মান্নান মাওলানা বললেন, ও আতাহারের ছোডকালের দোস্ত।
দোস্ত অইছে কী অইছে! মালাউন তো!
হ হেইডা আমিও একবার আতাহাররে কইছিলাম। আতাহার আমারে কইলো, মালাউনরা বহুত সৎ হয়। টেকাপয়সা চুরি করবো না।
নিয়াতউল্লাহ বলল, হ হেইডা ঠিক। আমি নানানভাবে নিখিলারে পরীক্ষা কইরা দেখছি, ও চোর না। ক্যাশ টেকার কারবার তো, ওহেনে যে বইবো ও ওই চুরি করবো। নিখিলা করে না।
আতাহার অরে এর লেইগাঐ রাখছে। আর ঢাকায় যে বহে আলমগীর সেও ভাল পোলা। আতাহারের দোস্তরা চোর না। তয় সাবধান, এই হগল কথা য্যান আতাহারের কানে না যায়। ও যুদি হোনে তোমরা তার দোস্তগো লইয়া এই হগল চিন্তা করতাছো তয় কইলাম ব্যাবসা থিকা বাইর কইরা দিবো। আমার কথাও হোনববা না।
মনির সর্দার বলল, আরে না না, আমরা এত বলদ না। আতাহার বাজানে বিরাট রাগী পোলা। হেইডা আমরা জানি। দেহেন না এর লেইগা ব্যাবসা বাণিজ্য টেকা পয়সার হিসাবে সে যা কয় ওইডাঐ আমরা মাইন্না লই। হুজুর টেকা পয়সা বাস থিকা তো আমরা পাইঐ, জমিন বেচা কিনা কইরাও ভালঐ পাই। টেকার আকাল আমগো নাই। আমরা অহন থাকতে চাই আপনের লগে। গ্রামের মাতবরি মুদরি করলাম, নামনোম অইলো এই আর কী! আমগো দুই দোস্তের কোনও মাইয়া নাই। আমার দুই পোলা, নিয়ামতের এক পোলা। তিনড়াঐ বড় হইছে। এই বচ্ছরের মইদ্যে তিন পোলারে মালোএশিয়ায় পাডাইয়া দিমু। যা কইরা খা গা।
নিয়ামত বলল, হ, ওই একখান কামঐ বাকি আছে। তারবাদে আমরা হুজুর ঝাড়া হাত পাও। আল্লাহ খোদার নাম লমু, শরিয়ত মতে এই দিককার বিচার সালিশ করুম। খান সাবরা, আপেল মেম্বাররা তারা তো আমগো এইমিহি তেমুন আসা যাওয়া করে না। তারা বড় মানুষ, বড় ফেমিলি, মন্ত্রী মিনিস্টার এমপি চেরম্যান হয়, তারা কি আর আমগো কের (কেয়ার) করবো। এর লেইগা হুজুর আমরা দুইজন আছি আপনের লগে। একদিকে আপনের পোলার ব্যাবসার পাটনার আরেকদিকে আপনের মুরিদ।
মনির সর্দার আর নিয়ামতউল্লাহর ওপর খুবই খুশি মান্নান মাওলানা। ভাল দুইখান টেন্ডল পাওয়া গেছে। মোতালেবও পয়লা পয়লা এইরকম ট্যান্ডল আছিল, অহন হেয়। ইট্টু মাতবর হইয়া উটছে। মান্নান মাওলানারে তেমুন পাত্তা দিতে চায় না। হেয়ও গোপনে গোপনে জাগাসম্পত্তি কিনাবেচার কাম ধরছে। আর এনামুল সাবের মা খালাগো জাগা সম্পিত্তির দেখভাল করে। মান্নান মাওলানারে এনামুল সাবে দেয় আঠরোশো টাকা বেতন, মোতালেবরে দেয় বারোশো। মোতালেবের লগে চিকন একখান শত্রুতা দেলরাগো একসময় আছিল, অহন আর নাই। অহন মোতালেবের লগে তাগো বিরাট খাতির। এই তো পশশুদিন দেলরারে লইয়া ঢাকায় গেল। দেলরার চোখে ছানি