হাবিব ডাক্তার বলল, আপনি যে মেয়ে ও তার দুই মাসের ছেলের কথা বললেন, তারা হলেন আমার বড় মা ও দাদাজী।
আজরাফ হোসেন চমকে উঠে অবাককণ্ঠে বললেন, কী বলছেন আপনি?
এতটুকু শুনেই চমকে উঠলেন? এরপর যা বলব, শুনে তা হলে কী করবেন? বলছি শুনুন,
আমি যখন বিদেশ থেকে বড় ডাক্তার হয়ে ফিরে এলাম তখন দাদাজী একদিন আমাকে তার মা-বাবার পরিচয় ও মায়ের করুণ মৃত্যুর কথা বলে বললেন, তোর বাবাকে প্রতিশোধ নিতে বলেছিলাম। সে তখন বলছিল নেবে। কিন্তু আজও কিছুই করে নি। সে শুধু টাকার পেছনে ঘুরছে। তোর বাবা যে কাজ করে নি, এখন তুই যদি সেই কাজটা করিস, তা হলে শান্তি পেতাম।
বললাম, ঠিক আছে দাদু, আমি আব্বার সঙ্গে এ ব্যাপারে আলাপ করে আপনাকে জানাব।
দাদাজী বললেন, তার সঙ্গে যা আলাপ করার আমিই করব। তুই ওয়াদা কর, কাজটা করে আমাকে শান্তি দিবি? আমাকে আমার খালা মানুষ করেছেন। তিনি মারা যাওয়ার সময় বলেছিলেন, তুই তো তোর মায়ের হত্যার প্রতিশোধ নিতে পারলি না, তোর ছেলেকে বলিস, সে যেন নেয়। কি জানিস, মায়ের মৃত্যুর কথা মনে পড়লে আজও বুকের ভিতর দাউদাউ করে আগুন জ্বলে উঠে। আল্লাহ আমাদেরকে অনেক অর্থ সম্পদ দিয়েছেন। তোর বাবা ও তোর তিন ভাই টাকার পাহাড় জমাচ্ছে। তুইও যেন তাদের মতো টাকার পিছনে ঘুরিস না। আমি চাই, তুই সেই টাকার কিছু অংশ প্রত্যন্ত অঞ্চলের গরিব মানুষদের মধ্যে শিক্ষার প্রসার ও তাদের উন্নতির জন্য এবং ইসলামের খিদমতে খরচ করবি। বড় ডাক্তার যখন আল্লাহ তোকে করেছেন তখন কুতুবপুরের মতো অজপাড়াগাঁয়ে গিয়ে গরিবদের চিকিৎসা কর। আর সেই সাথে আমার মায়ের খুনের প্রতিশোধ নিবি। বাকি আমার মায়ের ও আমার পৈত্রিক সম্পত্তি পাওয়ার ব্যবস্থা তোর বাবাকে দিয়ে করাব। আমি খোঁজ-খবর নিয়ে জেনেছি, মুশতাক বিশ্বাসের একটা অবিবাহিত অপূর্ব সুন্দরী মেয়ে আছে। তাকে তুই ছলেবলে কৌশলে বিয়ে করে তোর বড়মার হত্যার প্রতিশোধ নিয়ে বিশ্বাসদের অহংকার ধুলোয় মিশিয়ে দিবি। বল দাদু, তুই আমার বুকের আগুন নেভাবি? তারপর চোখ মুছে বললেন, চুপ করে আছিস কেন? তুই ও কী তোর বাবার মতো আমার কথা না শুনে টাকার পিছনে ঘুরবি?
