যেসব কথা আমার বলতে হচ্ছে এসব তোর মা বলতেন।
তুমিও বলতে পার। কোনও অসুবিধা নেই।
অবশ্য নীলুকে দিয়েও বলাতে পারতাম।
কোনও দরকার নেই বাবা। আমি তেমন পুতুপুতু স্বভাবের মেয়ে নই, তুমিও পুরনো দিনের বাবা নও। সবকিছু আমাকে সহজ করে বলো। আমারও যদি তোমাকে কিছু বলার থাকে বলব।
গুড, ভেরি গুড। ছেলেটি সম্পর্কে আমি পরে বলি তার আগে তোর কাছ থেকে দুএকটি কথা আমার জানা দরকার।
শারমিন হাসল। আমি জানি তুমি কী জানতে চাইবে। প্রশ্ন করবার দরকার নেই, উত্তরটা আমিই দিয়ে দিচ্ছি। আমার নিজের কাউকে পছন্দ নেই, কোনও ভাল লাগা, এফেয়ার টেফেয়ার কিছু নেই। তুমি নিজেও বেশ ভাল করেই জানো তোমার পছন্দেই আমি বিয়ে করব। তোমার কথার বাইরে আমি যাব না।
মেয়ের কথা শুনে এতটাই মুগ্ধ হলেন জাহিদ সাহেব, হাত বাড়িয়ে মেয়ের গালটা একটু ছুঁয়ে দিলেন। শিশুকে আদর করার গলায় বললেন, ওরে আমার মেয়েটা! আমি খুব খুশি হয়েছি মা। খুব খুশি হয়েছি।
এ সময় কোক স্প্রাইট এল, দুজনে প্রায় একসঙ্গে গ্লাসে চুমুক দিল।
জাহিদ সাহেব বললেন, এবার তাহলে ছেলেটার কথা বলি।
শারমিন কথা বলল না।
জাহিদ সাহেব বললেন, তার আগে তোর পারমিশন নিয়ে একটা সিগারেট খেতে পারি?
শারমিন চোখ পাকিয়ে বাবার দিকে তাকাল। না।
আমি তো রেগুলার খাচ্ছি না। একদিন খেলে কী হবে?
না। বদ অভ্যোস একটু একটু করেই হয়। আজ একটা খেলে কাল দুটো খেতে ইচ্ছা করবে। এভাবে অভ্যাস হয়ে যাবে।
আরে না। তুই পছন্দ করিস না এমন কাজ আমি কখনই করব না।
মানুষ অভ্যাসের দাস। অভ্যাস বদলানো খুব কঠিন। যা ছেড়েছ তা আর ধরা ঠিক হবে। না। আবার যদি ধরো, দেখা গেল। আগের চেয়ে বেশি খেতে শুরু করেছ। আমার ভয়ে বাইরে গিয়ে খাচ্ছ। বাথরুমে গিয়ে লুকিয়ে লুকিয়ে খাচ্ছ। মোবারককে দিয়ে একটা দুটো করে আনোচ্ছ।
না তেমন আর হবে না।
হতে পারে।
আচ্ছা ঠিক আছে। খেলাম না।
সবচে বড় কথা সিগ্রেটের গন্ধ আমার ভাল লাগে না।
অথচ ওয়েস্টার্ন কান্ট্রিগুলোতে মেয়েরা আজকাল বেশি সিগ্রেট খাচ্ছে।
খাক গিয়ে।
দুজনেই একটু থামল।
শারামিনের তখন ভেতরে ভেতরে বেশ একটা অস্থিরতা চলছে। কথাটা পরিষ্কার করে বলছে না কেন বাবা! কেমন সমন্ধ এনেছেন খান সাহেব। ছেলেটা করে কী? পড়াশুনা কতদূর, দেখতে কেমন, ফ্যামিলি কেমন, এসব জানার জন্য শারমিন যে উদ্গ্ৰীব হয়েছে। বাবা কি তা বুঝতে পারছে না! এরকম একটি কথা বেশিক্ষণ না বলে সে থাকছেই বা কেমন করে!
বাবা অবশ্য শারমিনের মতো অস্থির ধরনের মানুষ নয়। ধীর-স্থির শান্ত স্বভাবের। যে কোনও কাজ দশবার ভেবেচিন্তে করে।
তা করুক গে। কিন্তু এখন শারমিনকে এমন সাসপেনসের মধ্যে রেখেছে কেন? বলছে না কেন কথাগুলো!
