রোকেয়া এদের সামনে এই কথা বলায় আরো বেশি লজ্জা চুপ করে রইল।
তাই দেখে নাসিম বলল, ঠিক আছে আমরা থাকলে যদি আপনার অসুবিধে হয়, তা হলে বাইরে চলে যাচ্ছি। তারপর ভাবিকে ও লাকিকে ইশারা করে বেরিয়ে আসতে বলে চলে গেল। সেই সাথে ভাবি ও লাকি চলে গেল।
তারা চলে যাওয়ার পরও কেউ কোনো কথা বলতে পারল না। হারুনও লাজুক। ধরনের ছেলে। এক সময় সঞ্চয় করে বলল, রোকেয়া, আমি তোমাকে ভালবাসি। চুপ। করে থেক না, কিছু বল।
হারুনের কথা শুনে রোকেয়া যেমন ভীষণ লজ্জা পেল তেমনি মনের মধ্যে একটা ভয় মিশ্রিত আনন্দের শিহরণ অনুভব করল। কিন্তু কোনো কথা বলতে পারল না।
হারুন আবার বলল, আমি তোমাকে বিয়ে করতে চাই। সে জন্যে তোমার মা বাবাকে জানাবার আগে তোমার মতামত জানতে এসেছি। বিয়ের আগে ছেলে-মেয়ে উভয়ে উভয়ের মতামত জেনে নেয়া ভালো। তাহলে বিয়ের পর কোনো অসন্তোষ দেখা দেয় না। আর ইসলামেও বিয়ের ব্যাপারে ছেলেমেয়ের মত প্রকাশ করার অধিকার রয়েছে।
রোকেয়া খুব লজ্জাশীলা মেয়ে। হারুনের কথার উত্তরে কি বলবে ভেবে ঠিক করতে না পেরে চুপ করেই রইল।
রোকেয়া কোনো কথা বলছে না দেখে হারুন ভাবল, সে হয়তো তাকে পছন্দ করে না। একটা দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেলে বলল, আমাকে যদি তোমার পছন্দ না হয়, তাহলে কথা দিচ্ছি, আর কোনোদিন তোমাকে বিরক্ত করব না। এবার কিছু বল।
কিছুক্ষণ চুপ করে থেকেও যখন রোকেয়ার কাছ থেকে উত্তর পেল না তখন হারুন বলল, আমার ভাবা কি অন্যায় হবে, তুমি আমাকে পছন্দ কর না? কথা শেষ করে সে চলে যাওয়ার জন্য দাঁড়িয়ে পড়ল।
রোকেয়ার এতক্ষণে লজ্জা কেটে গেছে। বলল, দেখুন, এ ব্যাপারে আব্বা আম্মা যা করবেন তাই হবে। আপনি আমার উপর মনে কষ্ট নেবেন না। তারপর নাসিমকে আসতে দেখে তাকে পাশ কাটিয়ে ছুটে বেরিয়ে এসে পাশের রুমে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দিল।
তাই দেখে নাসিম হারুনকে বলল, রোকেয়া খুব লাজুক মেয়ে। তোর সঙ্গে কথা বলেছে?
হারুন বলল, তোর কথাই ঠিক। ও খুব লাজুক। কথা বলতেই চায় না। তবে শেষমেষ যতটুকু বলেছে তাতেই যা জানার জানা হয়ে গেছে।
নাসিম ও হারুন বিদায় নিয়ে চলে যাওয়ার পর লাকি ও তার ভাবি রোকেয়া যে রুমে ছিল, তার দরজায় ধাক্কা দিয়ে বলল, রোকেয়া দরজা খোল।
রোকেয়া দরজা খুলে লাকির পিঠে কয়েকটা কিল মেরে বলল, তুই সবকিছু জেনেও আমাকে আগে বলিসনি কেন? আব্বা-আম্মা শুনলে আস্ত রাখবে না। আর পাড়া-পড়শী শুনলে কত বদনাম করবে ভেবে দেখেছিস?