বড়মার মর্মান্তিক মৃত্যুর কারণ জেনেও দাদাজীর চোখের পানি দেখে আমি স্থির থাকতে পারলাম না। বললাম, হ্যাঁ দাদাজী, আব্বা আপনার কথা না রাখলেও ইনশাআল্লাহ আমি রাখব। ওয়াদা করছি, আমার জীবনের বিনিময়ে হলেও বড় মায়ের হত্যার প্রতিশোধ নেব এবং আপনার অন্যান্য মনের বাসনা পূরণ করব।
দাদাজী আলহামদুলিল্লাহ বলে আমাকে জড়িয়ে ধরে বললেন, তুই শুধু মুশতাক বিশ্বাসের মেয়েকে বিয়ে করবি। আর বাকি কাজগুলোও আমি তোকে দিয়েই করাব। এতে তোর জীবনের উপর ঝুঁকি আসবে। ভয় করবি না। আল্লাহর উপর সবকিছুতে সব সময় ভরসা রাখবি। আর আমি তোর বড় ভাইয়ের দ্বারা তাকে প্রটেকশন দেয়ার ব্যবস্থা করব।
দাদাজী কিছু দিনের মধ্যে এখানে পোস্টিং করার ব্যবস্থা করে দিলেন। এখানে আসার দু’এক মাসের মধ্যে মুশতাক বিশ্বাসের মেয়ে আতিকাকে পাওয়ার পথে কিছুটা অগ্রসর হয়েছিলাম। কিন্তু যখন জানতে পারলাম, আতিকা খাঁপাড়ার বড় মায়ের বংশের নাদের আলিকে স্কুল জীবন থেকে ভালবাসে এবং নাদের আলিও তাকে ভালবাসে তখন ভাবলাম, আল্লাহ খাঁ বংশের গরিব ও এতিম ছেলেকে দিয়েই বিশ্বাসদের সম্মানে আঘাত হানতে চান। তখন ঐ পথ থেকে নিজেকে সরিয়ে নিয়ে যাতে করে ওদের বিয়ে হতে পারে সেই পথে অগ্রসর হচ্ছি। জানি না, আল্লাহ কতদিনে আমার মনের আশা পূরণ করবেন। অনুগ্রহ করে আর কোনো প্রশ্ন করবেন না, উত্তর দিতে পারব না।
সবকিছু শুনে আজরাফ হোসেন এত অবাক হলেন যে, কথা বলতে ভুলে গেলেন। অনেকক্ষণ পর দীর্ঘ নিশ্বাস ফেলে বললেন, বেশ, কোনো প্রশ্ন করব না। তবে একটা প্রশ্ন না করে পারছি না। ধরুন, নাদের আলির সঙ্গে আতিকার বিয়ে হল। তারপর যদি আপনার দাদাজীর মায়ের মতো ঘটনা নাদের আলির জীবনে ঘটে।
আল্লাহর মর্জি থাকলে ঘটবে। তবে আমার বিশ্বাস তা ঘটবে না। তার আগেই আমি মুশতাক বিশ্বাসকে আমার পরিচয় জানিয়ে বড় মায়ের ও দাদাজীর সম্পত্তি দাবি করব। অবশ্য তিনি আমাকেও যে দুনিয়া থেকে সরিয়ে দেয়ার চেষ্টা করবেন তা জানি। আর সেই জন্য আমি পাকা ব্যবস্থা করে এখানে এসেছি।
নাদের আলি ও আতিকার বিয়ের আগেই কি আপনি যীনাতকে বিয়ে করতে চান?
হ্যাঁ, তাইতো গোপনে করতে চাই। ওকে আমার ভীষণ পছন্দ। যতদূর বিশ্বাস যীনাত রাজি হবে। তবে তাড়াহুড়ো করার দরকার নেই।
আচ্ছা, বিশ্বাসদের ব্যাপারে আমি যদি আপনাকে সাহায্য করতে চাই?
আশা করি, সাহায্যের দরকার হবে না। হলে আপনি না বললেও সাহায্য চাইতাম।
শুনে খুশি হলাম।
যীনাতকে আসতে দেখে হাবিব ডাক্তার বলল, আপনার অনেক সময় নষ্ট করলাম। এবার আসি বলে উঠে দাঁড়াল।
তাসনিমা খাতুন এতক্ষণ আড়াল থেকে তাদের কথা শুনছিলেন। স্বামী কিছু বলার আগে বললেন, দুপুর হয়ে গেছে, খেয়ে যাবেন।
স্ত্রীর কথা শুনে আজরাফ স্যারও বললেন, হ্যাঁ খেয়ে তারপর যাবেন।
মাফ করবেন, আজ খেতে পারব না। হেলথ কমপ্লেক্স থেকে অনেকক্ষণ হয়ে গেল বেরিয়েছি। সাগীর ডাক্তার একা রুগীদের সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন। আজ চলি, অন্য একদিন খাব। আর হ্যাঁ, আপনার স্ত্রীকেও এসব কথা কাউকে বলতে নিষেধ করে দেবেন। তারপর সালাম বিনিময় করে চলে গেল।