যুবাইদা খানম বললেন, খালেদার বিয়ে দেবার সময় তো তার শ্বশুরদের সবকিছু জেনেছ। এই ছেলে তো তাদেরই আত্মীয়। সে রকম কিছু হলে খালেদা রাজি হত না।
সাখাওয়াত হোসেন বললেন, তোমার কথা অবশ্য ঠিক। তবু আমি গিয়ে খোঁজ খবর নেব।
যুবাইদা খানম বললেন, বেশ তো, দু-একদিনের মধ্যে গিয়ে খোঁজ খবর নিয়ে এস।
সাখাওয়াত হোসেন দুদিন পর চরখলিফায় মেয়ের বাড়ি গেলেন। খালেদার ননদের বিয়ে হয়েছে একই গ্রামে। ছুটিতে জামাই বাড়িতে ছিল। জামাই মজিদের কাছে সবকিছু শুনে একদিন তাদের বাড়িতে গিয়ে দেখে শুনে সাখাওয়াত হোসেনের পছন্দ হল। তিনি পাত্র পক্ষকে দাওয়াত দিয়ে বললেন, আপনারা আমাদের বাড়িতে এসে সবকিছু দেখাশোনা করুন। তারপর বিয়ের কথাবার্তা পাকা করা হবে এবং শবনমের এস.এস.সি পরীক্ষার পর দিন ঠিক করা হবে।
বাড়ি ফিরে সাখাওয়াত হোসেন স্ত্রীকে সব কিছু বলে বললেন, এর মধ্যে সামসুদ্দিনের জন্য মেয়ে দেখতে হবে। ঠিক করেছি, সামসুদ্দিনের ও শবনমের বিয়ে একসঙ্গে দেব।
যুবাইদা খানম বললেন, আমারও তাই ইচ্ছা।
সাখাওয়াত হোসেন বললেন, ফজল ঘটকের সাথে আজ বাজারে দেখা হয়েছিল। তাকে সামসুদ্দিনের জন্য একটা মেয়ে দেখতে বলতেই বলল, চৌকির ঘাটে একটা মেয়ে। আছে। মেয়েটা বি.এ. পড়ছে। নামায কালাম পড়ে। দেখতে শুনতে ভালো। বনেদী বংশের মেয়ে। তবে তার বাবার অবস্থা তেমন ভালো না। ভদ্রলোকের চেীকির ঘাটেই একটা ভাতের হোটেল আছে। হোটেলের আয়ে সংসার চলে। জমি-জায়গা নেই বললেই চলে। মেয়েটাই বড়। আরো দুতিনটে ছোট ছোট ভাইবোন আছে। মেয়েটা হস্তশিল্পের কাজ খুব ভালো জানে। সেই কাজ করে নিজের পড়াশোনার খরচ নিজেই চালায়।
যুবাইদা খানম বললেন, সামসুদ্দিন ঐ রকম ঘরে বিয়ে করতে রাজি হবে বলে মনে হয় না। তা ছাড়া তাদের সঙ্গে আমাদের আত্মীয়তা করা কি ঠিক হবে? মান-সম্মান বলে একটা কথা আছে। তুমি অন্য কোথাও সম্ভ্রান্ত ঘরের কোনো মেয়ের খোঁজ করতে ফজল ঘটককে বল।
সাখাওয়াত হোসেন বললেন, তা না হয় বলব; কিন্তু আজকাল সম্ভ্রান্ত ঘরের মেয়েরা নামায কালামের ধার ধারে না। তাদের লজ্জা শরমও কম।
যুবাইদা খানম বললেন, সবাই কি এক রকম হয়। এর মধ্যে দেখেশুনে করতে হবে। চৌকির ঘাটের যে মেয়ের কথা বলছ, তার বাবা তো মেয়ে জামাইকে কিছুই দিতে পারবে না। সামসুদ্দিনের মত শিক্ষিত ও চাকরিওয়ালা ছেলের সেই রকম উপযুক্ত ঘরে বিয়ে না হলে আত্মীয়-স্বজনরাই বা কি বলবে। না না, ঐ মেয়ে যতই ভালো হোক আমরা তাকে বৌ করে আনতে পারব না।
