে ও তাঁর রাসূল (দঃ) কে অনুসরণ কর।” অর্থাৎ আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (দঃ) এর বিধান মেনে চল। আরো বলেছেন, “হে রাসূল বলুন, তোমরা যদি আল্লাহকে ভালবাস, তা হলে তোমরা আমাকে অনুসরণ কর, আল্লাহ তোমাদিগকে ভালবাসিবেন এবং তোমাদের যাবতীয় গুনাহ মাফ করিয়া দিবেন।” [সূরা : আল ইমরান, আয়াত-২৯, পারা-৩]