সামসুদ্দিন বলল, হ্যাঁ চাচা আপনার কথাই ঠিক। এবার আসি, তারপর সালাম বিনিময় করে চলে এল।
ছুটি শেষ হওয়ার পর সামসুদ্দিন কর্মস্থলে চলে গেল।
আব্বা আপাদের বাড়িতে কেন গিয়েছিল, শবনম তা বুঝতে পারলেও কি হল, না হল, জানতে পারল না।
মাসখানেক পর খালেদা বাপের বাড়িতে কয়েকদিনের জন্য বেড়াতে এল। একদিন শবনমকে বলল, ভালো করে পড়াশোনা করে ভালো রেজাল্ট করার চেষ্টা করবি। আমার বড় ননদ বলছিল, তার দেবর বলেছে, বিয়ের পর তোকে ভোলাতে নিজের কাছে রেখে কলেজে পড়াবে।
আপার কথা শুনে শবনম বুঝতে পারল, বিয়ের কথা তা হলে ঠিক হয়ে গেছে। ভাবল, এখনই আপাকে নিজের মতামত জানান দরকার। কিন্তু কিভাবে বলবে চিন্তা করতে লাগল।
তাকে চুপ করে থাকতে দেখে খালেদা বলল, কিরে চুপ করে কি ভাবছিস? তারপর বলল, তোর ভাগ্য খুব ভালো। ছেলেটা যেমন সৎ তেমনি আচার ব্যবহারও খুব সুন্দর।
শবনম বলল, ভাগ্যের কথা আল্লাহ জানে। আপা তোমাকে একটা কথা বলছি, আমি কিন্তু এই বিয়েতে রাজি না।
খালেদা মায়ের কাছে শবনমের ও আতাহারের সম্পর্কের কথা শুনেছে। এখন তার অমতের কথা শুনে ব্যাপারটা বুঝতে পেরেও না বুঝার ভান করে জিজ্ঞেস করল, কেন?
আমি আতাহার ভাইকে ভালবাসি।
তাতে কি হয়েছে? কারো সঙ্গে ভালবাসা হলেই যে, তার সঙ্গে বিয়ে হবে, এটা ঠিক নয়। তা ছাড়া আতাহার তোর চেয়ে কম শিক্ষিত। তাদের অবস্থাও খুব খারাপ। আমার ননদের দেবরের কাছে আতাহার কিছুই না। ওসব বদখেয়াল ছেড়ে দে।
কিন্তু আপা, আমরা একে অপরকে ছোটবেলা থেকেই ভালবাসি। তাকে ছাড়া আমি যেমন বাঁচব না, তেমনি আমাকে ছাড়া সেও বাঁচবে না। সেজন্য আমরা প্রতিজ্ঞা করেছি, কেউ কাউকে ছাড়া বিয়ে করব না।
এ তুই কি বলছিস শবনম? প্রতিজ্ঞা করার আগে আমাদের ও আতাহারদের অবস্থার কথা চিন্তা করলি না। আব্ব ও সামসুদ্দিন শুনলে তোকে আস্ত রাখবে? এবার আব্বা চর খলিফায় গিয়ে আমার ননদের শ্বশুরের সঙ্গে এক রকম কথাবার্তা ঠিক করে এসেছে। তোর পরীক্ষার পর বিয়ে হবে।
শবনম চোখের পানি ছেড়ে দিয়ে বলল, না আপা না, এ কখনই সম্ভব নয়। তোমরা যদি জোর করে আমার বিয়ে দাও, তবে আমার লাশের বিয়ে হবে।
খালেদা খুব রেগে গিয়ে তার গালে একটা চড় মেরে বলল, তোর এতবড় সাহস। যতবড় মুখ নয় ততবড় কথা। একটা গরিব এতিম ছেলের জন্য আত্মহত্যা করার ভয় দেখাচ্ছিস? তারপর মাকে ডেকে বলল, আম্মা, শবনম কি বলছে শুনবে।
শবনম ভাবতেই পারেনি আপা তাকে মারবে। ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠে বলল, তুমি আমাকে মারলে আপা?
