মুবিন আহত স্বরে বলল, আপনি কি আমাকে অবিশ্বাস করেন?
ছিঃ ছিঃ এ আপনি কি বলছেন? অবিশ্বাস করতে যাব কেন? যদি করতাম, তা হলে সব কিছু জানার পর আপনার সঙ্গে নাসিমার ব্যাপারে কোনো কথাই বলতাম না। আপনি আমাকে ভুল বুঝবেন না। অভিভাবক হিসেবে আপনার সব কিছু জানা কি আমার উচিত নয়?
মুবিন নিজের ভুল বুঝতে পেরে বলল, আমি আপনাকে ভুল বুঝেছিলাম, ক্ষমা করে দিন।
ওয়াহাব বলল, মানুষ মাত্রেই ভুল করে। ক্ষমা চাওয়ার মত ভুল আপনি করেননি।
মুবিন বলল, হ্যাঁ, আপনি ঠিকই শুনেছেন, মেয়েটি আমার দূর সম্পর্কের আত্মীয়া। অপছন্দ করার মত মেয়ে নয়। তাই প্রথমে অমত করিনি, পরে ঐ মেয়ের সম্পর্কে এমন কিছু জানতে পারি, যার কারণে সব কথাবার্তা পাকা হয়ে যাওয়ার পরও আমি অমত করি। এর বেশি কিছু বলতে পারব না। প্লিজ এ ব্যাপারে আমাকে আর কোনো কথা। জিজ্ঞেস করবেন না।
ওয়াহাব বলল, ঠিক আছে, যা জানার জানা হয়ে গেছে।
মুবিন বলল, এবার তা হলে আসি। তারপর সালাম বিনিময় করে চলে গেল।
ওয়াহাব যখন মুবিনকে রাস্তা পর্যন্ত এগিয়ে দিতে গেল তখন নাসিমা চুপে চুপে তাদের পিছনে পিছনে এসে গেটের কাছে আড়ালে দাঁড়িয়ে এতক্ষণ তাদের কথোপকথন শুনছিল। মুবিন চলে যেতে তাড়াতাড়ি করে ফিরে এল। সে রাতে নাসিমা শোকরানার নামায পড়ে আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করে মনের কামনা-বাসনা জানাল। তারপর আনন্দের চোটে অনেক রাত পর্যন্ত ঘুমাতে পারল না।
পরের দিন দুটোর সময় কলেজ ছুটির পর তার মাথায় একটা দুষ্টু বুদ্ধি এল। বাসায় না গিয়ে রিক্সায় করে মুবিনের ব্যাংকের গেটে এসে যখন নামল তখন মুবিন হোটেল থেকে খেয়ে ফিরছিল। নাসিমাকে দেখে অবাক হলেও আনন্দিত হল। সালাম বিনিময় করে বলল, কি ব্যাপার আজ আবার এলেন যে।
নাসিমা বলল কেন, আসতে নেই বুঝি?
তা কেন, মানে …….।
তাকে থামিয়ে দিয়ে নাসিমা বলল, থাক আর মানে করা লাগবে না। আসুন আমার সঙ্গে।
এক মিনিট বলে মুবিন ভিতরে চলে গেল। একটু পরে ফিরে এসে বলল, চলুন।
নাসিমা হাঁটতে শুরু করে বলল, বসের কাছ থেকে ছুটি নিয়ে এসেছেন তো?
মুবিন মৃদু হেসে বলল, হ্যাঁ।
মুবিনকে হোটেলের দিকে যেতে দেখে নাসিমা বলল, এদিকে যাচ্ছেন কেন?
মুবিন বলল, আপনি কলেজ থেকে এসেছেন, আগে আপনার কিছু খাওয়া দরকার।
নাসিমা শুকরিয়া জানিয়ে বলল, আপনি দুপুরে কোথায় খান?
হোটেলে।
হোটেলে খেলে তো গ্যাস্টিক হবে।
এছাড়া যখন কোন উপায় নেই তখন হলে কি আর করব। তবে এবার একটা ছেলে ঠিক করেছি। সে সামনের মাস থেকে বাসা থেকে ভাত নিয়ে আসবে। হোটেলে এসে জিজ্ঞেস করল, ভাত খাবেন, না অন্য কিছু?
