আজিজ ওঁর সাথে বারান্দায় এসে একটা চেয়ারে বসে বলল, চাচি আম্মা আপনিও বসুন।
হানুফা বিবি বললেন, তুমি বস, আমি তোমার জন্য একটু চা করে নিয়ে আসি।
আজিজ বলল, বাইরে থেকে এক্ষুনি চা খেয়ে এলাম, এখন আর খাব না। হারুন আসুক, তখন না হয় একসাথে খাব। আপনি বসুন, দুএকটা কথা বলব।
হানুফা বিবি বসে বললেন, ঠিক আছে, কি বলবে বল।
আজিজ বলল, এত বড় সংসারের কাজ আপনি একা আর কতদিন করবেন? এবার হারুনের বিয়ে দিন। বৌ এলে তবু আপনি একটু আরাম পাবেন। তাছাড়া আপনাদের ঘরে কোনো মেয়ে নেই। হারুনের বিয়ে দিলে তবু একটা মেয়ে আসবে।
হানুফা বিবি বললেন, আমি তো তাই চেয়েছিলাম। সে জন্যে একটা মেয়েও দেখেছিলাম। কিন্তু হারুন সেই মেয়েকে বিয়ে করবে না।
আজিজ বলল, সেই মেয়েকে হয়তো হারুনের পছন্দ হয়নি, তাই করতে চায়নি। আপনি আরো অন্য মেয়ে দেখুন। তাদের মধ্যে কাউকে না কাউকে তার পছন্দ হবে। আর যদি বলেন, আমিও মেয়ের সন্ধান করি। সে তো অনেকদিন থেকে বিদেশ করছে। তার বিয়ের বয়সও হয়েছে।
হানুফা বিবি বললেন, তাই দেখব। তুমিও ভালো মেয়ের খোঁজ কর। তারপর আবার বললেন, হারুন তো এখনো এল না। চা করে দিই, খেয়ে আজ তুমি যাও। পরে আবার এস। বেলা হয়ে যাচ্ছে। রান্না চাপাতে হবে।
আজিজ চা খেয়ে ফিরে আসার সময় পথে হারুনকে দেখতে পেয়ে সব কথা বলল।
হারুন মুচকি হেসে বলল, ঠিক আছে, আবার কবে আসবি?
আজিজ বলল, দুচার দিন যাক, তারপর আসব।
তাই আসিস বলে হারুন সালাম বিনিময় করে ঘরের দিকে চলল।
দুচারদিন পর আজিজ হারুনদের বাসায় এল। আজও আসবার আগে হারুনের সাথে পরামর্শ করে এসেছে। তার মাকে সালাম দিয়ে জিজ্ঞেস করল, কেমন আছেন চাচি আম্মা?
হানুফা বিবি সালামের উত্তর দিয়ে বললেন, আমার আর থাকা না থাকা একই কথা। সংসারে খেটে খেটে জীবনটা শেষ হয়ে গেল।
আজিজ বলল, সেই জন্যেই হারুনের তাড়াতাড়ি বিয়ে দেয়া উচিত।
হানুফা বিবি বললেন, সে কথা তোমরা ভাবলেও হারুন ভাবেনি। তা না হলে কত মেয়ে তাকে দেখালাম, একটাকেও তার পছন্দ হল না কেন?
