টিএসসিতে এসে এদিক ওদিক তাকিয়ে তাকিয়ে দেখি, না শারমিন কোথাও নেই। তার বন্ধুবান্ধবও কাউকে দেখি না। তাহলে কি ভেতরে বসে চা সিঙারা খাচ্ছে ওরা!
কেন্টিনে ঢুকি। ভেতরে বেশ আগ্রহ কিন্তু মুখে খুবই নির্বিকার ধরনের একটা ভাব নিয়ে এ টেবিল ও টেবিলের দিকে তাকাই। না, শারমিন কোথাও নেই। দক্ষিণ দিককার কর্ণারের টেবিলে দেখি শারমিনের সেই দুই বান্ধবী বসে চা খাচ্ছে আর কী কথায় যেন খিলখিল করে হাসছে।
আমার আবার মনে হয়, শারমিন কি আজ সত্যি সত্যি ইউনিভার্সিটিতে আসেনি! কেন আসবে না? সে কি জানে না। আমি তার জন্য অপেক্ষা করব! এখনও কি বোঝেনি। একজন মানুষ নিঃশব্দে তাকে ফলো করছে! দূর থেকে তার প্রতিটি আচরণ খেয়াল করছে! মেয়েদের তো শুনেছি। একটা তৃতীয় নয়ন থাকে। সেই নয়ন দিয়ে অন্যে দেখে না। এমন অনেক কিছুই দেখতে পায় তারা! তাহলে আমাকে কি দেখতে পায়নি শারমিন!
আচ্ছা শারমিনের বান্ধবী দুজনকে কি জিজ্ঞেস করব শারমিন কোথায়? সে কি আজ ইউনিভার্সিটিতে আসেনি!
এটা কি ঠিক হবে?
শারামিনের কথা জিজ্ঞেস করলে ওরাও তো আমাকে অনেক প্রশ্ন করবে। আপনি কে? কোন শারমিনের কথা জানতে চাইছেন! সে আপনার কে হয়! দুএকদিন ওদের সঙ্গে থাকার পরও শারমিনকে আমি ফলো করেছি। শারমিনের মতো। ওরাও তো মেয়ে। ওদেরও তো তৃতীয় নয়ন থাকার কথা। ওরাও যদি খেয়াল করে থাকে আমাকে! যদি ওই নিয়ে কোনও প্রশ্ন করে!
আমার স্বভাবের মধ্যে দুটো ব্যাপারই সমানভাবে কাজ করে, না ভেবেচিন্তে হুট করে কোনও কোনও কাজ আমি করে ফেলতে পারি। আবার দশদিক ভেবেচিন্তেও কাজ করি।
আজ অনেকদিন পর মনে হলো না। ভেবেচিন্তে দুএকটা কাজ করলে কী এমন ক্ষতি হবে! দুএকটা পাগলামোও তো জীবনে থাকা উচিত। দেখি না মেয়ে দুটোর সঙ্গে শারমিনকে নিয়ে একটু কথা বলে।
হাতের সিগ্রেট শেষ হয়ে এসেছে, সেই সিগ্রেট থেকে আরেকটা সিগ্রেট ধরালাম আমি। তারপর খুবই স্মাৰ্টভঙ্গিতে মেয়ে দুটোর টেবিলের সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম। এক্সকিউজ মি!
দুজন একসঙ্গে চোখ তুলে তাকাল।
এইসব মুহূর্তে মেয়েদের তোকানোর ভঙ্গিতে দুটো ব্যাপার কাজ করে। বেশ একটা তুচ্ছ তাচ্ছিল্যের ভাব আর বিরক্তি। যেন ইচ্ছে করে তাদেরকে কেউ ডিস্টার্ব করছে।
এই দুজনের চেহারায়ও তাই দেখা গেল। ব্যাপারটা আমি তেমন পাত্তা দিলাম না। সিগ্রেট টান দিয়ে বললাম, আপনারা তো ইংলিশে পড়েন, না?
একজন একটু লম্বা ধরনের। বেশ কাটাকাটা চেহারা। গায়ের রং শ্যামলা। চেহারায় এক ধরনের রুক্ষতাও আছে। অন্যজন ফর্সা, গোলগাল, একটু মোটা ধাঁচের।
রুক্ষ চেহারার মেয়েটি বলল, জ্বি। কেন বলুন তো?
