তৃণা বলল, কিন্তু ওর নাম আপনি জানলেন কী করে?
আরে, এই মেয়েটা তো বেশ ট্যাটনা টাইপের দেখছি! উকিলদের মতো প্রশ্ন করে!
তবু হাসিমুখে উত্তরটা আমি দিলাম। এটা কি কি খুব কঠিন কোনও কাজ বলুন! আপনাদের এক বন্ধুর কাছ থেকেই ট্যাক্টয়ালি জেনে নিয়েছি।
কোন বন্ধু?
তার নাম আমি জানি না। সরি। তবে সে ছেলে। যাহোক দু-তিনদিন ধরে ইউনিভার্সিটিতে ঘুরে ঘুরে অনেককেই দেখলাম। কিন্তু শারমিনকেই আমার পছন্দ হলো। ভাবলাম আজ তার সঙ্গে কথা বলব আর দেখুন আজই সে এল না।
ঝিনুক বলল, কিন্তু মডেলিং ও করবে বলে আমার মনে হয় না।
কেন বলুন তো?
ও এসব পছন্দ করে না।
কিন্তু আজকাল অনেকেই মডেলিং করছে! আমি প্রথমে ভেবেছিলাম নতুন মুখ চাই বা এই জাতীয় একটা এড দেব পেপারে। শুনে আমার একজন এক্সকিউটিভ বলল, এই কাজও করবেন না। স্যার। তাহলে শয়ে শয়ে মেয়ে এসে হাজির হবে। হাজার হাজার চিঠি এবং ছবি আসবে। আরেক বাদারেসান্স।
মাঝে মাঝে তীক্ষ্ণচোখে তৃণা আমাকে দেখছিল। বুঝতে পারি আমার সবকথা সে বিশ্বাস করছে না। তার মধ্যে একটা সন্দেহ কাজ করছে।
করুক। আমার কি! আমার যা জানার ছিল তাতো আমি জেনেই ফেলেছি। শারমিন আজ ইউনিভার্সিটিতে আসেনি।
কিন্তু কিছু একটা বলে তো তৃণা এবং ঝিনুকের কাছ থেকে বিদায় নিতে হয়। কী বলব?
ঝিনুকের দিকে তাকিয়ে বললাম, আপনারা আমাকে একটু হেল্প করবেন। শারমিনদের ফোন নাম্বার কিংবা বাড়ির এডড্রেসটা দেবেন। আমি তাহলে সরাসরি যোগাযোগ করি।
ঝিনুক কথা বলবার আগেই তৃণা বলল, শারমিনকে না বলে সেটা আমাদের দেয়া ঠিক হবে না। তারচে আপনি বরং আপনার একটা কার্ড দিন আমরা শারমিনকে দিয়ে দেব এবং ব্যাপারটা বুঝিয়ে বলব। সে যদি ইন্টারেস্টেড হয় তাহলে আপনাকে ফোন করবে। আর যদি ফোন না করে, ধরে নিতে হবে সে ইন্টারেস্টেড না।
তৃণার কথাবার্তা শুনে ভেতরে ভেতরে খুবই বিরক্ত আমি। বিক্রমপুরের ভাষায় মনে মনে মোটামুটি ভদ্রগোছের দু-তিনটা গাল দিয়ে দিলাম। তার চেহারা দেখলেই বুঝা যায়। তুই যে বহুত ট্যাটনা। বিয়া হইলে জামাইর হালুয়া তুই টাইট কইরা ছাড়বি। যেই বেডা তরে বিয়া করব ওর জিন্দেগি ছেড়াভেড়া। তর লাহান ছেমড়ি শারমিনের বান্ধবী হইলি কেমতে!
