রসু চলে যাওয়ার পর পারভেজকে বললেন, চেয়ারম্যান ও কয়েকজন মুরব্বীদের বিকেল চারটের সময় আসতে বলবে। আর আজরাফ মাস্টার শ্বশুরবাড়ি থেকে ফিরেছে কিনা খোঁজ নেবে। ফিরে থাকলে তাকেও আসতে বলবে।
তুমি শুনেছ কিনা জানি না, পশ্চিমপাড়ার হাশেম আলির বিধবা মেয়ে যীনাতের সঙ্গে হাবিব ডাক্তারকে জড়িয়ে গ্রামে কুৎসা রটেছে। দু’তিন দিন আগে কয়েকজন এসে সে কথা জানিয়ে বিচার বসাতে বলে গেছে। কাল দু’টো বিচার একসঙ্গে হবে।
আতিকার ব্যাপারটা পারভেজ বিশ্বাস করলেও যীনাতের ব্যাপারটা বিশ্বাস করতে পারল না। অবাক কণ্ঠে বলল, হাবিব ডাক্তার এরকম কাজ করতে পারেন না। হয়তো তার কোনো দুশমন তাকে হেয় করার জন্য মিথ্যে কুৎসা রটাবার ব্যবস্থা করেছে।
মুশতাক বিশ্বাস রেগে উঠে বললেন, আর সে যে তোমার বোনকে নিয়ে নাদের আলির পালাবার সুযোগ করে দিল, সেটাও কী বিশ্বাস কর না?
তা করব না কেন? কিন্তু হাবিব ডাক্তারের নামে যে কুৎসা….। তাকে কথাটা শেষ করতে না দিয়ে মুশতাক বিশ্বাস বললেন, তুমি বিশ্বাস করলেও আমি করি না। কাল দু’টো ব্যাপারের বিচার করবই।
০৯. আতিকার বিয়ের দিন ঠিক
আতিকার বিয়ের দিন ঠিক হয়ে যেতে নাদের আলি খুব দুশ্চিন্তায় পড়ে গেল। কি করবে না করবে চিন্তা করে ঠিক করতে না পেরে হাবিব ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ করার জন্য কার্পাসডাঙ্গা গেল। সালাম ও কুশল বিনিময় করে কথাটা জানাল।
হাবিব ডাক্তার বলল, তোমাদেরকে তো বলেছি এ ব্যাপারে কোনো চিন্তা করবে না, যা করার আমিই করব? কথাটা শুনে আমি আতিকার সঙ্গে দেখা করেছি। যা বলছি শোন, বিয়ে তো শুক্রবার। বুধবার দিনগত রাত তিনটের সময় আমি বিশ্বাসপাড়ার রাস্তার মোড়ে থাকব, তুমি আসবে। আতিকাকেও ঐ সময়ে আসতে বলেছি। আজ তুমি না এলে কাল আমি তোমার কাছে যেতাম। তোমাদেরকে ফার্স্ট বাসে ঢাকায় আমাদের বাসায় পাঠিয়ে দেব। সেখানে তোমাদের বিয়ের ব্যবস্থা করে রেখেছি। ঘরে গিয়ে খালাআম্মাকে সবকিছু বুঝিয়ে চিন্তা করতে নিষেধ করবে। এখন তুমি যাও।
জি করব বলে নাদের আলি বিদায় নিয়ে ফিরে এল। তারপর থেকে কাজকাম করলেও মনে এতটুকু শান্তি নেই। কেবলই মনে হয়, অত রাতে আতিকা আসতে পারবে তো? যদিও আসে, কেউ দেখে ফেললে কি করবে?
.
আজ বুধবার। কোনো কাজ করতে ভালো লাগছিল না বলে নাদের আলি সকাল থেকে ঘরেই রইল। যোহরের নামায পড়ে খাওয়ার পর হাবিব ডাক্তারের কথাগুলো ফুফুকে বলে বলল, কেউ আমার কথা জিজ্ঞেস করলে বলবে, কোথায় গেছি জান না।
হানিফা খাতুন আতঙ্কিত স্বরে বললেন, মাতব্বর রেগে গিয়ে কি করবে ভেবেছিস? যদি লোকজন পাঠিয়ে আমাকে ধরে নিয়ে গিয়ে মারধর করে?
