এখন শামীর কথা শুনে বলল, আপনাকে চিনব না কেন? আপনি তো শামী ভাই। আগেও কয়েকবার আপার কাছে এসেছেন।
শামী এত ছোট ছেলের কথা শুনে অবাক হল। মৃদু হেসে বলল, তোমার আপাকে। একটু ডেকে দাও তো।
লিটন ছুটে বাড়ির ভিতরে জোবেদার কাছে গিয়ে বলল, বড় আপা, শামী ভাই এসেছে, তোমাকে ডাকছে।
জোবেদা ছোট ভাইয়ের একটা হাত ধরে বলল, বড়দের সম্বন্ধে কোনো কথা বলতে হলে আপনি করে বলতে হয় বুঝলি? বলবে শামী ভাই এসেছেন, তোমাকে ডাকছেন।
লিটন মাথা নেড়ে বলল, আচ্ছা। তারপর হাতটা ছাড়িয়ে নিয়ে ছুটে সাথীদের কাছে চলে গেল।
জোবেদা হাতের কাজ ফেলে সদরে এসে দেখল, শামী দাঁড়িয়ে আছে। সালাম দিয়ে বলল, শামী ভাই যে, কেমন আছেন? আসুন, ভিতরে এসে বসুন।
শামী সালামের উত্তর দিয়ে ভিতরে এসে বসে বলল, আমি এক রকম আছি। তুমি কেমন আছ বল।
জোবেদা বলল, মেয়েদের ভালো থাকা আর না থাকা একই কথা। পড়াশোনা বন্ধ করে মা বাবার সংসারে খেটে মরছি। কিছুদিন পর স্বামীর সংসারে গিয়ে আবার সারাজীবন খেটে মরতে হবে। এই তো মেয়েদের জীবন, তাই না শামী ভাই?
শামী তার কথা শুনে বেশ অবাক হয়ে বলল, কি ব্যাপার? তোমার আবার কি হল? এ রকম করে কোনো দিন বলনি তো?
জোবেদা হেসে উঠে বলল, না শামী ভাই, আমার কিছু হয় নি। কথাটা হঠাৎ মনে এল, তাই বলে ফেললাম।
শামী বলল, তাই বল। আমি মনে করেছিলাম, কোনো কিছু আবার হল কিনা। যাক, এখন আমার একটা কাজ করে দিতে হবে।
শামী ভাই কি কাজ করতে বলবে তা জোবেদা অনুমান করতে পারল। তবু বলল, বলুন কি কাজ, সাধ্যমত চেষ্টা করব।
শামী বলল, ফাহমিদাকে একটু ডেকে নিয়ে আসতে হবে।
জোবেদা হেসে উঠে বলল, ঠিক আছে, চা করে নিয়ে আসি, চা খান। ততক্ষণে আমি ফাহমিদাকে এনে হাজির করব। তারপর সে বাড়ির ভিতরে চলে গেল।
একটু পরে জোবেদা এক কাপ চা ও একবাটি সর্ষের তেল মাখান মুড়ি এবং এক গ্লাস পানি এনে টেবিলের উপর রেখে বলল, আপনি খান, আমি যাব আর আসব। কথা শেষ করে বেরিয়ে গেল।
শামী চা মুড়ি খেতে খেতে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করতে লাগল।
জোবেদা ফাহমিদাদের বাড়িতে গিয়ে তাকে বলল, তোকে এক্ষুনি আমার সঙ্গে যেতে হবে।
কোথায়?
কোথায় আবার, আমাদের বাড়িতে।
কেন?
শামী ভাই তোর সাথে দেখা করতে এসেছেন।
শামীর কথা শুনে ফাহমিদা একবার চমকে উঠে চুপ করে রইল।
কিরে, শামী ভাইয়ের বথা শুনে চমকে উঠলি কেন? আর চুপ করেই বা রয়েছিস কেন? প্রেমিকের খবর প্রেমিকার কাছে নিয়ে এলাম পুরস্কার দিবি না?
পুরস্কার পরে দেব। শামী এসে ভালই হয়েছে। তার সঙ্গে আজ ফাইন্যাল বোঝাঁপড়া করে নিতে হবে।
তুই এভাবে কথা বলছিস কেন? শামী ভাইকে দেখে মনে হল, তোকে দেখার জন্য পাগল হয়ে রয়েছে। তোদের মধ্যে কি কোনো ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে?