আজিজ হারুনের চালাকির কথা বুঝতে পেরে মনে মনে হাসল। মুখে রাগ দেখিয়ে বলল, তাই নাকি? দেখা হোক একবার, যা বলার বলব। কয়েক সেকেণ্ড চুপ করে থেকে বলল, আমি একটা মেয়ে দেখেছি। আপনারা হারুনকে সাথে নিয়ে দেখুন। আমার মনে হয়, হারুনের অপছন্দ হবে না।
আজ হারুনের বাবা ঘরে ছিলেন। হারুনের বিয়ের কথা শুনে বেরিয়ে এসে স্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে বললেন, আজিজ ঠিক কথা বলেছে। তোমরা সবাই গিয়ে ঐ মেয়ে দেখে এস। পছন্দ হলে এবারেই হারুনের বিয়ে দিয়ে দেব। আবার কবে আসবে না আসবে তার কোনো ঠিক আছে? তারপর আজিজকে বললেন, আমরা কয়েকদিনের মধ্যে মেয়ে দেখতে যাব। যাবার আগে হারুনকে দিয়ে তোমাকে খবর দেব। তুমি মেয়ের বাবাকে সে কথা বলে রেখ।
আজিজ বলল, ঠিক আছে চাচা তাই হবে। তারপর সালাম বিনিময় করে বেরিয়ে এল। আজও হারুন আজিজের জন্য পথে অপেক্ষা করছিল। তাকে ফিরে আসতে দেখে বলল, কি খবর বল।
আজিজ তার বাবার কথা বলে বিদায় নিয়ে রোকেয়াদের বাড়িতে গেল।
শাহেদ আলী বাড়িতেই ছিলেন। সালাম বিনিময় করে বললেন, কি খবর বড় কুটুম? হঠাৎ কি মনে করে? শশুর বাড়ি যেতে যেতে পথ ভুলে বোনের বাড়ি ঢুকে পড়েছ মনে হচ্ছে?
আজিজ হেসে উঠে বলল, দুলাভাই কি যে বলেন? পথ ভুল হবে কেন? আসলে আপনাদের বাড়িতেই এসেছি।
শাহেদ আলী বললেন, তাহলে আগমনের হেতুটা বলে ফেল।
আজিজ হারুনের পরিচয় দিয়ে রোকেয়ার জন্য বিয়ের প্রস্তাব দিল।
শাহেদ আলী রাজি হলেন না। বললেন, কয়েক মাস পরে ওর ম্যাট্রিক পরীক্ষা, এখন বিয়ে হলে তা আর হবে না। তারা যদি অপেক্ষা করতে পারে। তাহলে তখন দেখা যাবে।
আজিজ বলল, কিন্তু তারা তো এতদিন অপেক্ষা করবেন না। তাছাড়া ছেলে চার মাসের ছুটিতে এসেছে। আবার কবে ফিরবে তার কোনো ঠিক নেই। এবারেই ছেলের বিয়ে দিতে চান।
শাহেদ আলী বললেন, তাহলে তাদেরকে অন্য মেয়ে দেখতে বল।
আজিজ দুলাভাইকে রাজি করাতে না পেরে নাস্তা খেয়ে রোকেয়ার নানা নানিকে গিয়ে ধরল।
আজিজ রোকেয়ার নানির চাচাতো ভাইয়ের ছেলে। ওরা তার কথা ঠেলতে পারলেন না। বললেন, তুমি এখন যাও। আমরা জামাইকে ডেকে রাজি করাবার চেষ্টা করব।
জয়নুদ্দিন একদিন জামাইকে ডেকে পাঠিয়ে আজিজের প্রস্তাবের কথা বলে বললেন, আমার মনে হয়, ওখানে রোকেয়ার বিয়ে হলে সুখী হবে।
সেখানে রোকেয়ার নানি রহিমন বিবি ছিলেন। তিনিও জামাইকে বললেন, এই কাজ করলে রোকেয়া সুখী হবে।
শাহেদ আলী শ্বশুর-শাশুড়ির কথা ফেলতে পারলেন না। বললেন, আপনারা যখন এই কাজ ভালো হবে বলছেন তখন আর আমি অমত করব না।
কয়েকদিন পর আজিজ এসে ওঁদের মুখে শাহেদ আলী রাজি হয়েছে শুনে একটা দিন ঠিক করে উভয় বাড়িতে খবর দিয়ে মেয়ে দেখার কথা জানাল।
আজ রোকেয়াকে দেখার জন্য তোক আসবে। তাই রোকেয়ার মা-বাবা মেহমানদের খানাপিনা তৈরির কাজে ব্যস্ত।
বেলা দশটার সময় হারুন ও তার দুভাই, তার মা, তিনজন চাচি, দুটো চাচাতো বোন, দূর সম্পর্কের এক ভাবি, হারুনের নানা, মোট এগার জন রোকেয়াকে দেখতে এল। হারুন প্রথমে আসতে রাজি ছিল না। শেষে আজিজ যখন তাকে বলল, তুই না গেলে তোর মা সন্দেহ করবে তখন না এসে পারেনি।