কিন্তু মুখটা খুবই হাসি হাসি আমার। বিনয়ের অবতার হয়ে বললাম, সরি। আমার সঙ্গে আজ কার্ড নেই। মানিব্যাগে কার্ড রাখি। দু-তিনদিন আগে শেষ হয়েছে নতুন করে রাখতে মনে নেই। একটা কাজ করুন, আমার সেল নাম্বারটা, সরি মোবাইল নাম্বারটা রাখুন। ওটা শারমিনকে দিয়ে দেবেন।
তৃণা নয়, আমার নাম্বার লিখে রাখল ঝিনুক।
টিএসসি থেকে বেরিয়ে প্রথমে আমি একটা হাপ ছাড়লাম তারপর সিগ্রেট ধরালাম। ইস, বানিয়ে বানিয়ে এত কথা বলা যায়! তবে বলেছি। খুব স্মার্টাল। হঠাৎ করেই এড কোম্পানি মডেলিং এসব মাথায় আসার ফলে বেশ জমে গিয়েছিল গল্পটা। একটুও নার্ভাস না হয়ে বেশ চালিয়ে গেলাম। ঝিনুক কিংবা তৃণার বোঝার কোনও উপায়ই ছিল না। যে পুরো ব্যাপারটাই ফলস, বানোয়াট।
কিন্তু শারমিন আজ ইউনিভার্সিটিতে আসেনি কেন? কী হয়েছে তারা? সত্যি সত্যি জ্বর হয়নি তো!
শারমিনের দুটো ছবি আছে আমার কাছে। বি টু সাইজের। একটা আকাশি রংয়ের সালোয়ার কামিজ পরা আরেকটা ফিরোজা রংয়ের শাড়ি পরা। সালোয়ার কামিজ পরা ছবিটা অসাধারণ। সেটা আমি আমার পাসপোর্টের ভেতর, সুটকেসে রেখে দিয়েছি। অন্য ছবিটা গলার কাছ থেকে সুন্দর করে কেটে শুধু ফেসটা আমেরিকান ভিসার জন্য যে সাইজের ছবি লাগে সেই সাইজ করে নিয়েছি। এই সাইজের ছবি মানিব্যাগের গোপন পকেটে রাখতে সুবিধা।
মানিব্যাগ থেকে ছবিটা আমি বের করলাম। অসাধারণ মিষ্টি চেহারার শারমিন গজদন্ত বের করে হাসছে। আর তোকানোটা এমন, যেন আমার দিকেই তাকিয়ে আছে।
সেই ছবির দিকে তাকিয়ে আমি মনে মনে বললাম, শারমিন, তোমার কী হয়েছে? ইউনিভার্সিটিতে আসনি কেন? তুমি কি জন না আমি তোমার জন্য অপেক্ষা করব!
তখন দ্বিতীয় পাগলা মোটা খেলে গোল আমার মনে। আচ্ছা শারমিনকে ফোন করলে কেমন হয়! ঝিনুক তৃণার সঙ্গে চালাকি করে শারমিনের ফোন নাম্বার চেয়েছিলাম, আসলে ফোন নাম্বার এডড্রেস সবই তো আছে আমার কাছে।
কিন্তু ফোন যদি অন্য কেউ ধরে?
সেটাই তো স্বাভাবিক। শারমিনই যে ফোন ধরবে তেমন তো কোনও কথা নেই।
যে ইচ্ছে ধরুক, সরাসরি শারমিনকে চাইব। পরিচয় জানতে চাইলে নামটা ঠিক বলে এডফার্মের গল্পটা চালিয়ে দেব, ঝিনুক তৃণার সঙ্গে যেমন চালিয়েছি। তারপর শারমিন ফোন ধরলে…
শারমিনকে কী বলব সেকথা আমার আর মনে আসে না। সিগ্রেট টানতে টানতে শাহবাগের দিকে হাঁটতে থাকি।
শাহবাগের কোণে পিজি হাসপাতালের মুখে দু-তিনটি ফোন ফ্যাক্সের দোকান। একটা দোকানে ঢুকে শারমিনদের বাড়িতে ফোন করি। শারমিনের ছবি, ফোন নাম্বার, অ্যাড্রেস ইত্যাদি পাওয়ার পর আজই তাকে প্ৰথম ফোন করা। আমার হিসেবটা ছিল এই রকম যে ইউনিভার্সিটিতে গিয়ে প্রথমে তাকে আমি দূর থেকে কাছ থেকে দেখব। ছবির সঙ্গে কতটা মিল তার, কতটা অমিল। তার আচার-আচরণ চলাফেরা কেমন। ফোন ধরনের ছেলেমেয়ের সঙ্গে সে মেশে। দেখে স্যাটিসফাইড হলে ফোন করব, কথা বলব। তারপর সরাসরি একদিন সামনে গিয়ে দাঁড়াব।