ওয়াহাবের আব্বা বখতিয়ার সাহেব ডিস্ট্রিক জজ ছিলেন। গত বছর রিটায়ার্ড করেছেন। ওঁর দুই ছেলে ও এক মেয়ে। বড় ছেলে জাপানে চাকরি করতে গিয়ে সেখানে বিয়ে করে সেটেল্ড। ছোট ওয়াহাব আর মেয়ে নাসিমা।
ছেলের কথা শুনে বললেন, তোমরা দুজনই এখন আমাদের সবকিছু। আমরা মা বাবা হলেও তুমিই নাসিমাকে গাইড দিয়ে মানুষ করেছ। তার ভালো মন্দের দায়িত্বও তোমার। আমার ও তোমার মায়ের ওকে পছন্দ। কেন বিয়ে ভেঙ্গে গেল, গিয়ে ভালো করে খোঁজ খবর নিয়ে এস।
সারা বেগম এখন মুবিনের কথা শুনে বললেন, নাসিমা তাড়াতাড়ি ফিরবে বলে গেছে। ফিরার পর মুবিনের কাছে না হয় যাবি।
ওয়াহাব আযান শুনে অজু করতে যাবে। এমন সময় জানালা দিয়ে নাসিমা ও মুবিনকে উঠোনের গেট দিয়ে ঢুকতে দেখে খুব খুশি হয়ে তাদের দিকে চেয়ে রইল। তখন তার মনে হল, ঠিক যেন একজোড়া কপোত-কপোতি। তাদেরকে পাশাপাশি আসতে দেখে আরো মনে হল, এই বাড়ির মেয়ে জামাই আসছে। ওরা দেখতে পাওয়ার আগেই জানালার কাছ থেকে সরে গেল।
নাসিমা মুবিনকে ড্রইং রুমে বসিয়ে ভাইয়ার কাছে এসে বলল, তোমাকে একটা সারপ্রাইজ দেব।
ওয়াহাব অবাক হবার ভান করে বলল, তা সারপ্রাইজটা কি শুনি?
বলব না, ড্রইং রুমে যাও। আমি আসছি বলে নাসিমা নিজের রুমে চলে গেল।
ওয়াহাব পাঞ্জাবী গায়ে দিয়ে ড্রইংরুমে এসে সালাম দিয়ে বলল, কেমন আছেন?
মুবিন সালামের উত্তর দিয়ে বলল, আলহামদুলিল্লাহ, আপনি কেমন আছেন?
ওয়াহাবও আলহামদুলিল্লাহ বলে বলল, বাড়ির সব খবর ভালো?
আল্লাহর রহমতে ভালো। জামাতের সময় হয়ে গেছে, নামায পড়ে আসি চলুন।
হ্যাঁ তাই চলুন।
নামায পড়ে এসে দু বন্ধুতে বসেছে। এমন সময় নাসিমা কাজের মেয়েকে নিয়ে নাস্তা পরিবেশন করতে করতে ভাইয়াকে উদ্দেশ্য করে বলল, তুমি তো তোমার বন্ধুকে আনতে পারনি। কাল মার্কেটে ওঁর সঙ্গে দেখা। বাসায় আসতে বলাতে বললেন, আজ আমি যদি আনতে যাই, তা হলে আসবেন। তুমি আজ এসে পড়লে। তাই ভাবলাম, তোমাকে একটা সারপ্রাইজ দেব।
ওয়াহাব বলল, সারপ্রাইজটা আজ তোকেই আমি দেব বলে ভেবেছিলাম। আল্লাহর মর্জি অন্য রকম। তাই বিপরীত ঘটনা ঘটল। তারপর মুবিনের দিকে চেয়ে বলল, নিন শুরু করুন।
নাস্তা খাওয়া হয়ে যেতে নাসিমা পট থেকে কাপে চা ঢেলে প্রথমে মুবিনকে দিল। তারপর ভাইয়াকে দেওয়ার সময় বলল, তোমার বন্ধুকে বল, উনি আজ রাতের খাবার খেয়ে যাবেন।
ওয়াহাব বলল, আমি বলব কেন? তুই গিয়ে নিয়ে আসতে পারলি, আর এই কথাটা বলতে পারলি না?
