ভাবছি, দুপুরে খাওয়ার পর পারভেজকে ও তার আব্বাকে জানাব।
হ্যাঁ আম্মা, তাই জানান। আমার তো ভয় হচ্ছে। বুবু যা জেদী, কোনো অঘটন না ঘটিয়ে ফেলে।
শাফিয়া বানুও পেটের মেয়েকে ভালভাবেই জানেন। তিনিও ঐ কথা ভেবে ভয় পাচ্ছেন। একটা দীর্ঘনিশ্বাস ফেলে বললেন, সেইজন্য আমারও খুব চিন্তা হচ্ছে। এমন সময় স্বামীকে নামায পড়ে আসতে দেখে বললেন, তোমার শ্বশুর এসে গেছে, যাও ভাত বাড়।
খাওয়া-দাওয়ার পর শাফিয়া বানু স্বামীকে কয়েকটা পান সেজে পিরীচে করে দিয়ে বললেন, আতিকাকে সকাল থেকে পাওয়া যাচ্ছে না।
মুশতাক বিশ্বাস চমকে উঠে বললেন, পাওয়া যাচ্ছে না মানে? সকালে নাস্তা খাই নি?
না। মনে করেছিলাম, পাড়ায় কোনো আত্মীয়ের বাড়ি গেছে, সেখানেই হয়তো নাস্তা খেয়েছে। দুপুর পর্যন্ত না আসায় কাজের মেয়েকে খোঁজ করতে পাঠিয়েছিলাম। সে ফিরে এসে বলল, কোনো বাড়িতেই নাকি যাই নি।
মুশতাক বিশ্বাস স্ত্রীর উপর খুব রেগে গেলেন। রাগের সঙ্গে বললেন, এখন বেলা আড়াইটা বাজে, এতক্ষণ জানাও নি কেন?
বললাম তো, মনে করেছিলাম কারো বাড়ি বেড়াতে গেছে। না বলে সে তো প্রায় কারো না কারো বাড়ি যায়।
বৌমা কথাটা জানে?
জানে। সে তো কয়েকবার আতিকার কথা জিজ্ঞেস করেছে।
মুশতাক বিশ্বাস শোয়া থেকে উঠে একটা পান মুখে দিয়ে দু’টো হাতে নিয়ে বেরিয়ে এলেন। তারপর দুই তিনজন কাজের লোককে আতিকার খোঁজে পাঠালেন।
স্কুল ছুটির পর পারভেজ ঘরে এলে মুশতাক বিশ্বাস আতিকার কথা বলে বললেন, আমি দু’তিনজনকে খুঁজতে পাঠিয়েছি। তুমি কাউকে নাদের আলির ঘরে পাঠিয়ে খোঁজ নাও।
সবাই সারাদিন খোঁজ করে আতিকাকে পেল না। পারভেজ যাকে নাদের আলির ঘরে খোঁজ নিতে পাঠিয়েছিল, সেও ফিরে এসে বলল, আতিকা সেখানে যায় নি। আর নাদের আলিও ঘরে নেই। কোথায় গেছে তার ফুফু জানে না।
কথাটা শুনে পারভেজের ধারণা হল, আতিকাকে নিয়ে নাদের আলি পালিয়ে গেছে। আব্বাকে তার ধারণার কথা বলল।
মুশতাক বিশ্বাসও ঐরকম ধারণা করেছিলেন। ছেলের কথা শুনে ধারণাটা দৃঢ় হল। রাগে অগ্নিশর্মা হয়ে বললেন, ছোটলোকের বাচ্চাকে একবার পেয়ে নিই, তারপর যে কি করব, তা….রাগে কথাটা শেষ করতে পারলেন না।
পারভেজ বলল, নাদের আলিকে যা করবেন পরে চিন্তা করলে চলবে। পরশু বিয়ের দিন। সে ব্যাপারে কি করবেন আগে চিন্তা করুন।
বাপ-ছেলেকে কথা বলতে দেখে শাফিয়া বানু এসে দাঁড়িয়েছিলেন। পারভেজের কথা শুনে বললেন, কাল দুপুর পর্যন্ত যদি আতিকা ও নাদের আলি
ফেরে, তা হলে বিকেলে পারভেজ আনন্দবাস গিয়ে বলে আসুক, “গত রাত থেকে আতিকার খুব জ্বর। জ্বরের ঘোরে ভুল বকছে। তাই বিয়ের দিন পিছাতে হবে। আতিকা সুস্থ হওয়ার পর আমরা এসে বিয়ের দিন ঠিক করে যাব।”
