জানেন এবং তা শুনে বলেছেন, এমন মেয়েকে নিজ হাতে রের মতো গুলি করে মারবেন, কিন্তু চাষার ঘরে যেতে দেবেন না।
কি ঠিক করলে তুমি?
সহ্য করবো, করুণ হয়ে আসে যুবকের মুখ।
ছি, ছি। এ কি বলছো? এ অন্যায় সহ্য করে নেবে? রীনা কি বলে?
আজ এক টুকরো চিঠি পেয়েছি। লিখেছে, আব্বাজানের ইচ্ছের বিরুদ্ধে যাওয়া। আমার পক্ষে অসম্ভব। সেটা আমাদের কারো পক্ষেই মঙ্গলকর হবে না। তুমি তো জানোই কেমন ভয়ঙ্কর একরোখা মানুষ উনি। কথার নড়চড় হয় না কখনও। আমার যা হবার তা হবেই, তুমি আমাকে ক্ষমা করো, গলাটা ভেঙে আসে যুবকের।
কলিমের দুই কাঁধ শক্ত করে ধরে প্রবল একটা ঝাঁকুনি দিলো খোঁড়া লোকটা, তারপর চোখে চোখ রেখে ধীরে অথচ দৃঢ়কণ্ঠে বললো, একটা কথা মনে রেখো কলিম,তুমি পুরুষ মানুষ। ভেঙে পড়া তোমার সাজে না। কাম্য বস্তু আদায় করে নেয়াই তোমার ধর্ম। ভদ্রভাবে না পারো, ছিনিয়ে নেবে।
উঠে গেল খোঁড়া লোকটা ক্র্যাচের ওপর ভর করে। সন্ধ্যে হয়ে এসেছে–ছায়ার মতো মিলিয়ে গেল মূর্তিটা দূরের অন্ধকারে। আর কলিমের কানের মধ্যে মগজের ভেতর কে যেন উচ্চারণ করে চললো, মনে রেখো, তুমি পুরুষ মানুষ। ভদ্রভাবে না পারো, ছিনিয়ে নেবে। ছিনিয়ে নেবে।
এক ঝটকায় উঠে দাঁড়ালো যুবক।
.
শহীদ আর কামালকে ঢুকতে দেখেই মি. সিম্পসন উঠে দাঁড়িয়ে সাদরে অভ্যর্থনা জানালেন।
এসো, এসো। তোমাদের জন্যেই অপেক্ষা করছি। বসো। কয়েকটা ব্যাপারে আলাপ করার জন্যে তোমাকে ডেকেছি শহীদ।
বলুন, কি সাহায্য করতে পারি।-বসতে বসতে বললো শহীদ, জিজ্ঞাসু নেত্রে চেয়ে রইলো মি. সিম্পসনের দিকে।
এক মিনিট চুপ করে থেকে মনে মনে কথাগুলো গুছিয়ে নিলেন মি. সিম্পসন। তারপর ডয়ার থেকে একটা ফাইল বের করে টেবিলের ওপর রেখে ফিতে খুলতে খুলতে বললেন, করাচী পুলিস জানিয়েছে, আমি যে আঙ্গুলের ছাপ এবং ছবি পাঠিয়েছিলাম সেগুলো নেসার আহমেদ নামে এক ভয়ঙ্কর দুর্ধর্ষ দস্যুর। বাড়ি ওর পাঞ্জাবে। সমস্ত পশ্চিম পাকিস্তানে বছর সাতেক হলো সে একটার পর একটা ডাকাতি এবং খুন খারাবী করে চলেছে, কিন্তু শত চেষ্টা করেও তাকে ধরা যাচ্ছে না। সুসংবদ্ধ একটা দল গঠন করে সে এখন পশ্চিম পাকিস্তানের ধনীত্রাস দস্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ ছাড়া নারীঘটিত বহু কুকীর্তির সাথেও সে জড়িত। আরও লিখেছে গোঁফ জোড়া নকল, তাছাড়া আর সবই তার চেহারার সাথে মিলছে। একটা স্পেশাল নোটে করাচী পুলিশ সুপার আমাকে লিখেছেন, সাবধান, যে কাজে হাত দিয়েছে সেটা অত্যন্ত ভয়ঙ্কর।
বেশ। এতে বোঝা গেল নেসার আহমেদের দস্যু দল এখন ঢাকার বুকে তাদের আস্তানা গেড়েছে।
হ্যাঁ। আরও বোঝা গেল নর্তকী জেবা ফারাহের হত্যাকারী নেসার আহমেদই। কেবল তাই নয় সেদিনকার সেই বন্দুকের দোকান লুট এবং জুয়েলারীর দোকানে ডাকাতিও ওরই দ্বারা সম্পন্ন হয়েছে।
খোঁড়া লোকটা এবং তার সাথে একটা জন্তু তাহলে নেসারেরই দলের লোক?