নাসিমা বলল, তুমি না থাকলে বলতাম।
ওয়াহাব মুবিনকে বলল, শুনলেন তো, আজ রাতে খেয়ে তারপর যাবেন।
মুবিন বলল, দাওয়াত কবুল করা যখন সুন্নত কখন তো আর না করতে পারি না। তবে আপনার বোন অফিস থেকে আমাকে ধরে এনেছেন। এখন বাসায় যাই। পরে আসব।
ওয়াহাব বলল, ঠিক আছে, তাই আসবেন।
রাতে খাওয়া দাওয়া করে ফেরার সময় মুবিন ওয়াহাবকে বলল, কিছু যদি মনে না করেন, তা হলে একটা কথা বলতে চাই।
ওয়াহাব বলল, মনে করার কি আছে? আপনি বলুন।
কিছুদিন আগে অভিভাবকরা এক জায়গায় আমার বিয়ের কথাবার্তা বলেছিলেন, কোনো কারণে আমি সেখানে বিয়ে করতে রাজি হইনি। এবার বাড়ি যেতে তারা আবার মেয়ে দেখার কথা বললে আমি আপনাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেছি। অবশ্য একথাও বলেছি আপনাদের মতামত জেনে তাদেরকে জানাবার পর যেন তারা আসেন।
ওয়াহাব বোনের মনের খবর আগেই বুঝতে পেরেছিল। এখন মুবিনের মনের খবর বুঝতে পেরে খুশিই হল। বলল, কথাটা বলে ভালই করলেন। আপনাকে আমাদের সবাইয়ের পছন্দ। এখন আপনি না বললে, আমি দু একদিনের মধ্যে বলব বলে ভেবেছিলাম। কিন্তু আল্লাহপাক তার আগেই আপনাকে দিয়ে কথাটা বলালেন। আপনি চিঠি দিয়ে আসতে বলুন।
মুবিন বলল, একটা অনুরোধ করব।
বলুন।
আল্লাহপাকের ইচ্ছায় যদি সব কিছু ঠিক হয়ে যায়: তবু আপনার বোন যেন না জানে আমার সঙ্গে তার বিয়ে হবে।
তা কি করে সম্ভব? আব্বা-আম্মা থাকলেও আমিই ওর অভিভাবক। আমি ওকে খুব। আদরে মানুষ করেছি। আমরা ভাইবোন হলেও খুব ফ্রিভাবে যে কথাবার্তা বলি, তা তো। আপনি নিজের চোখে দেখলেন। ওর বিয়ের ব্যবস্থা করেছি শুনলে আমার উপর ভীষণ রাগ করবে এবং মনে কষ্ট পাবে। নাসিমা বড় অভিমানী। আপনার অনুরোধ রাখতে। গেলে হিতে বিপরীত ঘটিয়ে ফেলব। তারপর কিছুক্ষণ চিন্তা করে বলল, আপনি যে কারণে ওকে জানাতে নিষেধ করলেন, সে ব্যাপারে কোনো অসুবিধা হবে না। ও বরাবরই খুব ফ্রি। আগে সবার সঙ্গেই ফ্রিভাবে মিশতো। ধর্মের দিকে ঝুঁকে পড়ার পর কারো সঙ্গে মিশে না। তবে আমার মনে হয়, বিয়ের কথাবার্তা হওয়ার পরও আপনার। সঙ্গে মেলামেশা করতে কোনো দ্বিধা করবে না।
মুবিন লজ্জা পেয়ে বলল, আপনারা দুই ভাইবোন খুব চালাক।
ওয়াহাব বলল, আমার তো মনে হচ্ছে, আমরা তিনজনেই চালাক।
এই কথায়, দুজনেই হেসে উঠল।
হাসি থামিয়ে ওয়াহাব বলল, এবার আমি কিছু বলব, মাইও করবেন না তো?
মুবিন হাসতে হাসতে বলল, আপনার কথাতেই উত্তর দিচ্ছি, মাইণ্ড করার কি আছে? বলুন।
আপনাকে আমার পছন্দ হওয়ার পর নাসিমার মনের খবর জানার চেষ্টা করি। পজেটিভ জানতে পেরে আপনার ফ্যামিলীর খোঁজ নিতে গিয়ে জানলাম, সবকিছু ভালো; কিন্তু কিছুদিন আগে আপনার বিয়ে ঠিক ঠাক হয়েছিল, মানে যে কথা আপনি একটু আগে নিজেই বললেন। শুনেছি, ঐ বিয়েতে আপনি প্রথমে রাজি ছিলেন, পরে অমত করেছেন। অমতের কারণটা বলবেন?