স্ত্রীর কথায় মুশতাক বিশ্বাসের রাগ একটু কমল। ছেলেকে উদ্দেশ্য করে বললেন, তোমার মা ভালো কথা বলেছে। তা ছাড়া মান-সম্মান বাঁচাবার মতো অন্য কোনো পথওতো খুঁজে পাচ্ছি না।
পারভেজ বলল, তাই করতে হবে। আমিও অন্য কোনো উপায় দেখতে পাচ্ছি না।
পরের দিন দুপুর পর্যন্ত অপেক্ষা করেও যখন আতিকা ও নাদের আলি ফিরল তখন সবাই-এর বদ্ধ ধারণা হল, ওরা পালিয়ে গেছে। বাধ্য হয়ে পারভেজ বিকেলে আনন্দবাস গিয়ে আতিকার অসুখের কথা বলে বিয়ের দিন পিছিয়ে দিয়ে এল। রাতে আব্বাকে বলল, কাল সকালে দামুড়হুদা গিয়ে থানায় নাদের আলির নামে আতিকাকে নিয়ে পালিয়ে যাওয়ার কেস দিতে হবে।
মুশতাক বিশ্বাস বললেন, হুট করে থানায় কিছু করা ঠিক হবে না। জানাজানি হয়ে গেলে বিয়েটা ভেঙ্গে যাবে। যা করার ভেবে চিন্তে করতে হবে।
সন্ধ্যের পর রসুকে হন্তদন্ত হয়ে আসতে দেখে মুশতাক বিশ্বাস বললেন, কোনো খবর পেলে?
রসু বলল, জি পেয়েছি। আমার চাচাতো ভাই জাফর পরশু দিন ভোরে চুয়াডাঙ্গা গিয়েছিল। যাওয়ার সময় কার্পাসডাঙ্গা বাসস্ট্যান্ডে হাবিব ডাক্তারের সঙ্গে একটা বোরখাপরা মেয়েকে কথা বলতে দেখে মনে করেছিল, হয়তো কোনো পরিচিত রুগী টুগী হবে। একটু পরে সেখানে নাদের আলি এলে হাবিব ডাক্তার তার হাতে একটা চিঠির খাম দিয়ে তাকে ও বোরখাপরা মেয়েটাকে ঢাকার বাসে তুলে দিলেন। জাফর মনে করেছিল, বোরখাপরা মেয়েটা নাদের আলির ফুফু। আজ সন্ধ্যের আগে বাড়িতে এসে কথাটা আমাকে বলে। শুনে আমার ধারণা হল, বোরখাপরা মেয়েটাই আতিকা। নাদের আলির ফুফুতো ঘরেই আছে। আমার ধারণা যদি ঠিক হয়, তা হলে হাবিব ডাক্তারকে জিজ্ঞেস করলে সত্য মিথ্যা জানা যাবে। তাই তাড়াতাড়ি আপনাকে খবরটা দিতে এলাম।
মুশতাক বিশ্বাস রসুর কথা অবিশ্বাস করতে পারলেন না। ভাবলেন, সেদিন নাদের আলির সঙ্গে আতিকার বিয়ে দেয়ার জন্য যখন হাবিব ডাক্তার অনেক কথা বলেছে তখন সেই নিশ্চয় ওদেরকে পালাবার যুক্তি দিয়েছে। পারভেজকে ডেকে রসুর কথা বলে বললেন, আমাদের ধারণাই ঠিক, নাদের আলি আতিকাকে নিয়ে ঢাকা পালিয়ে গেছে। আর হাবিব ডাক্তার ওদেরকে পালাবার যুক্তি দিয়েছে।
পারভেজ বলল, আমারও মনে হচ্ছে, হাবিব ডাক্তারের পরামর্শ মতো ওরা ঢাকা চলে গেছে। কালকে তাকে ডেকে জিজ্ঞেস করলেই সবকিছু জানা যাবে।
মুশতাক বিশ্বাস বললেন, হ্যাঁ, তাই করতে হবে। তারপর রসুকে বললেন, কাল বেলা দু’টোর দিকে কার্পাসডাঙ্গা গিয়ে হাবিব ডাক্তারকে আমার অসুখের কথা বলে সঙ্গে করে নিয়ে আসবে। এখন তুমি যাও।