সহসা বৃদ্ধের সঙ্গে কে যেন বিশ্বাসঘাতকতা করিতে আসিতেছে। বাণবিদ্ধ পাখীর মত কর্কশ করুণ স্বরে ডাকিলেন–”বউ…”
বিস্ফারিতনেত্রা যশোবতী দুর্দশা দেখিলেন, তাঁহার পদদ্বয় ঘর্মাক্ত হইল, তাঁহার কর্তব্যবুদ্ধি ফিরিয়া আসিল। তিনি ছুটিতে গিয়া দেখিলেন তাঁহার হাত এখনও চণ্ডাল ধরিয়া আছে। তিনি শিশুর মত আপনকার পা মৃত্তিকায় ঠুকিতে লাগিলেন, গগন শঙ্কিত হইল। আর যে, হঠাৎ তিনি চণ্ডালের হস্তে কামড় দিতেই বৈজুনাথ হাত ছাড়াইয়া লইল। এত জোরে তিনি কামড়াইয়াছিলেন যে বৈজুনাথের হাতের চুল ছিঁড়িয়া মুখে আসিয়াছিল। থুথু করিতে করিতে তিনি তড়িৎবেগে ভেড়ীপথেই ছুটিতে লাগিলেন, কখন আপনার হস্ত দংশন করিলেন, কখনও আবার দেখা গেল আপনার গণ্ডে চপেটাঘাত করিতে করিতে ছুটিতেছেন।
গুপ্তঘাতকের হস্তে বৃদ্ধ সীতারাম আহত। জল আলোড়নে, বৃদ্ধদেহ চক্ৰ দিয়া উঠিল, মৃত্তিকা তৈজস ছত্রাকার হইল। এতৰ্দশনে যশোবতী জলে নামিয়া পড়িলেন। একটি বৃষকাষ্ঠ ধরিলেন, ক্রমাগত “কৰ্ত্তা কৰ্ত্তা” চীৎকারে হাত ছাড়িয়া গেল! বান…সহসা তাঁহাকে লইয়া গেল। কোনক্রমে একটি প্রতিমার কাঠামো ধরিলেন। পরমুহূর্তে বানের তোড়ে প্রতিমার কাঠামো তাঁহাকে লইয়া খাড়া হইয়া দাঁড়াইল।
একবার বৃদ্ধকে দেখিলেন।
অল্পবয়সী ষড়ৈশ্বৰ্য্যশালিনী পতিপ্রাণা “কৰ্ত্তা-কৰ্ত্তা” বলিয়া প্রতিমার কাঠামো ছাড়িয়া জলে লাফ দিলেন। ক্রন্দন করিতে করিতে সন্তরণের বৃথা চেষ্টা করিলেন, দু’একবার ‘কা” ডাক শোনা গেল।
ইহার পর শুধুমাত্র রক্তিম জলোচ্ছ্বাস! কেননা চাঁদ এখন লাল। একটি মাত্র চোখ, হেমলকে প্রতিবিম্বিত চক্ষুসদৃশ, তাঁহার দিকেই, মিলন অভিলাষিণী নববধুর দিকে চাহিয়াছিল, যে চক্ষু কাঠের, কারণ নৌকাগাত্রে অঙ্কিত, তাহা সিন্দুর অঙ্কিত এবং ক্রমাগত জলোচ্ছাসে তাহা সিক্ত, অশ্রুপাতক্ষম, ফলে কোথাও এখনও মায়া রহিয়া গেল।