লাকি কিছু বলার আগে তার ভাবি বলল, ওর কোনো দোষ নেই। আমি জানাতে নিষেধ করেছিলাম। তোমার কোনো ভয় নেই। আমরা একথা কাউকে জানাব না।
রোকেয়া যখন তাদের কাছ থেকে ফিরে আসছিল তখন লাকি তার সাথে বাইরে এসে জিজ্ঞেস করল, কিরে, হারুন ভাই কি কথা বললেন?
রোকেয়া কপট রাগ দেখিয়ে বলল, বলব না। তুই ওঁর কথা আগে বললি না কেন?
লাকি বলল, বললে তো তুই আসতিস না। তাছাড়া ভাবিতো বলল, সে নিষেধ করেছিল। তোর মনের মানুষের সঙ্গে দেখা করলাম, আর তুই আমাকে দোষ দিচ্ছিস? এই জন্যেই লোকে বলে, যার জন্যে চুরি করি, সেই বলে চোর।
রোকেয়া হেসে উঠে বলল, তোকে আর দোষ দেব না। তারপর হারুন ও সে যেসব কথা বলেছিল তা বলল।
লাকি বলল, আমার মন বলছে, হারুন ভাইয়ের সাথেই তোর বিয়ে হবে।
তোর মন বললে তো হবে না, আল্লাহ পাকের মর্জি থাকলে হবে।
তাতো বটেই। দোয়া করি আল্লাহ পাকের যেন মর্জি হয়।
রোকেয়া হেসে উঠে বলল, আমার তো মনে হচ্ছে আমার চেয়ে তুই বিয়ে করার জন্য লালায়িত হয়ে পড়েছিস।
এ কথা কেন তোর মনে হল?
আমার বিয়ের জন্য তোর আগ্রহ দেখে বোঝা যাচ্ছে, বিয়ের পর আমার দেবরের জন্য তোকেও যেন তাড়াতাড়ি নিয়ে যাই।
লাকি হেসে উঠে বলল, তা তুই বলতে পারিস। তবে আমি সে কথা ভেবে বলিনি। হারুন ভাই তোকে ভালবাসেন। আর তুইও তাকে পছন্দ করিস। তাই তোদেরকে সুখী দেখার জন্য আগ্রহ দেখিয়েছি।
রোকেয়া আর কিছু না বলে বিদায় নিয়ে চলে গেল।
৩-৪. হারুন দেশে এসেছে
০৩.
হারুন চার মাসের ছুটি নিয়ে দেশে এসেছে। এখন তার বিয়ে করার ইচ্ছা ছিল না। কিন্তু বন্ধু আজিজের বিয়েতে গিয়ে রোকেয়াকে দেখে সিদ্ধান্ত নিল তাকে বিয়ে করবে। সে কথা একদিন আজিজকে বলে বলল, আম্মাকে তোর ভাগনীর কথা সরাসরি বললে রাজি হবে না। তাই ভেবেছি, তোকে দিয়ে–
তাকে থামিয়ে দিয়ে আজিজ বলল, কেন?
হারুন বলল, আম্মা একটা মেয়ে দেখে রেখেছে। আমি তাকে দেখেছি। সে মেয়েকে আমার একদম পছন্দ হয়নি। এখন তোকে যা বলছি শোন, তারপর যা বলার বলে বলল, কিরে যা বললাম পারবি না?
আজিজ হেসে উঠে বলল, নিশ্চয় পারব, এটা আর তেমন কঠিন কাজ নাকি?
কয়েকদিন পর একদিন আজিজ মুনসীরহাটে হারুনদের বাড়িতে এল। হারুনের সঙ্গে আগেই কথা হয়েছে, আজ এই সময়ে সে ঘরে থাকবে না। আজিজ হারুনের সাথে অনেকবার তাদের বাড়িতে এসেছে। সবাই তাকে চিনে। সে সরাসরি বাড়ির ভিতরে ঢুকে হারুনের নাম ধরে ডাকল।
হারুনের মা হনুফা বিবি উঠোন ঝাট দিচ্ছিলেন। আজিজকে দেখে বললেন, সে তো ঘরে নেই বাবা, কিছুক্ষণ আগে কোথায় যেন গেল। তারপর ঝাড়টা উঠোনের একপাশে রেখে বললেন, এস বাবা বস। ও হয়তো এক্ষুনি এসে পড়বে।