সুবহানাল্লাহে ওয়া বেহামদিহি সুবহানাল্লাহিল আজিম বলে চৌধুরী হুজুর বললেন, তুমি খুব মূল্যবান কথা জানতে চেয়েছ। বলছি শোন, প্রত্যেক মুসলমানের উচিত বিপদগ্রস্থকে সাহায্য করা। কেউ যদি তা করে, তার প্রতি আল্লাহ ও তাঁর রসূল (দঃ) খুশী হন। আর তাঁদেরকে খুশী করাও প্রত্যেক মুসলমানের কর্তব্য। শবনমকে নিয়ে তুমি যে বিপদে পড়েছ, সেই বিপদে সাহায্য করতে হলে এই পথে করতে হবে। আর অযাচিত দানের কথা যে বললে, তা তোমার জন্য জায়েজ। তবে তুমি যদি পার, তা হলে পরিশোধ করে দিও। তবে তা নগদ টাকায় নয়। আমি যা বলব তাই করতে হবে।
বলুন কি করতে হবে।
আমি কিন্তু কোনো প্রতিদান পাওয়ার আশায় তোমাকে সাহায্য করতে চাচ্ছি না। আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (দঃ) কে খুশী করার জন্য চাচ্ছি। তবু তুমি যখন দ্বিধা করছ তখন পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের পর আমার জন্য সব সময় দোয়া করবে। আল্লাহপাক যেন আমাকে ঈমানের সঙ্গে মউত দেন, কবরের আজাব থেকে রেহাই দেন, আর হাশরের মাঠে রাসূল (দঃ) এর শাফায়াত নসীব করেন। আর কেউ যদি বিপদে পড়ে তোমার কাছে সাহায্য চায় অথবা কেউ বিপদে পড়েছে জানতে পার, তা হলে তাকে যথাসাধ্য সাহায্য করবে।
চৌধুরী হুজুরের কথা শুনে আতাহারের আব্বার কথা মনে পড়ল, খবরদার ওঁর সঙ্গে বেয়াদবি করবি না। উনি যা বলেন শুনবি। উনি খুব বুজুর্গ লোক। আব্বার কথাটা মনে পড়তেই ভাবল, কৈফিয়ৎ চেয়ে খুব বেয়াদবি করে ফেলেছি। তাড়াতাড়ি কদমবুসি করে বলল, আমি এই সব জানতে চেয়ে অন্যায় করেছি, আমাকে মাফ করে দিন। আমি আপনার কথায় রাজি।
চৌধুরী হুজুর আলহামদুলিল্লাহ বলে বললেন, আমি তোমার কাছ থেকে এটাই আশা করেছিলাম। আর তুমি অন্যায় কিছু করনি। বরং মনে কোনো সন্দেহ রাখা উচিত নয়। তারপর জিজ্ঞেস করলেন, ঢাকায় তুমি থাক কোথায়, মেসে না কোনো আত্মীয়ের বাসায়?
চৌধুরী হুজুর সুবহানাল্লাহ বলে তার হাতে তিন হাজার টাকা দিয়ে বললেন, কাল তুমি ঢাকা চলে যাও। কয়েকদিন পর এ থেকে এক হাজার টাকা তোমার আম্মাকে পাঠিয়ে দেবে। তুমি তো খুব ভালো ছাত্র ছিলে। এখন থেকে পড়াশোনা আরম্ভ কর। দরকার মনে করলে একজন মাস্টারের কাছে প্রাইভেট পড়ো। আর তোমার মামাকে বলবে, তিনি যেন সামনের বছর পরীক্ষা দেওয়ার ব্যবস্থা করে দেন। তুমি প্রতি মাসে সময় মতো দুহাজার টাকা পাবে।
আতাহার বলল, চাকরি ছেড়ে দিয়ে পড়াশোনা করার কথা জানার পর মামা জিজ্ঞেস করলে কি বলব?
