মুবিন সে রকম ছেলেই নয় যে, কিছু মনে করবে।
কাজটা তুমি ভালো করোনি ভাইয়া বলে নাসিমা তার কাছ থেকে চলে গেল।
ছোট বোনের মুখের অবস্থা দেখে ও তার কথা শুনে অনুমানটা আরো গাঢ় হল। মুখে মৃদু হাসি ফুটিয়ে বলল, তুই আমার একমাত্র বোন, যেমন করে হোক তোর মনের আশা পূরণ করব।
এবার বাড়ি থেকে আসার পর নাসিমার কথা মুবিনের সব সময় মনে পড়ছে। তাদের বাসায়ও যেতে ইচ্ছা করছে। কিন্তু ওয়াহাব আসছে না বলে যেতে পারছে না। দশ বার দিন হল বাড়ি থেকে এসেছে। নাসিমাকে দেখার জন্য তার মন অস্থির হয়ে উঠল। তাই একদিন ওয়াহাবের অফিসে গিয়ে খোঁজ নিয়ে জানতে পারল, সে অফিসের কাজে কয়েকদিন আগে ঢাকায় গেছে। ফিরতে আরো দু একদিন দেরি হবে।
আজ হঠাৎ মার্কেটে নাসিমার সঙ্গে দেখা। নাসিমাকে মন চুরি করার কথা বলার পরে তাকে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বলল, মাইন্ড করলেন তো? এই জন্যে কথাটা বলতে চাইনি।
নাসিমা মাথা তুলে লজ্জা মিশ্রিত কণ্ঠে বলল, মাইন্ডের বদলে যদি অন্যকিছু করি তা হলে?
তা হলে সেটা কি বললে খুশি হব।
পরে বলব, তার আগে চলুন কোনো রেস্টুরেন্টে বসে গলা ভেজান যাক।
বেশ তো চলুন ঐ সামনের রেস্টুরেন্টে।
রেস্টুরেন্টে এসে মুবিন বলল, কি খাবেন?
শুধু চা।
তা হতেই পারে না।
কেন?
প্রথম দিন আপনাকে শুধু চা খাওয়াতে পারব না। তারপর বেয়ারাকে ডেকে মিষ্টি ও চায়ের অর্ডার দিয়ে বলল, এবার বলুন।
যার চোখ আপনার মন চুরি করল, তাকে শাস্তি দিতে যাননি কেন?
প্রমাণ করার মত কোন ডকুমেন্ট ছিল না। তাই যাইনি। তবে এবার যাব।
ডকুমেন্ট পেয়েছেন?
এতদিন পাইনি। একটু আগে পেলাম।
তা হলে চোরকে শাস্তি দিতে যাচ্ছেন কবে।
মনে হচ্ছে, না যাওয়ায় চোর শাস্তি পাচ্ছে। ভাবছি, ওয়াহাব সাহেব ঢাকা থেকে আসার পর চোরকে প্রথমে এ্যারেস্ট করার ব্যবস্থা করব। তারপর আরো কঠিন শাস্তি দেব।
চোর যদি ধরা না দেয়।
আর আমি যদি বলি চোর ধরা দেবার জন্য উদগ্রীব হয়ে আছে?
নাসিমা লজ্জা পেয়ে কয়েক সেকেন্ড চুপ করে রইল। তারপর বলল, চোর কোনোদিন স্বেচ্ছায় ধরা দিতে চায় না।
যেভাবে ধরা দেয়, সেই ভাবেই ধরব।
এমন সময় বেয়ারা দুটো প্লেটে মিষ্টি ও দুকাপ চা দিয়ে গেল।
মিষ্টি খাওয়ার পর নাসিমা চায়ে চুমুক দিয়ে বলল, আর আমি যদি বলি যিনি চোর ধরতে চাচ্ছেন, তিনি অসুস্থ বন্ধুকে দেখতে গিয়ে তার বোনের মন চুরি করে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন?
তা হলে আমিও বলব, এতদিন তাকে ধরার চেষ্টা করছেন না কেন?
সে যে মেয়ে, আর চোর হল পুরুষ। মেয়েরা কি পুরুষ চোর ধরতে পারে?