উঁহু। গোলমালটা এখানেই, জুওলজিস্টকে দিয়ে পরীক্ষা করিয়ে দেখিয়েছি জন্তুটা একটা গরিলা। আফ্রিকার এই ভয়ঙ্কর জন্তু পোষ মানে না কখনও। কিন্তু এ একটা অদ্ভুত ব্যতিক্রম! যাক গে, সে ব্যাপার নিয়ে জুওলজিস্টরা মাথা ঘামাক গিয়ে। আমি মনে করেছিলাম খোঁড়া লোকটা নেসারের অনুচর, কারণ জেবার গলায় নেসারের আঙ্গুলের ছাপ পাওয়া গেলেও সে ঘরে গরিলার পায়ের ছাপও রয়েছে। কিন্তু পরে বুঝতে পারলাম এরা সম্পূর্ণ পরস্পর বিরোধী দুটো দল। সেদিন জুয়েলারীতে ডাকাতি করে এক রতি সোনাও নেসার নিয়ে যেতে পারেনি। কুয়াশা, নামে সেই অদ্ভুত ধূর্ত এবং কৌশলী খোঁড়া লোকটা ছিনিয়ে নিয়েছে সব কিছু।
বুঝলাম, দুটো দল আছে–কিন্তু কোন পথে এগোবেন ঠিক করেছেন কিছু?
আমি কোনও রাস্তাই পাচ্ছি না শহীদ। সেজন্যেই তোমাকে ডেকেছি। তোমার কাছ থেকে কিছু শুনতে চাই। তুমি কি ভাবলে এ কয়দিন?
আস্তানা বের করে ফেলেছি।
কি বললে?
হ্যাঁ। প্রচুর অস্ত্রশস্ত্রে সুসজ্জিত দুর্গের মতো করে ফেলেছে সে তার আস্তানাকে।
এক্ষুণি চলো। দরকার মনে করলে আমরা মিলিটারী রেজিমেন্টের সাহায্য গ্রহণ করবো।
ধীরে, মি. সিম্পসন ধীরে। তাড়াহুড়োর কি আছে? রেজিমেন্ট নিয়ে গেলে ওখানে কাউকে পাবেন না। গুপ্ত পথে সবাই সরে পড়বে। ওদের ধরবার একটা চমৎকার প্ল্যান : ঠিক করেছি। কিন্তু তার আগে
কথা শেষ হবার আগেই ঝড়ের বেগে ঘরের ভেতর ঢুকলো একজন লোক। প্রৌঢ় ভদ্রলোকের মাথার চুল কাঁচাপাকা, দামী বিলিতি কাটের স্যুট পরনে। ঢুকেই বললো, মাফ করবেন, মি.সিম্পসন। অনুমতির অপেক্ষা না করেই অনধিকার প্রবেশ করলাম।
সিম্পসন চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে বললেন, আরে মি. চৌধুরী যে! হঠাৎ? ব্যাপার কি? বসুন।
এইমাত্র আমি শহীদ খানের বাড়ি থেকে আসছি। ওখানে জানতে পেলাম উনি আপনার অফিসে আছেন। ইনিই কি..
জ্বী, হ্যাঁ। আমারই নাম শহীদ খান।
একটা বিপদে পড়ে আপনার ওখানে গিয়েছিলাম, মি. শহীদ। আমার নাম আনিস চৌধুরী। আমি
ব্যাস। আর পরিচয় দরকার হবে না। এখন বলুন তো এমন হন্তদন্ত হয়ে আমাকে খুঁজে বেড়াচ্ছেন কেন?
দেখুন, কাল রাতে একটা ঘটনা ঘটে যাওয়ায় আমি অত্যন্ত চঞ্চল হয়ে উঠেছি। ব্যাপারটা খুলে বলতে চাই আপনাদের, কিন্তু