চৌধুরী হুজুর একটা মুখবন্ধ খাম তার হাতে দিয়ে বললেন, ঢাকায় গিয়ে এটা তার হাতে দিও। তা হলে তিনি কিছু জিজ্ঞেস করবেন না। আর যা-যা তোমাকে বলেছি, সে সবের বরখেলাপ কিছু করবে না। আল্লাহ তোমার সহায় হোক। এবার তুমি যাও।
আতাহার কৃতজ্ঞতায় চোখের পানি রোধ করতে পারল না। আর একবার কদমবুসি করে ভিজে গলায় বলল, আপনি দোয়া করবেন হুজুর, আল্লাহ যেন আপনার কথা মেনে চলার তওফিক আমাকে দেন।
চৌধুরী হুজুর চোখ বন্ধ করে বললেন, ফি আমানিল্লাহ। আতাহার সালাম বিনিময় করে চলে এল।
ঘরে এসে মাকে বলল, আমি কাল ঢাকা যাব।
৩. মুবিন বিয়ে করবে না
০৯.
মুবিন এখন বিয়ে করবে না বলে চিঠি দেওয়ার তিন মাস পর বাড়িতে এল। বড় ভাবি সুরাইয়া ছোট দেবরকে খুব স্নেহ করেন। সে এ বাড়িতে বৌ হয়ে আসার পর শ্বশুড়ী মারা গেছেন। সেই জন্য বাড়ির বড় বৌ হিসাবে সবাইর দিকে লক্ষ্য রাখলেও মুবিন সবার ছোট বলে তার দিকে বেশি লক্ষ্য রাখে। শবনমকে মুবিনের সঙ্গে ভালো মানাবে ভেবে নিজেই বিয়ের কথা বলেছিল। মুবিন অমত করে চিঠি দিতে তার উপর রেগেছিল। বাড়িতে এসে সে তার সঙ্গে দেখা করতে এলে বলল, তুমি যদি এখন বিয়েই করবে না, তা হলে গতবার এসে যখন বিয়ের কথা শুনলে তখনই তা জানালে না কেন? ভাবিদের কাছে ও তার মা-বাবার কাছে আমরা যে অপমানিত হলাম, সে কথা চিন্তা করেছ?
মুবিন কি বলবে ভেবে ঠিক করতে না পেরে চুপ করে রইল।
কি হল কিছু বলছ না কেন? আমার তো মনে হচ্ছে এর মধ্যে কোনো রহস্য আছে।
কি রহস্য থাকতে পারে বলে তোমার মনে হয়?
ভোলাতে কোনো মেয়ের প্রেমে হয়তো পড়েছ।
মুবিন হেসে উঠে বলল, প্রেম কি এতই সস্তা যে, মেয়ে দেখলাম আর প্রেম হয়ে গেল।
একে অপরকে দেখেই তো ছেলে-মেয়েরা প্রেমে পড়ে।
তোমার কথা অবশ্য ঠিক; তবে আমার সেরকম কিছু হয়নি।
তা হলে মনের মতো কোনো মেয়ের সঙ্গে নিশ্চয় পরিচয় হয়েছে?
তুমি আমার উপর রেগে রয়েছ, তাই আন্দাজে ঢিল ছুঁড়ছ।
রেগে থাকাটা কি অন্যায় ভাবছ?
না, সেটাই স্বাভাবিক।
তা হলে আসল কথাটা বলছ না কেন?
পরে বলব বলে মুবিন তার কাছ থেকে চলে গেল।
কয়েকদিন পর মুবিন চলে যাওয়ার জন্য যখন বড় ভাবির কাছে বিদায় নিতে গেল তখন সুরাইয়া বলল, আসল কথাটা না বলে চলে যাচ্ছ যে?
মুবিন বলল, মাফ কর ভাবি, সেটা বলতে পারব না। তবে এতটুকু বলতে পারি, ভোলায় একটা মেয়েকে পছন্দ হলেও মেয়েটি আমাকে পছন্দ করে কি না এখনো জানতে পারিনি।
সুরাইয়া বলল, তাই বল, আমিও কিন্তু ঐরকম কিছু ভেবেছি। তা মেয়েটার মনের খবর জানতে চেষ্টা করনি?
না।
কেন?
এসব ব্যাপারে তাড়াহুড়া করা আমি ভালো মনে করি না।
কিন্তু বিয়ের বয়স যে পার হয়ে যাচ্ছে, সে কথা চিন্তা করনি?