এসব ভেবে মন খারাপ করো না। ডাক্তার ভাই থাকতে তোমার কোনো ভয় নেই। কেউ তোমার কিছু করবে না। আল্লাহর উপর ভরসা করে থাকবে। আজরাফ স্যার দু’একদিনের মধ্যে শ্বশুরবাড়ি থেকে চলে আসবেন। তাকে সবকিছু বলে তাদের ঘরেও থাকতে পার। এমন সময় হালিমকে আসতে দেখে এগিয়ে গিয়ে বলল, কী খবর হালিম?
হালিম পেট কাপড় থেকে একটা ভাঁজ করা চিঠি বের করে বলল, বুবু দিয়েছে। আর এই চিঠির উত্তর দিতে বলেছে।
নাদের আলি সেখানেই চিঠি খুলে পড়তে শুরু করল–
নাদের আলি ভাই,
সালাম নেবে। পরে জানাই যে, এই ক’দিন খুব দুশ্চিন্তায় কিভাবে যে কাটছে তা আল্লাহ জানেন। ডাক্তার ভাইয়ের কথামতো আজ রাত তিনটের সময় রাস্তার মোড়ে আসব। তিনি আগের থেকে ওখানে থাকবেন বলেছেন। তোমাকেও নিশ্চয় ঐ সময়ে আসতে বলেছেন। সাড়ে তিনটে পর্যন্ত অপেক্ষা করব। যদি না আস, তা হলে সঙ্গে যে বিষের শিশি থাকবে, ডাক্তার ভাই বোঝার আগেই খেয়ে ফেলব। তবু ঘরে ফিরে যাব না। আশা করি, ঐ সময়ের মধ্যে নিশ্চয় আসবে। দোয়া করি, আল্লাহ যেন আমাদের মনের আশা পূরণ করেন। আমার মন বলছে, তুমি আসবে। তবু সিওর হওয়ার জন্য এই চিঠি লিখে হালিমকে পাঠালাম। আর হ্যাঁ, ডাক্তার ভাই যে বোরখাটা তোমাকে দিয়েছেন, সেটা নিয়ে আসতে ভুল করবে না।
ইতি
তোমার আতিকা
চিঠি পড়া শেষ করে হালিমকে জিজ্ঞেস করল, খেয়েছিস?
জে।
তুই গিয়ে তোর বুবুকে বলবি, ঠিক সময়ে আমি আসব। আর দেরি করিস, তাড়াতাড়ি চলে যা। কেউ দেখে ফেলতে পারে।
হালিম চলে যাওয়ার পর নাদের আলি ফুফুকে চিঠির কথা বলে বলল, যা যা বললাম, সেই মতো করবে।
সারারাত নাদের আলি যেমন ঘুমাতে পারল না, তেমনি আতিকাও পারল না। তারপর ঠিক সময়মতো দু’জনে প্রায় একসঙ্গে নির্দিষ্ট জায়গায় এসে পৌঁছাল।
হাবিব ডাক্তার কিছুক্ষণ আগে এসে তাদের অপেক্ষায় ছিল। সালাম বিনিময় করে জিজ্ঞেস করল, তোমাদেরকে কেউ দেখে নি তো?
দু’জনেই বলল, না।
হাবিব ডাক্তার তাদেরকে নিয়ে কার্পাসডাঙ্গায় নিজে রুমে এসে প্রথমে সবাই ফজরের নামায পড়ল। তারপর চা-নাস্তা খাইয়ে বাসে তুলে দেয়ার সময় একটা চিঠি নাদের আলিকে দিয়ে বলল, আমার আব্বা তোমাদেরকে নিয়ে যাওয়ার জন্য বাসস্ট্যান্ডে গাড়ি নিয়ে থাকবেন। গতরাতে আমি তাকে ফোন করে তোমাদের যাওয়ার কথা জানিয়েছি। একটু পরে আবার ফোন করে যাওয়ার কথা ও তোমাদের পোশাকের কথা জানিয়ে দেব। উনি তোমাদেরকে চিনে ফেলবেন। তাকে এই চিঠিটা দিও।