তোর কথাটা কিছুটা সত্য। আব্বা-আম্মা আমার খালাত ভাই মালেকের সাথে বিয়ে দেওয়ার জন্য সব ঠিকঠাক করে ফেলেছে। মালেক শামীর চেয়ে সব দিক থেকে শ্রেয়। তাদের বাড়ি গাড়ি আছে। মালেক আমেরিকায় চাকরি করে। বিয়ে করে আমাকে সেখানে নিয়ে চলে যাবে। সূর্যের সামনে চাঁদ যেমন, মালেকের পাশে শামী তেমন। জেনে শুনে শামীর জন্য মালেককে হারাতে পারব না। তা ছাড়া আব্বার মতের বাইরে কিছু করার। ক্ষমতা আমার নেই। তাই সে কথা শামীকে জানিয়ে আজ আমি মুক্ত হয়ে যাব।
ফাহমিদার কথা শুনে জোবেদা যেন আকাশ থেকে পড়ল! সামলে নিয়ে বলল, তা হলে এতদিন তুই শামী ভাইকে ভালবাসলি কেন? তিনি যে তোকে ভীষণ ভালবাসেন, তোকে না পেলে বাঁচবেন না, আর বাঁচলেও পাগল হয়ে যাবেন, সে কথা তুইতো কতবার আমাকে বলেছিস। আর তুইও তো তাকে ভীষণ ভালবাসিস। আমিও তোদের দুজনের গভীর ভালবাসার কথা জানি। এতবড় বিশ্বাসঘাতকা করতে পারবি? তোর কাছে গাড়ি বাড়ি আমেরিকা বড় হল? এত বছরের ভালবাসার কোনো মূল্য নেই। তোর মতো সার্থপর মেয়ে জীবনে আর কাউকে দেখি নি।
ফাহমিদা বলল, তোর মনে যা চায় তা বলতে পারিস। কিন্তু আমি কিছুতেই শামীকে গ্রহণ করতে পারব না। আজ থেকে তার সঙ্গে আমার কোনো সম্পর্ক থাকবে না। সে কথা তাকে জানিয়ে দেব। শামীব কি আছে? কি দিয়ে সে আমাকে সুখী করবে?
জোবেদা বলল, তুই যে এত নির্দয় তা জানতাম না। যাই হোক চল, তোর কথা তুই তার সামনে বলবি।
তারপর তারা শামীর কাছে এল।
ফাহমিদাকে দেখে শামী সালাম দিল।
ফাহমিদা সালামের উত্তর না দিয়ে মাথা নিচু করে রইল।
তাই দেখে জোবেদা সালামের উত্তর দিয়ে বলল, শামী ভাই আপনারা কথা বলুন। আমি কিছুক্ষণ পরে আসছি। এই কথা বলে সে রুমের বাইরে এসে দরজার আড়ালে দাঁড়াল।
জোবেদা চলে যাওয়ার পর শামী বলল, এতদিন তোমার কোনো খবর না পেয়ে কি ভাবে দিন কেটেছে, তা আল্লাহ জানেন। তোমার কণ্ঠস্বর শোনার জন্য উদগ্রীব হয়ে রয়েছি। তোমাকে সালাম দিলাম, তার উত্তরও দিলে না। এখন আবার চুপ করে রয়েছ। হেতুটা কি বলবে? তবু যখন ফাহমিদা কোনো কথা বলল না তখন আবার বলল, তোমার কাছে আমি কোনো অপরাধ করেছি বলে মনে হয়নি। যদি অজান্তে করেও থাকি, তা হলে ক্ষমা চাইছি। তবু চুপ করে থেক না। মুখ তুলে আমার দিকে চাও, প্লীজ। কি কারণে তুমি আমাকে এত কষ্ট দিচ্ছ বল ফাহমিদা বল।
আজ ফাহমিদার কাছে শামীর কথাগুলো অসহ্য মনে হতে লাগল। মুখ তুলে শামীর দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল, তোমার বকবকানি থামাও। এইসব শোনার জন্য আমি আসিনি। যে জন্য এসেছি তা বলছি শোন, তোমাকে আমি আগে ভালবাসতাম। তাই তখন তোমার সঙ্গে কিছুদিন প্রেম প্রেম খেলেছি। এখন আর তোমাকে ভালবাসি না। তাই তোমার সঙ্গে এতদিন যোগাযোগ করিনি। আজও আসতাম না। এই কথা বলার জন্য এসেছি। এখন থেকে তোমার সঙ্গে আমার কোনো সম্পর্ক নেই। আমি তোমাকে ঘৃণা করি। আর জেনে নাও, কিছু দিনের মধ্যে আমার খালাত ভাইয়ের সাথে আমার বিয়ে হবে। সুতরাং বুঝতেই পারছ, আমাকে নিয়ে তোমার চিন্তা করা আকাশ কুসুম ভাবার নামান্তর। আমার কথা শুনে তুমি হয়তো দুঃখ পাচ্ছ; তা অবশ্য পাবারই কথা। কিন্তু কখনো ভেবে দেখেছ কি, তুমি আমার উপযুক্ত কি না? তুমি একদিন বলেছিলে, উপযুক্ত হয়ে আমাকে বিয়ে করবে। কবে উপযুক্ত হবে? ততদিনে যে আমি বুড়ী হয়ে যাব, সেকথাও কি কখনও ভেবেছ? তুমি না ভাবলেও আমি ভেবেছি। তাই অনেক চিন্তা ভাবনা করে আব্বা-আম্মার নির্বাচিত পাত্রকে বিয়ে করতে সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আর সে কথা তোমাকে জানান উচিত মনে করে জানালাম।