আমি আসলে একজনকে খুঁজছি। সে আপনাদের সঙ্গে পড়ে।
অন্য মেয়েটি বলল, কী নাম?
শারমিন হক।
শারমিন নামটা শুনে দুজনেই যেন একসঙ্গে চমকাল। এ ওর মুখের দিকে তাকাল। তারপর রুক্ষ মেয়েটি বলল, আপনি জানলেন কী করে যে আমাদের সঙ্গে পড়ে?
ওর সঙ্গে আপনাদেরকে আমি দেখেছি।
ফর্সা মেয়েটি তখন মুখের সামনে দুতিনবার হাত নাড়ল। অর্থাৎ সিগ্রেটের ধোয়া সরাল। সঙ্গে সঙ্গে হাতের সিগ্রেট ফেলে পা দিয়ে পিষে দিলাম আমি। আইয়্যাম রিয়েলি সরি! সিগ্রেট খাওয়া ঠিক হচ্ছিল না।
আমার আচরণে ফর্সা মেয়েটি যেন একটু মুগ্ধ হলো। হাসিমুখে বলল, হ্যাঁ শারমিন আমাদের সঙ্গে পড়ে। কিন্তু ও তো আজ ইউনিভার্সিটিতে আসেনি।
এইটুকুই জানার দরকার ছিল আমার। বললাম, তাই নাকি! কেন আসেনি জানেন? মানে আপনাদের কারও সঙ্গে কি কোনও যোগাযোগ হয়েছে। মানে শারমিনের শরীর খারাপ করেনি তো! এখন তো চারদিকে খুব ভাইরাল ফিবার টিবার হচ্ছে।
রুক্ষ মেয়েটি বলল, না কোনও যোগাযোগ হয়নি। কিন্তু আপনি এত খোঁজ খবর নিচ্ছেন কেন। সে যে আপনার কোনও আত্মীয় নয় বুঝতে পারছি। আত্মীয় হলে খোঁজ খবর নিতে ওদের বাড়িতে চলে যেতেন। কিংবা ফোন করতেন তা না করে ইউনিভার্সিটিতে এসেছেন খোঁজ নিতে। আমাদেরকে জিজ্ঞেস করছেন। আপনার আসলে ব্যাপারটা কী?
এই ধরনের পরিস্থিতিতে আমি কখনও পড়িনি। কী বলব বুঝতে পারছি না। হুট করে পাগলামো করতে এসে তো ধরা খেয়ে গেলাম!
ফর্সা মেয়েটি স্নিগ্ধচোখে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। তার দিকে তাকিয়ে মুহূর্ত কয়েক কিছু ভাবলাম আমি। তারপর হাসিমুখে বললাম, আসলে ব্যাপার তেমন কিছুই না। আপনারা বিশ্বাস করবেন কি না আমি জানি না, তবু আমি মিথ্যে বলছি না, মিথ্যে বলার স্বভাব আমার নেই, আমার ছোটখাটো একটা এডফার্ম আছে। একটি কসমেটিকস কোম্পানির এডের কাজ পেয়েছি। আমি। সেই কোম্পানির প্রধান শর্ত হলো তারা কোনও তথাকথিত পরিচিত ফেস কিংবা পপুলার মডেল নেবে না…
আমার কথা শেষ হওয়ার আগেই ফর্সা মেয়েটি বলল, আপনি বসুন না। বসে কথা বলুন।
থ্যাংকস।
টেবিলের দুপাশে দুজন আমি বসলাম তৃতীয় পাশটায়। বাই দা বাই, আমার নাম মাহি। মাহি খান।
এতক্ষণে রুক্ষ মেয়েটিও একটু যেন স্বাভাবিক হয়েছে। ফর্সা মেয়েটিকে দেখিয়ে বলল, ওর নাম ঝিনুক আর আমি তৃণা।
দুটোই খুব সুন্দর নাম। তারপর যা বলছিলাম, যেহেতু ওরা নিউ ফেস চায় সেই কারণে আমি দু-তিনদিন ধরে ইউনিভার্সিটিতে আসছি। যদি তেমন কাউকে পছন্দ হয় তাকে অফার করব।
ঝিনুক বলল, তার মানে শারমিনকে আপনার পছন্দ হয়েছে! ও হওয়ারই কথা। শারমিন তো খুব সুন্দর।