সাখাওয়াত হোসেন অসন্তুষ্ট গলায় বললেন, তুমি যে লেনদেনের কথা বললে, তা আমি মেনে নিতে পারলাম না। ছেলের বিয়ে দিয়ে মেয়ের বাবার কাছ থেকে দাবি করে কিছু নেওয়া শরীয়তে নিষেধ। সামসুদ্দিনকে তো আমি চিনি, শুনলে সেও রেগে যাবে। কি জান, আমাদের মতো সামর্থবানরা গরীব ঘরের মেয়েদেরকে গ্রহণ করছি না বলেই অনেক ভালো ভালো মেয়ের বিয়ে হচ্ছে না। যদিও কারো কারো হচ্ছে। সে সব মেয়েরা এমন ছেলের হাতে পড়ছে, যাকে বলে বানরের গলায় মুক্তার মালা। বানরেরা তো মুক্তার কদর বুঝে না। তারা সেটাকে সিঁড়ে ছিন্নভিন্ন করে দিচ্ছে। আমাদের নবী করিম (দঃ) বিয়ের ব্যাপারে পুরুষদেরকে বলেছেন, ধন দৌলতের চেয়ে ধার্মিক মেয়ে বিয়ে করবে। তিনি আরো বলেছেন, ধনদৌলতের চেয়ে ধার্মিক স্ত্রী অতি উত্তম।-এসব হাদিসের কথা। আজকাল মানুষ ধনদৌলতের লোভে আল্লাহ ও তাঁর রসূল (দঃ) এর কথা ভুলে গেছে। তাই মুসলমানদের এত দূর্গতি। যাই হোক, তবু আমি ফজল ঘটককে বড় ঘরের ভালো মেয়ের খোঁজ নিতে বলব। তারপর তকদিরে যা আছে, তা তো হবেই।
সাখাওয়াত হোসেনের ছুটি শেষ, তিনি এক সপ্তাহ থেকে চলে গেলেন।
সামসুদ্দিন অনেক দিন পর পনের দিনের ছুটি নিয়ে এসেছে। সে আরো এক সপ্তাহ থাকবে। সামসুদ্দিন তার বিয়ের ব্যাপারে মা-বাবার কথোপকথন শুনেছে। সে ফজল ঘটককে চিনে। খালেদার ঘটকালি সেই করেছিল। তার বাড়ি গুপ্তগঞ্জে। সেও সামসুদ্দিনকে চিনে। একদিন সামসুদ্দিন ফজল ঘটকের সাথে দেখা করে চৌকির ঘাটের মেয়েটাকে দেখাবার ব্যবস্থা করতে বলল।
ফজল ঘটক সেই দিনই তাকে সঙ্গে নিয়ে ছুটির সময় কলেজের কাছা-কাছি রাস্তায় অপেক্ষা করতে লাগল। কিছুক্ষণের মধ্যে দুজন মেয়েকে আসতে দেখে বলল, ডানদিকের মেয়েটি।
মেয়েটিকে দেখে সামসুদ্দিনের পছন্দ হল। মেয়ে দুটি তাদেরকে পাশ কাটিয়ে চলে যাওয়ার পর বলল, বাড়িতে গিয়ে আম্মাকে বলবেন, আমি এই মেয়েকে বিয়ে করব।
ফজল ঘটকের বয়স পঞ্চাশের মত। বলল, বাবাজী তোমার পছন্দের তারিফ না করে পারলাম না। সারা জীবন ঘটকালি করলাম, কিন্তু এরকম পয়মন্ত মেয়ে আর একটাও দেখিনি। যাদেরকে আল্লাহ দেখার মত চোখ দিয়েছে, তারাই এই মেয়েকে দেখলে পছন্দ করবে। আমি হলফ করে বলতে পারি, এই মেয়েকে বিয়ে করলে ইনশাআল্লাহ তুমি সুখ শান্তিতে জীবন কাটাতে পারবে।
সামসুদ্দিন বলল, আল্লাহপাক আমাকে যতটুকু জ্ঞান দিয়েছেন, তাতেই মেয়েটিকে দেখে আপনার সঙ্গে আমি একমত। মেয়েটির নাম জানেন চাচা?
নিশাত তামান্না। নামও যেমন, গুণও তেমন।
নামের অর্থটা বলবেন?
আকাঙ্খিত আনন্দ। তারপর হেসে উঠে বলল প্রত্যেক মানুষই আনন্দ আকাঙ্খা করে।