হাসিবুর রহমানের দীর্ঘ কথাবার্তা শুনতে শুনতে মুশতাক বিশ্বাস ও পারভেজের অনেক আগেই ভুল ভেঙ্গে গেছে। তিনি থেমে যেতে পারভেজ আব্বার কানের কাছে মুখ নিয়ে অনুচ্চস্বরে বলল, এখন বুঝতে পারছি সমস্ত দোষ আমাদের পূর্বপুরুষদের। আমাদের উচিত হবে ওঁর কথায় রাজি হয়ে পূর্ব পুরুষদের পাপের প্রায়শ্চিত্ত করা।
অপমানে ও অনুশোচনায় মুশতাক বিশ্বাসের তখন চোখ থেকে পানি পড়ছিল। কিছু বলতে পারলেন না।
আব্বার মনের অবস্থা বুঝতে পেরে পারভেজ হাসিবুর রহমানকে কদমবুসি করে বলল, আমিও আপনার পোতাদের একজন এবং আমার আব্বা আপনার ভাইপো। আমি তার হয়ে বলছি, আপনি যা কিছু বললেন, তা আমরা অবশ্যই করব।
হাসিবুর রহমান তাকে বুকে জড়িয়ে মাথায় চুমো খেয়ে দোয়া করে বললেন, আমার দ্বারা আল্লাহ যে তোমাদের ভুল ভাঙ্গিয়ে সত্যকে উপলব্ধি করার তওফিক দিলেন, সেজন্য তাঁর পাক দরবারে আবার শত কোটি শুকরিয়া জানাচ্ছি।
মুশতাক বিশ্বাস আর স্থির থাকতে পারলেন না। এগিয়ে এসে হাসিবুর রহমানকে কদমবুসি করে জড়িয়ে ধরে বললেন, আমাকে মাফ করে দিন চাচা। আমি পূর্ব-পুরুষদের পক্ষ থেকেও মাফ চাইছি। এতদিন আমার মন অজ্ঞানতার মেঘে ঢাকা ছিল। আল্লাহ আজ আপনার দ্বারা সেই মেঘের কোলে রোদ ফুটিয়ে জ্ঞানের চোখ খুলে দিলেন। সেজন্য আমিও তাঁর পাক দরবারে শত কোটি শুকরিয়া জানাচ্ছি।
হাসিবুর রহমানও আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করে বললেন, সবকিছুই আল্লাহর ইশারা। তিনি যা ইচ্ছা তাই করতে পারেন।
তিনি থেমে যেতে চেয়ারম্যান জনতার উদ্দেশ্যে বললেন, শুধু বিশ্বাসদের উপর থেকে নয়, এই এলাকার সমস্ত মানুষের মন যে অজ্ঞানতার মেঘে ঢাকা ছিল, আল্লাহ এই মহান ব্যক্তির দ্বারা সেই মেঘের কোলে রোদ ফুটিয়ে জ্ঞানের আলো ছড়িয়ে দিলেন। সেজন্য আমিও আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করছি।
জনতার মধ্য থেকে কে একজন বলে উঠল, “নারায়ে তাকবীর”।
সঙ্গে সঙ্গে সমস্ত জনতা একসাথে বলে উঠল, “আল্লাহু আকবার”।
এভাবে তিনবার বলার পর চেয়ারম্যান জনতার উদ্দেশ্যে বললেন, এবার আপনারা চলে যান। মেহমানদের বিশ্রাম দরকার।
জনতা চলে যেতে শুরু করলে হাসিবুর রহমান নাদের আলিকে কাছে ডেকে বললেন, যাও দাদু, তোমার শ্বশুর ও সমন্ধীকে সালাম করে মাফ চেয়ে নাও।
নাদের আলি শ্বশুর ও সমন্ধীকে সালাম করে মাফ চেয়ে অন্যান্য মুরুব্বীদেরকেও সালাম করল।
এবার চেয়ারম্যান হাসিবুর রহমানকে বললেন, গাড়িতে মেয়েরা এতক্ষণ বসে কষ্ট পাচ্ছেন। এখন সবাইকে নিয়ে আমার বাড়িতে চলুন। কিছু খাওয়া দাওয়া করে বিশ্রাম নেবেন।
হাসিবুর রহমান কিছু বলতে যাচ্ছিলেন। তার আগেই মুশতাক বিশ্বাস বললেন, তা হয় না চেয়ারম্যান সাহেব, ইনারা বিশ্বাস বাড়ির লোক, বিশ্বাস বাড়িতেই যাবেন। তা ছাড়া মনে হয়, গাড়িতে নিশ্চয় আতিকাও আছে। বিয়ের পর ফিরনীতে মেয়ে জামাই ও তাদের সঙ্গী সাথীরা মেয়ের বাবার বাড়িতেই উঠে। তারপর হাসিবুর রহমানের দিকে তাকিয়ে বললেন, ঠিক বলি নি চাচা? সমাপ্ত।