জি জানি, তারও রোল নাম্বার এক।
খুব ভাল। তা বাবা তোমাকে একটা কথা বলি। তুমি একা একা বা শবনমকে নিয়ে এখানে এস না। জ্বীনেরা ছোট ছেলে-মেয়েদের একা পেলে তাদের ক্ষতি করে। আমি এখানে বাড়ি করার ইচ্ছা করেছি। বাড়ি করার পর আসবে।
এখানে জ্বীন আছে জেনেও বাড়ি করবেন? তারা আপনাদের ক্ষতি করবে না?
জ্বীনেরা নির্জন জায়গায় থাকে। লোকজন দেখলে এখান থেকে চলে যাবে। তা ছাড়া বড়দের তারা ক্ষতি করতে পারে না।
তা হলে কসিবুড়িকে জ্বীনে ধরে কেন?
কসিবুড়ি আবার কে?
তার বাড়ি আমাদের গ্রামেই।
তাই নাকি? কসিবুড়িকে জ্বীনে ধরে, না তার কোনো অসুখ, তাকে না দেখে। বলতে পারব না।
আমাদের গ্রামের সবাই বলে, কসিবুড়ির সঙ্গে জ্বীন থাকে। প্রতি বৃহস্পতিবার দিনগত রাতে তার উপর ভর করে। সেই সময় তার বাড়িতে অনেক লোকের ভীড় হয়। তারা যে যার অসুখের কথা বললে, সেই জ্বীন আবার ঔষধ দেয়।
তুমি এসব কথা জানলে কেমন করে?
আম্মার মুখে শুনেছি।
ঠিক আছে, যে দিন কসিবুড়িকে জ্বীনে ধরে সে দিন আমি গিয়ে দেখব তোমার কথা কতটা সত্য। কারণ শোনা কথা বিশ্বাস করতে নেই। আর তুমি এখন ছেলেমানুষ, এসব নিয়ে মাথা ঘামাবে না। এখন চল বাজারে যাই বলে চৌধুরী হুজুর দাঁড়িয়ে পড়লেন।
আতাহারও দাঁড়িয়ে বলল, আমি আপনার সঙ্গে বাজারে যাব কেন?
আহা চলই না বলে চৌধুরী হুজুর তার একটা হাত ধরে হাঁটতে লাগলেন। তারপর দৌলতখান বাজারে একটা মিষ্টির দোকানে এসে মিষ্টির অর্ডার দিয়ে আতাহারকে বললেন, তুমি খুব ভালো ছেলে, তোমাকে আমি মিষ্টি খাওয়াব।
আতাহার কিছুতেই রাজি হল না। বলল আপনি আমাকে মিষ্টি খাওয়াবেন কেন? আপনাকে তো আমি চিনি না।
মিষ্টি দোকানের মালিক হিন্দু। নাম মাখন বাবু। তিনি চৌধুরী হুজুর ও আতাহারকে চেনেন। ব্যাপারটা বুঝতে পেরে বললেন, তুমি ছেলেমানুষ, তাই চৌধুরী হুজুরকে চেন না। তোমার বাবা চেনেন। উনি খুব মানি লোক। তুমি মিষ্টি খাও বাবা।
আতাহার তবুও খেল না। বলল, কারো কাছ থেকে কোনোকিছু খেতে আম্মা-আব্বা নিষেধ করেছেন।
চৌধুরী হুজুর তার কথা শুনে খুব খুশি হলেন। জিজ্ঞেস করলেন, তোমার আব্বা বাড়িতে আছেন?
জি আছেন।
চৌধুরী হুজুর দোকানদারকে এক কেজি মিষ্টি প্যাকেট করে দিতে বললেন। তারপর প্যাকেটটা নিয়ে আতাহারের সঙ্গে তাদের বাড়ির কাছে এসে বললেন, তোমার আব্বাকে গিয়ে বল, কলাকোপা সিনিয়র মাদ্রাসার একজন শিক্ষক এসেছেন।
মোজাম্মেল খন্দকার তখন বাড়িতেই ছিলেন। আতাহার বাড়ির ভিতরে গিয়ে আব্বাকে কথাটা জানাল।
মোজাম্মেল খন্দকার ছেলেকে সঙ্গে করে বাইরে এসে ওঁনাকে দেখে সালাম দিয়ে ভক্তিগদগদ কণ্ঠে বললেন, হুজুর আপনি? আমার কি সৌভাগ্য? তারপর হাত মোসাফা করে বসবার রুমে এনে বসতে দিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, কেমন আছেন হুজুর?
