মুবিন হেসে উঠে বলল, বিয়ের কোনো নির্দিষ্ট বয়স আছে তাতো জানতাম না। অনেকে তো চল্লিশ পঞ্চাশ এমন কি ষাট-সত্তর বছর বয়সেও বিয়ে করে।
সুরাইয়া বুঝতে পারল, মুবিন ফাজলামী করছে। তাই সেও বলল, তা করে, কিন্তু তারা দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ বিয়ে করে।
মুবিন হাসতে হাসতে বলল, আমি না হয়, এক সঙ্গে চারজনকে বিয়ে করব।
দেখ মুবিন ভাই, বেশি ফাজলামী করবে না। এবার গিয়ে মেয়ের মতামত নিয়ে চিঠি দিয়ে জানাবে। আমিও তোমার বড় ভাই গিয়ে বিয়ের কথাবার্তা বলে আসব।
দেখি আল্লাহপাকের যদি মর্জি হয় বলে মুবিন বিদায় নিয়ে রওয়ানা দিল।
.
একদিন বিকেলে মুবিন বেড়াতে বেড়াতে এক ডজন বলপেন কেনার জন্য মার্কেটে গিয়ে একটা দোকানে ঢুকল।
একটু আগে নাসিমাও ঐ দোকানে এক ডজন বলপেন কেনার জন্য এসেছে। মুবিন তাকে লক্ষ্য না করলেও নাসিমা দেখতে পেয়ে সালাম দিয়ে বলল, মুবিন ভাই যে, কেমন আছেন?
নাসিমা বোরখা পরে এসেছে। দোকানে ঢুকে মুখের নেকাব সরিয়ে দিয়েছে। মুবিন সালামের উত্তর দিয়ে বেশ অবাক হয়ে বলল, আপনাকে চেনা চেনা মনে হলেও ঠিক চিনতে পারছি না।
নাসিমা বলল, চিনবেন কি করে, বন্ধু ভালো হয়ে যাবার পরে তো আর তাদের বাড়িতে যাননি। একদিনের পরিচয়ে কি আর চেনা যায়? তা কেমন আছেন বললেন না যে?
মুবিন এবার নাসিমাকে চিনতে পেরে বলল, আলহামদুলিল্লাহ। আল্লাহ যেভাবে রাখেন তাতেই সন্তুষ্ট থাকা প্রত্যেক মুসলমানের উচিত। আপনি কেমন আছেন?
আমিও আল্লাহর রহমতে এক রকম আছি। একটা প্রশ্ন করব।
করুন।
আমাদের বাড়িতে আর যাননি কেন?
এটার উত্তর এখানে বলা যাবে না। আপনার কেনাকাটা শেষ হলে চলুন, হাঁটতে হাঁটতে বলব।
হ্যাঁ হয়েছে, এক ডজন বলপেন কিনতে এসেছিলাম। আপনি কিছু কিনবেন না কি?
মুবিন মৃদু হেসে বলল, আমিও এক ডজন বলপেন কিনতে এসেছিলাম।
নাসিমাও মৃদু হেসে বলল, তাই।
.
মুবিন বলল, একটু দাঁড়ান। তারপর বলপেন কিনে বলল, চলুন।
রাস্তায় নেমে নাসিমা বলল, এবার বলুন।
দেখুন প্রশ্নটা খুব ব্যক্তিগত। ভাবছি, বলাটা ঠিক হবে কিনা।
নাসিমা মনে করল, তা হলে ভাইয়ার সঙ্গে কি মনোমালিন্য হয়েছে? তাই অনুমানটা যাচাই করার জন্য একটু জোর দিয়ে বলল, যতই ব্যক্তিগত হোক তবু শুনব।
শুনলে আপনি মাইন্ড করতে পারেন।
আমাকে মীন মাইন্ডেড ভাবলে ভুল করবেন।
যদি বলি আপনার জন্যই যাইনি।
নাসিমা দাঁড়িয়ে পড়ে তার মুখের দিকে অবাক দৃষ্টিতে চেয়ে বলল, আমার জন্য?
