শাড়ি পরে ঘুমাতে পারে না সুলতা, কিন্তু ওটা খুলে রাখতে লজ্জা লাগল ওর। কখন যে তার স্বামীদেবতা এসে উপস্থিত হবে ঠিক নেই। ব্রেসিয়ার খুলে বালিশের তলায় রেখে বেড সুইচ টিপে আলো নিভিয়ে দিল ঘরের। চোখটা বন্ধ করতেই সুবীর সেনের মুখটা স্পষ্ট হয়ে ফুটে উঠল মনের পর্দায়। চেষ্টা করেও সে ছবি মুছে ফেলতে পারল না সুলতা। মৃদু হেসে মনে মনে কয়েকবার বলল, তোমাকে ভালবাসি, সুবীর। তোমাকে আমি ভালবেসে ফেলেছি। তুমি আমার। তারপর কয়েক মিনিটের মধ্যে গভীর ঘুমে অচেতন হয়ে পড়ল সে।
অন্ধকার ঘরে বুকের উপর কার হাত পড়তেই ঘুম ভেঙে গেল সুলতার। তন্দ্রাচ্ছন্ন আড়ষ্ট কণ্ঠে কখন এলে বলে হাতটা বুকের উপর চেপে ধরে পাশ ফিরে শুলো সে। মনে হলো সুন্দর একটা ফুলের বাগানে কচি কচি ঘাসের উপর বসে আছে ও আর সুবীর! আলতো করে সুবীর ধরে আছে ওর হাত। কানের কাছে মধু ঢালা কণ্ঠে বলছে, তোমায় বড় সুন্দর লাগছে।’ রঙ ধরল পশ্চিমের মেঘে। মনে হলো ‘পেলাম, সমস্ত মন-প্রাণ ভরে পেলাম একজনকে একান্ত আপন করে।
হঠাৎ মনে হলো, দরজা খুলল কী করে সুবীর? সে তো নিজ হাতে দরজায়। খিল দিয়ে তারপর ঘুমিয়েছিল! ঘরের মধ্যে একটু দূরে ‘খুক’ করে কে যেন একটা কাশি দিল। এবার চোখ থেকে তন্দ্রার রেশটুকু কেটে গেল সুলতার। চট করে বুকের উপর চেপে ধরা হাতটা ছেড়ে দিয়ে বেড সুইচের দিকে হাত বাড়াতেই একটা টর্চের তীব্র আলো এসে পড়ল ওর মুখের উপর। কানের কাছে মোটা কর্কশ গলায় কেউ বলল, টু শব্দ করেছ কি খুন হয়ে যাবে, ম্যাডাম। চুপ করে থাকো।’
কণ্ঠতালু শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেল সুলতার, ঢোক গিলবার চেষ্টা করেও পারল না। এবার তৃতীয় ব্যক্তি ঘরের বাতিটা জ্বেলে দিল। প্রথমজন একটা রুমাল ভরে দেবার চেষ্টা করল সুলতার মুখের মধ্যে। ভয়ের প্রথম ধাক্কাটা কেটে যেতেই বিছানার উপর লাফিয়ে উঠে বসে, বাধা দেবার চেষ্টা করল সুলতা। কিন্তু একা। মেয়েমানুষ তিনজন গুপ্তার সঙ্গে পারবে কেন? মুখটা চেপে ধরল একজন। প্রাণপণে আঁচড়ে-কামড়ে আত্মরক্ষার চেষ্টা করল সুলতা। কিন্তু দ্বিতীয়জন ওর হাতদুটো বেধে ফেলল পিছমোড়া করে। এবার সহজেই নোংরা ঘামে ভেজা। রুমালটা ওর মুখের মধ্যে ভরে দিল প্রথম জন। তার উপর আরেকটা রুমাল দিয়ে মুখটা পেঁচিয়ে গিট দিয়ে দিল পিছন দিকে।
ধস্তাধস্তিতে বোতাম ছিঁড়ে ব্লাউজটা একদিকে সরে গিয়েছিল। লোলুপ দৃষ্টিতে সেদিকে চেয়ে নীচের ঠোঁটটা একবার চাটল দ্বিতীয়জন। তারপর গা থেকে খসে পড়া আচলটা দিয়ে পা দুটো শক্ত করে বেধে পাজাকোলা করে তুলে নিল সুলতাকে বুকের কাছে।
ততীয় ব্যাক্তিকে আদেশ করা হলো, আলোটা নিভিয়ে দে। রিভলভার হাতে আমার দু’পাশে চলবি দুজন।
‘ঠিক হ্যায়, ওস্তাদ!’
