রোকেয়া বলল, তোর কথা আমি বিশ্বাস করি না। আমিও কিছু কিছু ভালো উপন্যাস পড়ি। কই সে সবেতো খারাপ কিছু পাইনি। প্রেম করে বিয়ে করলে সংসার সুখেরই হয়। আমার মামা মামীকে পছন্দ করে বিয়ে করেছে। মামা-মামীর মধ্যে আমি কোনোদিন ঝগড়া তো দূরের কথা, একটু কথা কাটাকাটি হতেও দেখিনি।
লাকি বলল, তোর বুদ্ধি একদম কাঁচা। কি করে যে তুই পরীক্ষায় রেজাল্ট ভালো করিস ভেবে পায়নি। আরে বোকা, পছন্দ করা আর প্রেম করা এক জিনিস হল বুঝি?
রোকেয়া বলল, বাদ দে ওসব কথা। তোর সঙ্গে তর্কে পারব না।
লাকি বলল, তুই ঐ ছেলেটার নাম জানিস?
হারুন।
তুই তো দেখছি তার নাম ও জানিস। সে তোর নাম জানল না, এ কেমন কথা। তার নাম জানলি কি করে?
ঐ দিন আনোয়ারা নামে সেখানকার একটা মেয়ে বলেছিল।
আমার মনে হয় হারুন তোকে পছন্দ করেছে।
তাতে আমার কি?
তাকে তোর পছন্দ হয়নি? ছেলেটা কিন্তু দেখতে খুব সুন্দর।
পছন্দ হলেই বা কি? সে কথা কি–বাবাকে বলতে পারব? তোর মনে ধরেছে মনে হচ্ছে। পছন্দ হলে বল, আমি তোর ভাবিকে বলে বিয়ের ব্যবস্থা করার চেষ্টা করি।
হঠাৎ তোর মনে এরকম হল কেন?
হারুন দেখতে সুন্দর বললি, তাতেই মনে হল।
সুন্দরকে সুন্দর বললে মনে ধরা হয় বুঝি? সুন্দরকে তো সবাই পছন্দ করে। তাছাড়া আমার পছন্দ হলে তো আর হবে না। তারও আমাকে পছন্দ হতে হবে। সে তো তোকে। পছন্দ করেছে।
এটা তোর মনগড়া কথা। অতক্ষণ ধরে যা কিছু কথা বলেছে, তা তোর সঙ্গে। আমার সঙ্গে একটাও বলেনি।
তা বলেছে, তবে তোকে উপলক্ষ্য করে। তাই তো আমার সঙ্গে কথা বলার সময় বারবার তোর দিকে চেয়ে চেয়ে দেখেছে।
রোকেয়া বলল, কি জানি হয়তো তোর কথা ঠিক। ততক্ষণে তারা রোকেয়াদের বাড়ির কাছে চলে এসেছে।
লাকি বলল, আজ চলি। ভেবেচিন্তে বলিস, চেষ্টা করব।
আমার ভাববারও কিছু নেই আর বলারও কিছু নেই। তুই বরং নিজের কথা ভাবিস, এই কথা বলে রোকেয়া বাড়ির দিকে চলে গেল।
লাকির বড় আপার বিয়ে হয়েছে মুনসীরহাটে। তার দেবর নাসিমের সঙ্গে হারুনের খুব জানাশোনা। সে যখন জানতে পারল হারুন রোকেয়াকে পছন্দ করে তখন তাকে বলল, রোকেয়া আমার ভাবির বোনের বান্ধবী। তুমি যদি চাও, তাহলে আমি তোমাদের দেখা সাক্ষাতের ব্যবস্থা করে দিতে পারি।
হারুন শুনে খুশি হয়ে বলল, তাই কর।
একদিন নাসিম হারুনকে সঙ্গে করে লাকিদের বাড়ি বেড়াতে এল। সে সময় নাসিমের ভাবি বাপের বাড়িতে ছিল। নাস্তা খাওয়ার সময় নাসিম ভাবিকে হারুনের কথা বলল।
শুনে নাসিমের ভাবি অর্থাৎ লাকির বড় বোন জাহেদা বলল, তাই নাকি?