হ্যাঁ আপনার জন্য।
কিন্তু আমি আপনার সঙ্গে তেমন খারাপ কিছু করেছি বলে মনে পড়ছে না।
খারাপ কিছু না করলেও অন্য কিছু করেছেন। যার ফলে আপনার ভাইয়া নিয়ে যেতে চাইলেও যাইনি।
নাসিমা আরো অবাক হয়ে বলল, আমি যে কিছুই বুঝতে পারছি না। প্লিজ বলুন না কি করেছি।
শুনে মাইন্ড করবেন না বলুন।
এক্ষুণি বললাম না, আমার মন অত ছোট নয়?
প্রথম যেদিন আপনাদের বাসায় যাই, সেদিন আপনার চোখের দৃষ্টি আমার মন চুরি করে নিয়েছে।
কথাটা শুনে নাসিমা ভীষণ লজ্জা পেয়ে বেশ কিছুক্ষণ মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে রইল। ভাইয়ার মুখে মুবিনের গুণাগুণ শুনে মনে মনে তাকে ভালবেসে ফেলে। সেই সাথে ভাইয়াকে ধর্মের দিকে ঝুঁকে পড়তে দেখে তার কাছ থেকে ইসলামকে জেনে সেও ঝুঁকে পড়ে এবং মুবিনকে আরো বেশি ভালবেসে ফেলে। সেই জন্য তাকে বাড়িতে নিয়ে আসার জন্য ভাইয়াকে বলে। ভাইয়ার অসুখের সময় মুবিন তাকে দেখতে এলে তার মনের আশা পূরণ হয়। তারপর ভাইয়া সুস্থ হয়ে যাওয়ার পর অনেক দিন যখন এল না তখন একদিন ভাইয়াকে বলল, তোমার বন্ধু আর আসেনি কেন? তার সঙ্গে কি তোমার মানোমালিন্য হয়েছে?
ওয়াহাব হেসে উঠে বলল, মুবিনের মতো ছেলের সঙ্গে কারো মনোমালিন্য হতেই পারে না।
তা হলে ওঁকে আর আননি কেন?
কয়েকবার আনতে চেয়েছি; প্রত্যেক বারই বলে, একটু ব্যস্ত আছি, পরে যাব। ঠিক আছে, কাল দেখা হলে তোর কথা বলব।
নাসিমা লজ্জা পেয়ে বলল, না না, আমার কথা বলবে কেন? তোমার সঙ্গে মনোমালিন্য হয়েছে কিনা জানার জন্যে জিজ্ঞেস করলাম।
নাসিমার মুখে লজ্জার আভা দেখে ওয়াহাবের মনে হল, তা হলে কি মুবিনকে নাসিমা পছন্দ করে? বলল, কাল ওকে যেমন করে হোক নিয়ে আসব।
বলল আমার কথা বলবে না কিন্তু।
পরের দিন মুবিনের অপিস ছুটির সময় ওয়াহাব তার অফিসে গিয়ে সালাম ও কুশল বিনিময় করে বলল, সত্যি করে বলুন তো আমাদের বাসায় যেতে চান না কেন?
মুবিন মৃদু হেসে বলল, আমি কি বলেছি যাব না।
তা অবশ্য বলেন নি; কিন্তু যান ওতো না। আপনি যান না বলে নাসিমা মনে করেছে আপনার সঙ্গে আমার মনোমালিন্য হয়েছে।
তাই নাকি? তা হলে তো একদিন যেতেই হয়।
একদিন কেন, আজই চলুন না।
কিছু মনে করবেন না। কাল বাড়ি যাব। আজ কিছু কেনাকাটা করব। বাড়ি থেকে ফিরে এসে একদিন যাব।
কত দিন পরে ফিরবেন?
চারদিনের ছুটি পেয়েছি।
ঠিক আছে, ফিরে আসুন, তারপর দেখা হবে। এই কথা বলে বিদায় নিয়ে ওয়াহাব বাসায় এসে নাসিমাকে কথাটা জানাল।
নাসিমা বলল, আমার কথা বলনি তো?
প্রথমে বলিনি, যখন দেখলাম অজুহাত দেখাচ্ছে তখন তোর কথা বললাম। তোর কথা শুনেই তো ঐ কথা বলল।
নাসিমা লজ্জায় রাঙ্গা হয়ে মিষ্টি ধমকের সুরে বলল, তোমাকে আমার কথা বলতে নিষেধ করলাম, তবু বললে? ছিঃ ছিঃ ভদ্রলোক কি মনে করলেন?