নাসিমা বলল, আমি হোটেলে কোনোদিন ভাত খাইনি। আজ খেয়ে দেখব, হোটেলের রান্না কেমন?
মুবিন নাসিমার জন্য ভাতের অর্ডার দিয়ে নিজের জন্য একটা চা দিতে বলল।
হোটেল থেকে বেরিয়ে মুবিন বলল, কোথায় যেন যাবেন বলছিলেন?
যদি বলি বাসায়।
আপত্তি নেই, তবে কথাটা ঠিক বলেননি।
আপনার অনুমান ঠিক। কোথায় যাব, সেটাও অনুমান করে বলুন।
মুবিন বুঝতে পারল, নাসিমা তাকে নিয়ে বেড়াবে বলে এসেছে। তাই দুষ্টুমী করে বলল, মনে হচ্ছে, চোর জানতে পেরেছে ধরার ব্যবস্থা হচ্ছে। তাই শাস্তির ভয়ে ধরাপড়ার আগে দোষ স্বীকার করতে এসেছেন।
নাসিমা কপট রাগ দেখিয়ে বলল, চোরের বয়েই গেছে দোষ স্বীকার করতে। তারপর বলল, চলুন নদীর ধারে বেড়াতে যাই।
দুটো শর্তে যেতে পারি।
আগে শর্ত দুটো বলুন। তারপর ওয়াদা করব।
একটা হল, প্রতিদিন পাঁচটার সময় ব্যাংকের গেটে আসবে, অন্যটা হল, এখন থেকে তুমি করে বলবে।
নাসিমা বলল, বিয়ে না করেই বৌ পেতে চাচ্ছেন?
তা হলে চল এক্ষুনি কাজি অফিসে যাই।
নাসিমা হেসে উঠে বলল, তা সম্ভব নয়, ভাইয়া মনে ভীষণ ব্যাথা পাবে, তারপর বলল, ঠিক আছে, দুটো শর্তই মেনে নিলাম।
.
১০.
গুপ্তগঞ্জের রাস্তায় আতাহারের সঙ্গে শবনমের দেখা হওয়ার পর আজ পনের দিন হতে চলল আর দেখা হয়নি। শবনম মনে করল, দেখা করার কোনো উপায় না পেয়ে আতাহার ঢাকায় চলে গেছে। তবু একদিন মেজ ভাইকে আতাহারের কথা জিজ্ঞেস করল।
নাসির উদ্দিন বলল, আমার সঙ্গে আর দেখা হয়নি। শুনেছি দশ বার দিন আগে ঢাকায় চলে গেছে।
শুনে শবনমের চোখে পানি এসে গেল। মুখ নিচু করে তার কাছ থেকে সরে গেল।
এর দুদির পর আলমাস চৌধুরী হুজুরের হুকুমে শবনমদের বাড়িতে এসে উঠানের পাশে দাঁড়িয়ে ডাক দিলেন, সাখাওয়াত সাহেব বাড়িতে আছেন?
তখন বাড়িতে কেউ ছিল না। শবনম আর তার মা ছিল। আব্বার নাম ধরে বাড়ির বাইরে কেউ ডাকছে শুনে শবনম মাকে বলল, কেউ যেন আব্বাকে ডাকছে।
যুবাইদা খানম বললেন, গায়ে মাথায় ভালো করে কাপড় দিয়ে গিয়ে দেখে আয়।
শবনম গায়ের ওড়না দিয়ে মাথা ও শরীর ঢেকে বেরিয়ে এসে আলমাসকে চিনতে পারল। খুব অবাক হয়ে সালাম দিয়ে বলল, চাচা আপনি?
হ্যাঁ মা, তুমি তা হলে সাখাওয়াত সাহেবের মেয়ে?
জ্বি।
চৌধুরী হুজুর তোমার আব্বাকে দেখা করতে বলেছেন?
আব্বা তো বাড়িতে নেই। চিটাগাং এ থাকেন।
চৌধুরী হুজুর বলেছেন, উনি বাড়িতে না থাকলে বাড়িতে আসার পর যেন ওনার সঙ্গে দেখা করেন।
ঠিক আছে বলব। তারপর বলল, আপনি বসুন চাচা।
না মা বসতে পারব না। চৌধুরী হুজুর খবরটা দিয়েই চলে যেতে বলেছেন। কথা শেষ করে আলমাস চলে গেল।