খালেদা রাগের সঙ্গেই বলল, আমি না হয় একটা চড় মেরেছি। আম্মা জানতে পারলে তোকে মেরে খুন না করে ফেলে।
যুবাইদা খানম রান্নাশালে আনাজ কূটছিলেন। খালেদার কথা শুনে তাদের কাছে। এসে শবনমকে কাঁদতে দেখে ঘটনাটা আঁচ করতে পেরেও বড় মেয়েকে জিজ্ঞেস করলেন, কি হয়েছে ওকে বকছিস কেন? আর ও কাঁদছেই বা কেন?
খালেদা বলল, ওকে আমি আমার বড় ননদের দেবরের সঙ্গে বিয়ের কথা বলতে বলে কিনা, ও আতাহারকে ভালবাসে। তাকে ছাড়া অন্য কোথাও বিয়ে বসবে না। তাই মেরেছি।
যুবাইদা খানম রাগ সামলাতে পারলেন না। বললেন, ঠিক করেছিস। তারপর শবনমের চুল ধরে পিঠে কয়েকটা কিল মেরে বললেন, ঐ কথা যদি আবার মুখে আনিস, তা হলে তোকে খুন করে ফেলব।
শবনম মায়ের দুপা জড়িয়ে ধরে বলল, তাই কর মা তাই কর। আমি আতাহার ভাইকে ছাড়া অন্য কোথাও বিয়ে বসব না।
এই কথা শুনে যুবাইদা খানম আরো মারতে লাগলেন।
খালেদা চিন্তা করল, সামনে ওর পরীক্ষা, এখন বেশি মারধর করলে ভালভাবে পড়াশোনা করতে পারবে না। তাই মাকে ধরে ফেলে বলল, এখন আর মারার দরকার নেই। ছেলেমানুষী বুদ্ধিতে কি বলতে কি বলে ফেলেছে। আমি ওকে বোঝাব। তারপর। মাকে পাশের রুমে নিয়ে গিয়ে বলল, এখন ওর উপর অত্যাচার করা ঠিক হবে না। কারণ সামনে পরীক্ষা। পরীক্ষার পরপর ওর বিয়ের কাজ সেরে ফেলতে হবে। যে কদিন আছি ওকে আমি বোঝাব।
যুবাইদা খানমের রাগ তখন কিছুটা কমেছে। ভাবলেন, খালেদা ঠিক কথাই বলেছে। কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বললেন, হ্যাঁ তুই ওকে বুঝিয়ে বলবি, ও যেন আতাহারের কথা ভুলে যায়। তারপর রান্নাঘরে চলে গেলেন।
খালেদা শবনমের কাছে এসে তার গায়ে মাথায় হাত বুলিয়ে প্রবোধ দিতে দিতে বলল, ঠিক আছে, তোকে আমরা আর কিছু বলব না। এখন ঐসব চিন্তা দূর করে মন দিয়ে পড়াশোনা কর। বিয়ে শাদী তকদিরের ব্যাপার। কাকে কার সঙ্গে জোড়া করে পয়দা করেছে, সে কথা আল্লাহ জানে।
আতাহারের কথা জেনে আম্মা যে মারধর করবে, তা শবনম জানত। কিন্তু আপা তাকে মারবে, সে চিন্তাই করতে পারেনি। এখন আবার তার নরম সুর শুনে তার উপর। প্রচন্ড অভিমান হল। কোনো কথা না বলে ফোঁপাতে ফোঁপাতে পড়ার রুমে চলে গেল।
এরপর যে কদিন খালেদা ছিল, সেই কদিন শবনম তার সঙ্গে কথা বলেনি। তার ছেলে-মেয়েকে আদরও করেনি। কয়েকদিন পর দুলাভাই আপাকে নিয়ে যেতে এল। তারসঙ্গে কথা বললেও আগের মতো ধারে কাছে গেল না।
মজিদ একদিন স্ত্রীকে জিজ্ঞেস করল; কি ব্যাপার বলতো, শবনমের কি হয়েছে? সব সময় মন খারাপ করে থাকে। আমার কাছেও বড় একটা আসে না।
খালেদা মিথ্যা করে বলল, মেয়েদের অনেক রকম অসুখ হয়। সেই রকম কিছু একটা হয়েছে, তাই আর কি।