নাসিম বলল, হ্যাঁ ভাবি তাই। তুমি আমার বন্ধুর এটুকু উপকার কর।
জাহেদা হেসে উঠে বলল, রোকেয়া লাকির বান্ধবী। ছোট বোনের বান্ধবীকে তো আমি কিছু বলতে পারব না। কয়েক সেকেণ্ড চিন্তা করে বলল, ঠিক আছে, আমার ভাবিকে দিয়ে ম্যানেজ করছি।
নামিস বলল, যা করলে ভালো হয় তাই কর।
ওদের নাস্তা খাওয়া হয়ে যাওয়ার পর জাহেদা তার ভাবিকে নাসিম ও হারুনের আসার উদ্দেশের কথা বলে ব্যবস্থা করতে বলল।
জাহেদার ভাবি মুচকি হেসে বলল, এটা আর তেমন কঠিন কাজ নাকি? রোকেয়ার সঙ্গে আমার খুব ভাব। ডাকলেই ছুটে আসবে। আমি এক্ষুণি সে ব্যবস্থা করছি। এই কথা বলে সে লাকির কাছে গিয়ে বলল, তুমি রোকেয়াকে ডেকে নিয়ে এস। হারুন ভাই এসেছে, তাকে বলবে না।
লাকি হারুনকে দেখেই ব্যাপারটা অনুমান করেছিল। এখন ভাবির কথা শুনে অনুমানটা দৃঢ় হল। বলল, তুমি যাও, আমি একটু পরে ওকে ডেকে নিয়ে আসছি।
ভাবি বলল, তাড়াতাড়ি ডেকে নিয়ে এস। ওরা বেশিক্ষণ থাকবে না। কথা শেষ কর চলে গেল।
লাকি রোকেয়াদের বাড়িতে গিয়ে তাকে বলল, তোকে ভাবি ডাকছে।
লাকির ভাবির সঙ্গে রোকেয়ার খুব ভাব। লাকির কাছে যখন যায় তখন তার সঙ্গে প্রায়ই গল্প করে। সেও মাঝে মাঝে গল্প করার জন্য রোকেয়াকে ডেকে পাঠায়। লাকির কথা শুনে বলল, এখন যাব না। বিকেলে যাব। মনটা ভালো নেই। আয় বস, দুজনে গল্প করি।
লাকি বলল, তোর মনে আবার কি হল?
রোকেয়া বলল, কি যে হয়েছে, ছাইপাস কিছুই বুঝতে পারছি না। তুই দাঁড়িয়ে রয়েছিস কেন বস না, দুটো কথা বলি।
এখন বসতে পারব না। ভাবি তোকে এক্ষুণি আমার সঙ্গে যেতে বলেছে।
চল তাহলে, তোদের বাড়িতেই সবাই মিলে গল্প করা যাবে।
লাকি বলল, হ্যাঁ তাই চল।
রোকেয়া লাকির সঙ্গে তাদের বাড়িতে এলে লাকি বলল, তুই ভাবির ঘরে যা, আমি একটু পরে আসছি।
রোকেয়া ভাবির ঘরে এসে বলল, কি খবর ভাবি, হঠাৎ জরুরী তলব কেন?
ভাবি বলল, বস। এমনি গল্প করার জন্য ডাকলাম।
তারা গল্প করতে লাগল।
নাসিম ও হারুন অন্য ঘরে কথা বলছিল। লাকি বাইরে থেকে নাসিমকে আস্তে আস্তে কিছু কথা বলে ভাবির ঘরে এসে তাদের সঙ্গে যোগ দিল।
লাকি আসার দুতিন মিনিট পর দুজন লোককে ঘরে ঢুকতে দেখে রোকেয়া সালাম দেওয়ার সময় নাসিমের সঙ্গে হারুনকে দেখে লজ্জা পেয়ে মাথা নিচু করে নিল। সে নাসিমকে চিনে। লাকিই একদিন তার বড় বোনের দেবরের সাথে আলাপ করিয়ে দিয়েছিল।
নাসিম সালামের উত্তর দিয়ে দুজন দুটো চেয়ারে বসল। তারপর নাসিম রোকেয়াকে উদ্দেশ্য করে বলল, আপনি লেখাপড়া করছেন, অত লজ্জা পাচ্ছেন কেন? আমার বন্ধু হারুন আপনার সঙ্গে দেখা করতে এসেছে।