মেয়ের মনের অবস্থাটা যেন এসময় বুঝতে পারলেন জাহিদ সাহেব। হাসিমুখে বললেন, তোর খুব অস্থির লাগছে, না?
শারমিন হাসল। তোমার কি মনে হয়? লাগাবার কথা না?
হ্যাঁ। তোর জায়গায় আমি হলে আমারও লাগতো।
তাহলে বলে ফেল।
ছেলেটির নাম গালিব। গালিব আহসান চৌধুরী। গুলশানে নিজেদের বাড়ি। ব্যাঙ্গালোর থেকে এমবিএ করেছে। বাবার শিপিং বিজনেস। অয়েলট্যাঙ্কার কারগো, বরিশাল পটুয়াখালী যাওয়ার দোতলা বিশাল বিশাল লঞ্চ আছে চার পাঁচটা। তিনভাই দুবোন। দুবোনেরই বিয়ে হয়ে গেছে। গালিব সবার ছোট। বাবা এখন বিজনেস দেখে না। দুই বোনজামাই, বড় দুইভাই এবং গালিব এই পাঁচজনেই দেখাশোনা করে। মতিঝিলে অফিস আছে। গালিব সেই অফিসে বসে।
হাইট কেমন? বেঁটে ফেটে না তো?
জাহিদ সাহেব হাসলেন। আমি জানতাম এই প্রশ্নটাই তুই প্রথমে করবি। খান সাহেবকে আমিও প্রথমেই বলেছিলাম ছেলের হাইট কেমন? কালো ফর্সা কিংবা শ্যামলা গায়ের রং নিয়ে আমার কোনও কথা নেই, কথা ওই হাইট নিয়ে। বেঁটে মানুষ দুই চোখে দেখতে পারে না আমার মেয়ে।
খান আংকেল কী বললেন?
আমার কথা শুনে হাসলেন। আমি জানি আজকালকার ছেলেমেয়েরা বেঁটে পছন্দ করে না। গালিবের হাইট খুব ভাল। পাঁচ ফিট দশ।
শুনে স্বস্থির একটা শ্বাস ফেলল শারমিন। কথা বলল না।
জাহিদ সাহেব বললেন, হাইট ঠিক আছে না?
খুব যে ঠিক আছে তা নয়। আজকালকার ছেলেরা ছয় দুই তিন এমনকি চার সোয়া চারও হচ্ছে। অনেক লম্বা মেয়েও দেখা যায় এখন।
তা যায়। কিন্তু তোর সঙ্গে মানানসই তো হতে হবে। অমিতাভ বচ্চন আর জয়া ভাদুড়ির মতো হলে তো হবে না।
শারমিন চোখ পাকিয়ে বাবার দিকে তাকাল। এই, আমি কি জয়া ভাদুড়ির মতো অত বেঁটে?
জাহিদ সাহেব হাসলেন। আরে না। তোর হাইট যথেষ্ট ভাল। বাঙালি মেয়ে হিসেবে পাঁচ পাঁচ ভাল হাইট।
জাহিদ সাহেব স্প্রাইটে চুমুক দিলেন।
শারমিন অস্থির গলায় বলল, কিন্তু খাবার দিচ্ছে না কেন? এত দেরি করছে কেন?
এক্ষুণি দেব মা। কোক খা।
আমার কোক তো শেষ।
কখন শেষ করলি?
শারমিন হাসল। কথার তালে ছিলাম। নিজেও বুঝতে পারিনি।
আর একটা দিতে বলব?
না। কোকে খুব ফ্যাট।
কিন্তু আমি জানি তুই খুব পছন্দ করিস।
তা করি।
তাহলে খা আর একটা। একদিন দুটো কোক খেলে কিছু হবে না। কাল না খেলেই হবে।
তোমার কি ধারণা আমি রোজ কোক খাই?
ধারণা না, তুই যে খাস তা আমি জানি।
কেমন করে জানো?
যাকে দিয়ে আনাস সেই বলেছে।
মোবারক। দাঁড়াও, বাড়ি গিয়ে আজ ওকে একটা গুতা দেব।