নানার বাড়ি এসে শুনল, পাশের গ্রামের দূর সম্পর্কের এক মামার বিয়ে। তারা দাওয়াত দিয়ে গেছে। রোকেয়ার নানা-নানি আগের দিন চলে গেছেন। পরের দিন রোকেয়ার মামী রোকেয়াকে বললেন, তোর মামা কাজের ঝামেলায় যেতে পারবে না। তুই জুলেখা, মনোয়ারা ও মানিককে নিয়ে যা। মনোয়ারাও মানিক রোকেয়ার মামাতো ভাই বোন। মনোয়ারা রোকেয়ারএক বছরের ছোট। মানিক তার চেয়ে তিন বছরের ছোট। সবাই যাওয়ার জন্য তৈরি হল। কিন্তু মানিক যেতে রাজি হল না।
রোকেয়া তাকে বলল, আমরা তিনটে মেয়ে একা একা যাব কেমন করে? তুই যাবি না কেন?
রোকেয়ার মামী শুনে ছেলেকে রাগারাগি করে বললেন, রোকেয়া ঠিক কথা বলেছে। তুই সাথে না থাকলে ওরা যাবে কেমন করে? কোনো পুরুষ ছেলে সাথে না থাকলে মেয়েদের বাইরে বেরোনো উচিত না।
মানিক বলল, কেন? ছেলেরা যেতে পারলে মেয়েরা পারবে না কেন?
মনোয়ারা বলল, তোকে আর যেতে হবে না, আমরা যেতে পারব। তারপর তারা তিনজন রওয়ানা দিল।
কিছুদূর যাওয়ার পর জুলেখা পিছন ফিরে মানিককে আসতে দেখে মনোয়ারাকে বলল, দেখ আপা, মানিক ভাই আসছে।
মনোয়ারা সেদিকে তাকাতে মানিকের চোখে চোখ পড়ে গেল।
মানিক দাঁড়িয়ে পড়ে অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে নিল।
মনোয়ারা বলল, দাঁড়িয়ে আর কি করবি; চলে আয়। বিয়েবাড়ি বেড়ানোর লোভ সামলাতে যে পারিব না, তা আমি আগেই জানতাম।
মানিক এগিয়ে এসে বলল, আমি আসতাম না, ভাবলাম, পথে যদি কোনো দুষ্টু ছেলে তোমাদেরকে উত্যক্ত করে অথবা কাউকে হাইজ্যাক করে নিয়ে যায়, তাই এলাম।
রোকেয়া বলল, থাক অত আর জ্যাঠামী করতে হবে না চল যাই।
বিয়ে বাড়িতে এসে রোকেয়ার সাথে একটি মেয়ের বন্ধুত্ব হয়ে গেল। মেয়েটির নাম আনোয়ারা। যে কদিন রোকেয়া সেখানে রইল, সে কদিন সব সময় আনোয়ারা তার সাথে থেকেছে। একদিন আনোয়ারা রোকেয়াকে বলল, তোমাকে আমার এত ভালো লেগেছে যে, কাছ ছাড়া করতেই মন চাচ্ছে না। তাই ভেবেছি তোমাকে ভাবি বানাব।
রোকেয়া হেসে উঠে বলল, মানুষ ইচ্ছা করলেই কি সবকিছু করতে পারে? আল্লাহ পাকের মর্জি না হলে কিছুই হয় না।
আনোয়ারা বলল, তা অবশ্য ঠিক। তবু মানুষকে চেষ্টা করতে হয়। আজ তোমাকে আমার ভাইয়াকে দেখাব। দেখলে নিশ্চয়ই তোমার পছন্দ হবে।
রোকেয়া আবার হেসে উঠেবলল, আর আমাকে যদি তোমার ভাইয়ার পছন্দ না হয়?
বারে, তুমি কি অপছন্দ করার মত মেয়ে নাকি?
সকলের পছন্দ তো এক রকম নয়। তাছাড়া সব থেকে বড় কথা হল ভাগ্য। আল্লাহ পাক যার যেখানে ভাগ্য লিখেছেন সেখানে হবে।
সেতো নিশ্চয়, কিন্তু আল্লাহ তো ভাগ্যের উপর নির্ভর করে চুপচাপ বসে থাকতে বলেন নি।
তা বলেন নি। তুমি এখন এসব কথা বাদ দাও।
কেন বাদ দেব শুনি?