নিশ্চয়ই পারে। আজ কাল কত মেয়ে পুলিশ রয়েছে। চোর ধরা তো দূরের কথা তার চেয়ে কঠিন কাজও করছে। তা ছাড়া এখন মেয়েরা সমান অধিকারের দাবী তুলছে। একজন লেখিকা তো সে বিষয়ে অনেক বইয়ে লিখেছেন। ছেলেরা যদি যেখানে সেখানে ছোট বাথরুমের কাজ সারতে পারে, তা হলে মেয়েরা পারবে না কেন? ছেলেরা যদি স্যান্ডো গেঞ্জি পরতে পারে অথবা খালি গায়ে রাস্তাঘাটে চলাফেরা করতে পারে, তা হলে মেয়েরা পারবে না কেন? ছেলেরা একসঙ্গে দুটো তিনটে বা চারটে বিয়ে করতে পারলে, মেয়েরা পারবে না কেন? পুরুষরা মেয়ে বেশ্যার কাছে যেতে পারলে মেয়েরা পুরুষ বেশ্যার কাছে যেতে পারবে না কেন? বিদেশের মতো এদেশেও পুরুষ বেশ্যালয় থাকা উচিত বলে তিনি অভিমত ব্যক্ত করেছেন। এমন কি আল্লাহপাক কোরআনের যে অংশগুলোতে নারীদের অধিকার সম্বন্ধে বর্ণনা করেছেন, সেই অংশগুলোর সংশোধন করার কথাও বলেছেন।
নাসিমা তাকে থামিয়ে দিয়ে বলল, ব্যাস ব্যাস, ঐ লেখিকার কথা আর বলবেন না, আমি তার কয়েকটা বই পড়েছি। পড়ে বুঝেছি ঐ লেখিকা একজন নাস্তিক, বিকৃতমনা, কুরুচীসম্পন্না ও জঘন্য ধরনের মহিলা। তাই দেশের লোক তার উপর ক্ষেপে যেতে তিনি ভয়ে সরকারের ছত্রছায়ায় বিদেশে পালিয়ে গেছেন। পত্র-পত্রিকা পড়ে জেনেছি, বিদেশেও পানি পাচ্ছেন না। তার কথা আলোচনা করতে ঘৃণা হয়। বাদ দেন ওসব কথা; কবে আমাদের বাসায় যাচ্ছেন বলুন।
মুবিন মৃদু হেসে বলল, আপনার ভাইয়া ঢাকা থেকে ফিরলে তারপর যাব।
ভাইয়া যে ঢাকা গেছে, সে কথা জানলেন কেমন করে?
তার অফিসে গিয়ে।
ভাইয়া না থাকলে যাওয়া যায় না বুঝি?
তা যাবে না কেন? ভেবেছি এক ঢিলে দুই পাখি মারব।
মানে?
মানে তার সঙ্গে গেলে আপনাদের বাসায় যাওয়াও হবে, আর সেই সাথে চোরকে এ্যারেষ্ট করার প্ল্যান প্রোগ্রামও করা যাবে।
নাসিমা মৃদু হেসে বলল, তাই?
মুবিনও মৃদু হেসে বলল, হ্যাঁ তাই।
চলুন এবার ওঠা যাক।
রেস্টুরেন্ট থেকে বেরিয়ে এসে মুবিন বলল, চলুন আপনাকে পৌঁছে দিই।
নাসিমাও তাই চাচ্ছিল; তবু বলল, শুধু শুধু কষ্ট করবেন কেন? আমি একটা রিক্সা নিয়ে চলে যাব।
মুবিন কিছুক্ষণ চুপ করে রইল। তারপর একটা খালি রিক্সা যেতে দেখে থামিয়ে বলল, নিন উঠুন।
মুবিনও হয়তো এক রিক্সায় উঠবে ভেবে নাসিমা ইতস্তত করল।
বুঝতে পেরে মুবিন বলল, ইতস্তত করার কোন কারণ নেই, আমি আপনার সঙ্গে যাব না।
নাসিমা লজ্জিত হয়ে বলল, মাফ করবেন, আমি আপনাকে ভুল বুঝেছিলাম। চলুন হেঁটেই যাই। মাত্র তো আধ ঘন্টার পথ।
মুবিন বলল, তা আর হয় না। আপনি রিক্সা করেই যান।