চৌধুরী হুজুর সালামের উত্তর দিয়ে বললেন, আল-হামদুলিল্লাহ,আল্লাহপাকের রহমতে ভালো আছি। আপনারা কেমন আছেন?
আল্লাহপাকের রহমতে ও আপনার নেক দোয়ায় ভালো আছি। আতাহার বুঝতে পারল, আব্বা ওঁকে চেনেন। সে ওঁর দিকে চেয়ে ছিল। চৌধুরী হুজুর তার হাতে মিষ্টির প্যাকেটটা দিয়ে বললেন, এবার তো আর না করতে পারবে না? যাও ভিতরে গিয়ে খাও।
মোজাম্মেল খন্দকার বললেন, আপনি আতাহারকে চিনলেন কি করে?..
আতাহার ভাবল, উনি যদি বাগানে যাওয়ার কথা এবং মিষ্টি না খাওয়ার কথা বলে দেন, তা হলে আব্বা বকাবকি করবেন। তাই চৌধুরী হুজুর কিছু বলার আগেই ভিতরে চলে গেল।
চৌধুরী হুজুর সব কথা বলে বললেন, আপনি খুব সৌভাগ্যবান। আপনার এই ছেলে খুব ভালো। দোয়া করি, আল্লাহ হায়াতে তৈয়্যেবা দান করুন, নেক বখত করুন। আল্লাহ চাহেতো এই ছেলে একদিন আপনার বংশের মুখ উজ্জ্বল করবে। ওর পড়াশোনার দিকে খুব লক্ষ্য রাখবেন।
মোজাম্মেল খন্দকার বললেন, আপনার দোয়া আল্লাহ কবুল করুক। তারপর সাধ্যমত মেহমানদারী করলেন।
যাওয়ার সময় আব্বার কথামত আতাহার চৌধুরী হুজুরকে কদমবুসি করল। চৌধুরী হুজুর দোয়া করে বললেন, ইনশাআল্লাহ তোমার সঙ্গে আমার আবার দেখা হবে। তখন। চিনতে পারবে তো?
আতাহার লজ্জা পেয়ে মাথা নিচু করে বলল, জি পারব।
চৌধুরি হুজুর সালাম বিনিময় করে চলে যাওয়ার পর মোজাম্মেল খন্দকার ছেলেকে বললেন, উনি খুব বুজুর্গ লোক। আবার দেখা হলে নিয়ে আসবি। আর উনি যা বলবেন, তাই মেনে চলবি।
জ্বি আচ্ছা বলে আতাহার খেলতে চলে গেল।
.
০৩.
সাখাওয়াত হোসেনের বড় মেয়ে খালেদা যে বছর দৌলতখান সরকারী উচ্চ বালিকা বিদ্যালয় থেকে এস.এস.সি পাস করে, সেই বছরই চরখলিফা থেকে তার বিয়ের সম্বন্ধ আসে।
দৌলতখানের পশ্চিম দিকে চরখলিফা গ্রামের আব্দুল মজিদ বেশ অবস্থাপন্ন ঘরের ছেলে। সে বি.এ পাস করে দৌলতখান সরকারী উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করে। খালেদাকে তার খুব পছন্দ। খালেদা এস. এস. সি পাস করার পর আব্দুল মজিদ মা-বাবাকে নিজের পছন্দের কথা বলে। ওঁরা ছেলের কথামত খালেদাকে এবং তাদের বাড়িঘর সবকিছু দেখে পছন্দ করেন। তারপর কিছু দিনের মধ্যে তাকে বৌ করে ঘরে নিয়ে আসেন।
এখন তাদের দুটি ছেলেমেয়ে। ছেলের বয়স চার, আর মেয়ের বয়স এক বছর। এতদিনে সাখাওয়াত হোসেনের বড় ছেলে সামসুদ্দিন বি.এ পাস করে এক বছর হল। চট্টগ্রামে ফায়ার সার্ভিসে চাকুরি করছে। নাসির উদ্দিন নাইনে, মেজ মেয়ে শবনম এইটে, ছোট ছেলে কলিম উদ্দিন সিক্সে আর ছোট মেয়ে আসমা ফোরে পড়ে।