.
হোটেলের সামনে ফোক্সভাগেনটা ছাড়াও আরেকটা হুড খোলা টয়োটা জিপকে দাঁড়ানো দেখে একটু অবাক হলো রানা। সামনের কলাপসিবল গেটটায় তালা দেয়া। গলি দিয়ে ঢুকতে গিয়েই দেয়ালের আড়ালে সরে দাঁড়াল সে। ব্যাপার কী? আধো-অন্ধকারে দেখা গেল কয়েকজন লোক বেরিয়ে আসছে গলি দিয়ে। তাদের মধ্যে একজন কিছু একটা ভারী জিনিস বয়ে আনছে।
লোকগুলো গলির মুখ থেকে বেরোতেই সুলতার সঙ্গে চোখাচোখি হলো রানার। দপ করে আশার আলো জ্বলে উঠল ওর বড় বড় চোখ দুটোয়। হুড খোলা গাড়িটার দিকে এগোল লোকগুলো।
এক সেকেণ্ডে মনস্থির করে নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ল রানা বাম দিকের লোকটার উপর। বাঁ কান বরাবর রানার প্রচণ্ড এক ঘুসি খেয়ে বাপরে’ বলে ছিটকে পড়ল লোকটা তার পাশের জনের ওপর। টপ টপ করে কান থেকে কয়েক ফোঁটা রক্ত বেরিয়ে ফুটপাথে পড়ল।
‘শালা, হারামি!’ বলে এবার অতর্কিতে এক প্রচণ্ড লাথি মারল রানা ডান দিকের লোকটার তলপেটে। ছিটকে পড়ে গেল রিভলভারটা দূরে। কোক করে একটা চাপা শব্দ করে সে-ও বসে পড়ল মাটিতে।
ঘটনাটা এত হঠাৎ ঘটে গেল যে সামনের লোকটা ভাল করে বুঝতেও পারল না, পিছনে কী ঘটছে। ক্যয়া হুয়া, রে?’ বলে ভারী বোঝাটা নিয়ে যেই ঘুরছে সে, ওমনি ধাই করে নাকের উপর পড়ল এক বিরাশি সিক্কা।
সুলতাকে ধপাস করে ফুটপাথের উপর ফেলে দিয়ে নিজের নাকটা নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ল লোকটা। দুই-তিন টানে সুলতার হাত-পায়ের বাধন খুলে দিল রানা। এমন সময় পিছন থেকে একজন এসে চুলের মুঠি, চেপে ধরল রানার। ঠিক স্টিম ইঞ্জিনের পিস্টনের মত রানার কনুই গিয়ে পড়ল পিছনের লোকটার হুঁড়ির উপর সোলারপ্লেক্সাস-এ। সটান চিত হয়ে পড়ল লোকটা।
মাথা ঝাড়া দিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে একটানে সুলতাকে নিয়ে গলির মধ্যে ঢুকে পড়ল রানা। বলল, ‘এক দৌড়ে ওপরে চলে যাও। ঘরে ঢুকে দরজায় খিল দিয়ে দিয়ো। আমি ছাড়া আর কেউ ডাকলে বা দরজা খোলার চেষ্টা করলে চিৎকার করে লোক জড়ো করবে। যাও, দৌড় দাও। আমি আসছি।’
প্রথম যাকে আক্রমণ করা হয়েছিল সেই লোকটা সামলে নিয়ে এবার রিভলভারটা বের করল ওয়েস্টব্যাণ্ড থেকে এক টান দিয়ে। সঙ্গে সঙ্গেই গর্জে উঠল রানার ওয়ালথার। ডান হাতের কব্জিটা ভেঙে গুঁড়ো করে দিল পয়েন্ট থ্রি টু বুলেট। বাবা-গো’ বলে কাতরাতে লাগল লোকটা মাটিতে বসে পড়ে।
মাটি থেকে রিভলভারটা তুলে নিয়ে রানা হুকুম করল, ‘সোজা গাড়িতে গিয়ে ওঠো সবাই। কেউ কোনও চালাকির চেষ্টা করলেই মারা পড়বে।