পড়ছে। এত পাওয়ারের চশমা পরার পরও চোখে দেখতাছিল না। হোননের লগে লগে এনামুল গাড়ি পাঠাইছে। মোতালেব দেলরারে লইয়া ঢাকায় চইলা গেছে। চোখের ছানি কাটাইয়া, চক্ষু একদম ভাল কইরা, চাচতো বইনরা লইয়া বাইত্তে আইবো। দশ পোনরো দিনের আগে ফিরতে পারব না। মোতালেব মোতালেবের বউর লগে রাবির খুব খাতির অহন। ময়নার লগেও খাতির। মতলা আর বাদলা দবির গাছির চায়ের দোকান ভাড়া লইয়া ভালই চালাইতাছে। দুই তিনশো টাকা রোজগার করে দিনে।
মান্নান মাওলানার কথায় এনামুল সাবে মসজিদ করল, দেলরাও চাইছে মসজিদ হোক, মাওলানা সাবে ইমাম হউক। তারপরও এনামুল আর দেলরার উপর গোপন একখান রাগ মান্নান মাওলানার আছে। তাগো দুইজনের জন্য নূরজাহানরে সে বিয়া করতে পারে নাই। রব্বানের লগে নূরজাহানের বিয়া হইতাছে শুইনা ভিতরে ভিতরে জ্বইলা গেছে। আমিন মুনশি বিয়া পড়াইছে, তার উপরেও রাগ। তয় মুনশিসাব কেমন একটু পাগল পাগল মানুষ, তার লগে মান্নান মাওলানা কথা বলে না। সেও পাত্তা দেয় না মান্নান মাওলানারে। যে যার মতন আছে।
তয় রব্বান নূরজাহানরে হালাইয়া পলাইছে শুইনা মান্নান মাওলানা বহুত খুশি হইছিল। একবার ভাবছিল ল্যাংড়া বসিররে আবার খবর পাঠায়, আবার লাগায় ঘটকালির কামে। ওই বইচ্ছা, আবার ইট্টু চেষ্টা কইরা দেখ, ছেমড়িরে আমার বউ বানাইয়া দিতে পারছনি?
এনামুল আর দেলরার কথা ভাইবা আগায় নাই। যুদি তারা আবার বিরক্ত হয়! মসজিদের ইমামতি থেকে ছাড়ায়া দেয়। মোতালেবও তো এখন আর তাঁর পক্ষে নাই। অসুবিধা হইতে পারে।
ভিতরে ভিতরে জ্বলুনিটা মান্নান মাওলানার রইয়াই গেছে। নূরজাহানের উপরে শোধটা মনে হয় এই জীবনে আর লইতে পারলাম না।
সেই শোধ লওনের একটা পথ বাইর হইল মতলিবের লগে নূরজাহানের দ্বিতীয় বিয়ার পর। গত একটা-দেড়টা মাস ধইরা ভিতরে ভিতরে মান্নান মাওলানা ভাবছেন, কোন পথ বাইর করন যায়? কোন পথ বাইর কইরা ছেমড়ি যেমুন গেরামের মাইনষের সামনে আমার মুখে ছ্যাপ দিছিল, ওইরকম কিছু একটা কইরা অরে আর অর বাপ মারে একটা ছাচা, বড় একখান ছাচা দেওন যায়!
পথটা তারপর মনে মনে বাইর কইরা ফালাইলেন মান্নান মাওলানা। মোতালেব দেলরা গ্রামে নাই, শক্তিমান দুইখান টেন্ডল আছে লগে মনির সর্দার আর নিয়ামতউল্লাহ, আতাহার তো আছেঐ। আতাহারের লগেও ইট্টু কথা কইয়া লমুনে।
সেই কথা কাইল রাইতে পোলার লগে মান্নান মাওলানা বলছেন।
মসজিদ থেকে এশার নামাজ পইড়া বাড়িতে গিয়া ভাত খাইছেন, আতাহার তার কিছুক্ষণ পর বাড়িতে আসল। বউ লইয়া ভাতপানি খাইছে, মান্নান মাওলানা হাফিজদ্দিরে বললেন, আতাহাররে ডাক দে।