কারণ আমার ইচ্ছা, অন্তত বি.এ. পাশ করব।
সেটা তো খুব ভালো কথা। ভাইয়া এম. এ. পাশ করে কলেজে প্রফেসারী করছে। বিয়ের পর ভাইয়া তোমাকে নিজের কলেজের ছাত্রী করে নেবে। এক সঙ্গে কলেজে খুব মজা করে যাবে আসবে।
রোকেয়া তার পিঠে একটা আদরের কিল মেরে বলল, তুমি তো দেখছি সবদিক দিয়ে পেকে গেছ।
আনোয়ারা বলল, তুমিওতো কম পাকনি।
কি করে?
কেউ নিজে না পাকলে অন্যের পাকামী ধরতে পারে না।
তাই নাকি?
হ্যাঁ তাই। নিজের মনকে জিজ্ঞেস করে দেখ।
এমন সময় মনোয়ারা এসে বলল, তোমরা এখানে গল্প করছ, আর আমি তোমাদেরকে খুঁজে খুঁজে হয়রান। চল খাবে চল।
পরের দিন আনোয়ারা রোকেয়ার কাছে এলে তার মুখটা ভার দেখে রোকেয়া জিজ্ঞেস করল, তোমার মন খারাপ কেন?
আনোয়ারা বলল, গত রাতে আম্মাকে তোমার কথা বলে ভাবি বানাবার কথা বলেছিলাম। আম্মা শুনে বলল, তোর ভাইয়া নিজেই একটা মেয়ে পছন্দ করেছিল। তোর আব্বা মেয়ের বাবার সঙ্গে বিয়ের ব্যাপারে কথার্তাও ঠিক করে ফেলেছে। জান রোকেয়া, কথাটা শোনার পর আমার মন এত খারাপ হয়ে গেল যে, তা ভাষায় প্রকাশ করতে পারছি না।
রোকেয়া বলল, এতে মন খারাপের কি আছে? বিয়ে সাদির ব্যাপারে মানুষের কোনো হাত নেই। নসীবে যার যেখানে লেখা থাকবে সেখানে হবে। তুমি মন খারাপ করো না। নসীবে নেই বলে তোমার মনের বাসনা পূরণ হল না। তাই বলে আমাদের বন্ধুত্ব নষ্ট হবে কেন? আমরা আমাদের বন্ধুত্ব আমরণ রাখার চেষ্টা করব।
আনোয়ারা বলল, তুমি ঠিক কথা বলেছ। তারপর ঠিকানা লিখে তার হাতে দিয়ে বলল, তোমারটাও লিখে দাও। চিঠির মাধ্যমে আমরা আমাদের বন্ধুত্ব আজীবন টিকিয়ে রাখব।
যার বিয়ে হচ্ছে তার নাম আজিজ। বিয়ের পরের দিন বাড়ির সব ছেলেমেয়েরা একটা ঘরে ভিডিও দেখছিল। রোকেয়াও সেখানে ছিল। এক সময় তার কানে এল, কে যেন বলছে, আজিজ, ঐ মেয়েটি কে রে? আজিজ বলল, সম্পর্কে আমার ভাগনী।
রোকেয়ার পাশে তার মামাত বোন মনোয়ারা বসেছিল। সে কথাটা শুনতে পেয়ে তাকে বলল, আপা, তোমার কথা ঐ ছেলেটা জিজ্ঞেস করছে।
যেদিক থেকে কথাটা রোকেয়ার কানে এসেছে, সেদিক একবার চেয়ে নিয়ে মনোয়ারাকে জিজ্ঞেস করল, ঐ ছেলেটা কে জানিস?
মনোয়ারা বলল, না আপা জানি না।
তাদের পাশে আনোয়ারাও ছিল। সেও ছেলেটার কথা শুনেছে। ওদের কথা শুনে বলল, ওতো আজিজ মামার বন্ধু হারুন।
রোকেয়া কাউকে কিছু না বলে উঠে চলে আসবার সময় হারুনকে আর একবার দেখতে গিয়ে তার চোখে চোখ পড়ে গেল। লজ্জা পেয়ে রোকেয়া মাথা নিচু করে দ্রুত ঘর থেকে বেরিয়ে গেল।