শুনে চমকে উঠল। শারমিন। বলো কী!
হ্যাঁ। দড়ি দিয়ে বেঁধে লেকে ফেলে দেয়া হয়েছিল তাকে। যাতে নড়তে চড়তে না পারে। একবারেই ডুবে যায়।
তার মানে ভোররাতে তুমি যে দুজনকে আবছা মতন দেখেছিলে তাদের একজন আরেকজনকে এইভাবে মেরেছে?
হ্যাঁ।
পরে তুমি পুলিশকে ঘটনাটা জানাওনি?
না। কে যায়। ওসব ঝামেলায়। পুলিশকে তো নয়ই, কখনই কাউকে ঘটনাটা আমি বলিনি। আজই প্ৰথম তোকে বললাম।
কেন বললে?
জানি না। বলতে ভাল লাগল। অনেকদিন বুকের ভেতর চেপে ছিল ঘটনাটা। আজ তোকে বলে বুকটা কেমন হালকা লাগছে।
পরে কি লোকটা পরিচয় টরিচয় জানা গিয়েছিল?
তেমন কিছু জানা যায়নি। পাড়ার লোকরা নাকি শুনেছিল লোকটা পুরনো ঢাকার। একসময় মাঝারি ধরনের গুন্ডা ছিল।
গুন্ডা কথাটা শুনে শারমিন কেমন যেন স্বস্তি পেল। ও গুন্ডা ছিল! তাহলে ঠিকই আছে। গুন্ডারা তো এইভাবেই মরে।
কিন্তু তখন লোকটা প্রায় বৃদ্ধ। গুন্ডামি অনেক আগেই ছেড়ে দিয়েছিল।
তাহলে হয়তো কেউ পুরনো শত্রুতার প্ৰতিশোধ নিয়েছে।
হয়তো তাই হবে।
দুজনেরই খাওয়া শেষ। টিসু পেপারে আলতো করে ঠোঁট মুছল শারমিন। আমি কিন্তু ঘটনাটা শুনে খুব একটা অবাক হইনি বাবা।
কেন?
আমার কাছে এমন কিছু ঘটনা মনে হয়নি। এরকম ঘটনা অনেক ঘটে।
কিন্তু আমার কাছে ঘটনাটা বেশ গুরুত্বপূর্ণ। হাসপাতালে প্রায় মৃত্যুর কাছে চলে যাচ্ছে আমার স্ত্রী, তাকে শেষ দেখার জন্য ছুটছি, আর ঠিক সেই মুহূর্ত চোখের সামনে দেখছি একজন মানুষ নিঃশব্দে মেরে ফেলছে আরেকজনকে। কিন্তু আমি তা বুঝতে পারছি না।
বাবার চোখের দিকে তাকিয়ে শারমিন বলল, তোমার মনোভাবটা আমি বুঝেছি বাবা। চলো উঠি।
বিল মিটিয়ে ওরা যখন রেস্টুরেন্ট থেকে বেরুচ্ছে, তখন সেই মানুষটার কথা আবার মনে পড়ল শারমিনের। আর মাঝখান থেকে মনে পড়ল রবীন্দ্রনাথের একটা গানের লাইন। গোপনে তোমারে সখা…। কেন যে, শারমিন নিজেও তা জানে না।